এককালের প্রমত্তা পদ্মার বুক এখন শুকিয়ে খা খা বালুচর। স্থানীয় অন্য নদীগুলোও মৃতপ্রায়। খাল-বিল শুকিয়ে গেছে আগেই, শুকিয়ে যাওয়া নদীর বুকে চাষ হচ্ছে ধান-গম-ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসল। ঈশ্বরদী এলাকায় ক্রমশ নিচে নামছে পানির স্তর।
প্রতি বছর চৈত্র্যের খরতাপ শুরুর আগেই পানির সংকট শুরু হতে থাকে। এবার তীব্র খরা পরিস্থিতিতে চৈত্র্য মাসেই পানির স্তর ৩৫ ফুটেরও বেশি নিচে নেমে গেছে। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ও পৌর এলাকায় নলকূপে পানি উঠছে না। উঁচু এলাকাগুলোতে সংকট আরও ভয়াবহ। ঈশ্বরদীসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে পানির তীব্র অভাব দেখা দিয়েছে।
অনিয়ন্ত্রিতভাবে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনকেই পানি সংকটের অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। অনিয়ন্ত্রিতভাবে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ফলে উপজেলার উঁচু অধিকাংশ এলাকায় দিন দিন খাবার ও সেচের পানির সংকট প্রকটতর হচ্ছে। এসব এলাকায় হস্তচালিত নলকূপ দূরের কথা, গভীর নলকূপেও পানি উঠছে না ঠিকমতো। বছরের অধিকাংশ সময় পানির অন্যতম উৎস পুকুর-জলাশয়েও পানি থাকছে না।
ঈশ্বরদীতে চলমান মাঝারি ও তীব্র তাপপ্রবাহ এবং খরায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক নিচে নেমে গেছে। সুপেয় পানির জন্য হাহাকার সর্বত্র। ঈশ্বরদীতে গত ১৩ এপ্রিল থেকে ৩৮.৫ থেকে ৪২ ডিগ্রির মধ্যে তাপমাত্রা বিরাজ করছে। ২০ এপ্রিল তাপমাত্রা ছিল ৪১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২৬ এপ্রিল ৪২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এ বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। আবহাওয়া অফিস এই তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলছে। বৈশাখের শুরু থেকেই প্রচণ্ড গরমে মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। গোসলসহ খাবার ও রান্নাবান্নার পানিরও সংকট দেখা দিয়েছে। পানির স্তর নেমে যাওয়ায় পৌরসভার সরবরাহ করা পানির লাইনেও ঠিকমতো পানি আসছে না। লাইনে পানি থাকলেও প্রবাহ দুর্বল হওয়ায় বাসাবাড়ির ট্যাঙ্কিতে পানি সংরক্ষণে সমস্যা হচ্ছে।
পৌর এলাকাসহ উপজেলাজুড়ে পানির জন্য চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, কয়েকদিন ধরে শহরের বিভিন্ন এলাকায় পানি নিয়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বাড়ির পুরুষ সদস্যরা আশপাশের পুকুর কিংবা অন্য কোথাও গোসল সেরে বাড়ির জন্য বালতি ও কলস ভরে পানি সংগ্রহ করে আনছেন। খাবার ও রান্নার কাজের জন্য পানি সংগ্রহ করতে ছুটতে হচ্ছে আশপাশের গভীর নলকূপ কিংবা সাবমার্সিবল পাম্প আছে সেখানে। শহরের শৈলপাড়া, কর্মকারপাড়া, নূরমহল্লা, লোকোশেড এলাকা, বস্তিপাড়া, নিউকলোনি, উমিরপুর, ফতেমোহাম্মদপুরসহ প্রায় সকল এলাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
রূপপুরের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আমিরুল ইসলাম জানান, রূপপুর এলাকার কোনো টিউবওয়েল থেকে পানি উঠছে না। পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর কামাল আশরাফি জানান, ফতেহ মোহাম্মদপুর, নিউ কলোনি, তিনতলা এলাকার মানুষ স্থানীয় মসজিদের সাবমার্সিবল পাম্প থেকে প্রতিদিন দুইবার করে লাইন ধরে পানি সংগ্রহ করছেন। বস্তিপাড়া এলাকার সুদেব সরকার বলেন, বাড়ির নলকূপে পানি উঠছে না। বাধ্য হয়ে কাঠফাটা রোদের মধ্যে কলস ও বালতি নিয়ে মসজিদের সামনে লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে।
জানা গেছে, পৌর এলাকায় পানি সরবরাহের জন্য ১১টি পাম্প রয়েছে। এর মধ্যে সাতটি পাম্প চালিয়ে পানি সরবারাহ করা হয়। চারটি পাম্প ব্যাকআপ হিসেবে হয়েছে। তবে পানির চাপ কম থাকায় পাইপে স্বাভাবিক গতিতে পানি সরবরাহ হচ্ছে না।
পৌরসভার পানি শাখার সহকারী প্রকৌশলী প্রবীর বিশ্বাস বলেন, চৈত্র মাসের মাঝামঝি সময় থেকে পানির স্তর ৩৫ ফুট নিচে নেমে গেছে। কোনো কোনো এলাকায় এখন আরও বেশি। ২৫ ফুটের নিচে নামলে কোনো কোনো এলাকায় টিউবওয়েলে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে যায়।
মন্তব্য করুন