বোরোর বীজতলা তৈরি থেকে জমি প্রস্তুত, চারা রোপণ ও পরিচর্যা শেষে এবার সময় এসেছে সোনালি ধান ঘরে তোলার। তবে দেশজুড়ে চলমান তাপপ্রবাহের কারণে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় দেখা দিয়েছে ধান কাটা শ্রমিক সংকট। এতে সময়মতো ধান ঘরে তুলতে না পারলে লোকসান গুনতে হবে চাষিদের।। ফলে শ্রমিক সংকটে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এ মৌসুমে উপজেলায় ৮ হাজার ৫৭১ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর ধানের ফলন ভালো হয়েছে। এরই মধ্যে কৃষকরা ধান ঘরে তুলতে শুরু করেছে। আগামী সপ্তাহে পুরোদমে শুরু হবে ধান কাটা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সপ্তাহ দু-একের মধ্যেই ধান কাটা শেষ হবে।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন বোরো মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, কাঁচাপাকা ধানে ভরে আছে মাঠ। কোথাও কোথাও কৃষকরা ধান কাটতে ও ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে তীব্র গরম পড়ায় শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। কোনো শ্রমিক পুরো সপ্তাহ কাজ করছে না। এতে পাকাধান ঘরে তুলতে পারছেন না অনেক কৃষক। চড়া দামেও পর্যাপ্ত শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে সঠিক সময়ে জমি থেকে ধান সংগ্রহ করতে না পারলে লোকসানের ঝুঁকি রয়েছে বলে জানান কৃষকরা।
উপজেলার মালাপাড়া ইউনিয়নের চণ্ডিপুর এলাকার কৃষক আক্তার হোসেন বলেন, অন্যান্য বছর ইরিধান কাটার সময় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা অনেক চৌড়া (শ্রমিক) পাওয়া যেত। এ বছর তীব্র গরম পড়ার কারণে বাইরে থেকে আসা শ্রমিক সংখ্যা কম। এদিকে আমরা পাকাধান সময়মতো জমি থেকে সংগ্রহ করতে না পারলে আর এরই মধ্যে ঝড়বৃষ্টি শুরু হলে আমাদের লোকসান হয়ে যাবে।
শিদলাই ইউনিয়নের মধ্য শিদলাই এলাকার কৃষক কামরুল ইসলাম বলেন, আমার ১৯ শতক জমির পাকাধান ঘরে তুলতে পারছি না। প্রচণ্ড গরমের কারণে ৮০০-৯০০ টাকা মজুরি দিয়েও চাহিদা অনুযায়ী শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। আজকে সকালেও জেলার ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় গিয়ে শ্রমিক খুঁজে আসছি, চাহিদা অনুযায়ী পাওয়া যাচ্ছে না।
চান্দলা ইউনিয়নের বড়ধুশিয়া এলাকার কৃষক মো. রুবেল বলেন, মাঠে ধান পাকতে শুরু করেছে। কিন্তু ধান কাটা ও মাড়াই ঝাড়াইয়ের জন্য প্রয়োজনমতো শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। তীব্র গরমের কারণে অনেকেই কাজে আসতে চাইছে না। সময়মতো ধান না কাটতে পারলে আমরা লোকসানের মুখে পড়ব।
দুলালপুর ইউনিয়নের গোপালনগর এলাকার কৃষক বাহারুল ইসলাম বলেন, এত তীব্র গরম পড়ছে যে রোদে গেলেই শরীর জ্বলে। এমন বৈরী আবহাওয়ায় ধান কাটা শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে মাঠের ধানও পেকে গেছে। সময়মতো ধান বাড়ি তুলতে না পারলে লোকসান হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মাসুদ রানা কালবেলাকে বলেন, এ উপজেলায় এ বছর ৮ হাজার ৫৭১ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ শতাংশ বোরো ধান কাটা হয়েছে। দীর্ঘ পরিসরে এখনো ধান কাটা শুরু হয়নি। আমাদের উপজেলার কম্বাইন হারভেস্টারগুলোও রেডি আছে। আশা করা যাচ্ছে আগামী সপ্তাহ থেকে ধান কাটা শুরু হবে। চলমান তাপপ্রবাহের ফলে শ্রমিকরা অনিয়মিত হয়ে পড়লেও শিগগিরই এই সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি।
মন্তব্য করুন