ইসরাত জাহান লামিয়া (২০)। বরগুনার আমতলী উপজেলার সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ আমতলীর মো. বাহাদুর আকনের মেয়ে। ওই তরুণী মানিকঝুড়ি দাখিল মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ছোটবেলায় বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়। মায়ের অন্য কোথাও বিয়ে হওয়ার পর সৎ মায়ের সংসারে অবহেলায় অনাদরে শৈশব থেকেই লাগামহীন জীবনযাপন করতেন তরণী। তাই মাধ্যমিক শিক্ষা জীবনের গণ্ডি পার হওয়ার আগেই ১৩ বছর বয়সে পার্শ্ববর্তী গ্রাম টিয়াখালীতে প্রথম বিবাহ হয়। কিন্তু পাত্র পছন্দ না হওয়ায় স্বামীর সঙ্গে দাম্পত্য জীবনেও বিভিন্ন ধরনের কলহে সম্পর্কটা খুব একটা ভালো বনিবনা ছিল না।
আরও জানা যায়, এর মধ্যে স্থানীয় এক আবাসিক হোটেল থেকে ওই তরুণীকে দুই যুবকের সঙ্গে পাওয়া যায়। এ ঘটনা নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিশ হলেও পরবর্তীতে মামলা পর্যন্ত আগায়। এ ঘটনায় ওই দুই যুবক জেলও খাটেন, মামলাটি এখনো চলমান। প্রথম স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর বরিশালে নিজের পছন্দে চাকরিজীবী ছেলেকে দ্বিতীয় বিবাহ করেন।
সেই স্বামীর সঙ্গে শুরুর দিকে সম্পর্ক ভালো ছিল না। বর্তমানে তাদের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের কিছুটা উন্নতি হওয়া শুরু করে। এরই মধ্যে আবার ভিডিও ভাইরালের কবলে পড়ে ওই তরুণী।
সোমবার (২২ এপ্রিল) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মোজাম্মেল হোসেন রেজা স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১০ এপ্রিল তালতলী উপজেলা চেয়ারম্যান রেজবুল কবির পচাকোরালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আ. রাজ্জাক, নিশান বাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান বাচ্চু ও তালতলী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মিনাজুল আবেদিন মিঠু বরগুনা পুলিশ সুপার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে লিখিত অভিযোগ করে উপজেলা আ. লীগের জনৈক নেতা কর্তৃক অর্থের বিনিময়ে জনৈক তরুণীকে ব্যবহার করে তাদের অন্তরঙ্গ ভিডিও গোপনে ধারণ করে। তাদের হোয়াটসঅ্যাপে মেসেঞ্জারে ভিডিও পাঠিয়ে ব্ল্যাকমেইল করছে। বিষয়টি অনুসন্ধানের জন্য জেলা গোয়েন্দা শাখার ইনচার্জকে নিয়োজিত করা হয়।
আরও জানা যায়, জেলা গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তারা অনুসন্ধানকালীন প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই তরুণী এবং সহযোগীকে আটক করে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার বিষয় তারা স্বীকার করেন। তাদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে গোপনে ধারণকৃত অশ্লীল ভিডিও সম্বলিত পেনড্রাইভ উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে ভুক্তভোগী কামরুজ্জামান বাচ্চুর অভিযোগের ভিত্তিতে তালতলী থানায় পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা হয়। মামলা হওয়ার পর আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনা স্বীকার করেন ও বিজ্ঞ আদালত ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। এক্ষেত্রে অভিযোগকারীর কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া শুরু করে প্রাথমিক অনুসন্ধান, জিজ্ঞাসাবাদ, মামলা রুজু আসামি গ্রেপ্তার, আলামত উদ্ধার, আসামিদের বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপন করাসহ সব প্রক্রিয়ায় যথাযথ আইনানুগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
মন্তব্য করুন