সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৩৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

তীব্র দাবদাহে কমছে দুধ-ডিমের উৎপাদন, মারা যাচ্ছে গবাদিপশু

তীব্র দাবদাহে কমছে ডিম, দুধ ও মাংসের উৎপাদন। ছবি : কালবেলা
তীব্র দাবদাহে কমছে ডিম, দুধ ও মাংসের উৎপাদন। ছবি : কালবেলা

সিরাজগঞ্জের ওপর দিয়ে বয়ে চলছে মাঝারি থেকে তীব্র দাবদাহ। প্রচণ্ড গরমে মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশুরও নাজেহাল অবস্থা। ঠিকমতো খাবার খেতে পারছে না, পাশাপাশি কমছে ডিম, দুধ ও মাংসের উৎপাদনও। প্রচণ্ড গরমে হিটস্ট্রোকে মারা যাচ্ছে গরু ও মুরগি। কৃত্রিম উপায়ে এসব খামারগুলো শীতল রাখার চেষ্টা করছেন খামারিরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের দুগ্ধভাণ্ডার বলে খ্যাত সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ি, রেশমবাড়ি, রাউতারা, পোতাজিয়াসহ মিল্কভিটার আওতাভুক্ত বিভিন্ন খামারের গাভীগুলো স্বাভাবিকভাবে খাবার খেতে পারছে না। ফলে দুধ উৎপাদন ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ কমে গেছে।

পোতাজিয়া এলাকার প্রায় খামারি মোহাম্মদ আলী বলেন, খরায় গাভির দুধ একেবারে শুকিয়ে গেছে। তার খামারে শতাধিক গরুর মধ্যে ৪টা গাভি আর ৩টা বাছুর মারা গেছে। প্রায় ১০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। প্রতিদিন তিনশ লিটার দুধের জায়গায় দুই থেকে শোয়া দুইশ লিটার দুধ উৎপাদন হচ্ছে।

তিনি বলেন, এই গরমে গবাদিপশুগুলোর কি অবস্থা হলো প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে কোনো নজরদারি নেই। খামারিদের কেউ তাকিয়েও দেখে না।

রেশমবাড়ী এলাকার খামারি মিজানুর রহমান ফকির বলেন, ৯০টি গরুর খামার তার। গরমে একটি গাভী মারা গেছে। প্রায় সবগুলোর পা জড়িয়ে গেছে (ঘা হয়েছে)। দুধের উৎপাদন কমেছে প্রায় ৪০ শতাংশ। আগে যেখানে একশ লিটারের দুধ পেতাম সেখানে ৬০ লিটার হচ্ছে।

একই গ্রামের বিখ্যা ফকির বলেন, তারও একটি গরু মারা গেছে। প্রান্তিক খামারি মারুফ হোসেনের ৮টি গরুর খামার। তিনি আগে ৪৫ লিটার দুধ পেতেন এখন ৩৮ লিটার পাচ্ছেন।

হোসেন আলী ফকির ও বাদশাসহ একাধিক খামারির সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, প্রচণ্ড গরমে খামারে বা বাগানে কোথাও ঠিকমতো থাকতে পারছে না গরুগুলো। জ্বর, ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ঠিকমতো খাবারও খাচ্ছে না। ফলে দুধের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এদিকে উৎপাদন কমে যাওয়ায় বাঘাবাড়ি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাত কারখানা মিল্কভিটায় দুধ সরবারহও কমে গেছে।

পোতাজিয়া প্রাইমারি দুগ্ধ উৎপাদন সমিতির সহকারী ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা বলেন, ‘আমাদের সমিতির খামারিরা প্রতিদিন গড়ে সাত হাজার লিটার দুধ উৎপাদন করেন। তবে গরমে উৎপাদন অনেক কমে গেছে। বেড়েছে গোখাদ্যের দাম। গো-খাদ্যের চেয়ে দুধের দাম কম। খামারিরা বাধ্য হয়ে গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন।

মিল্কভিটার উপমহাব্যবস্থাপক সাইদুল ইসলাম বলেন, প্রচণ্ড গরমের কারণে দুধের উৎপাদন কমেছে। নদীর পাশে যেসব খামার আছে, তারা সহজেই পানি পাচ্ছেন। যারা বাড়িতে খামার করেছেন, তারা বেশি বেকায়দায় পড়েছেন। মিল্ক ভিটার টার্গেট প্রতিদিন গড়ে ৯০ হাজার লিটার দুধ। তবে এখন খামারিরা ৫০ হাজার লিটারের বেশি দুধ সরবরাহ দিতে পারছেন না।’

এদিকে কোরবানির জন্য জেলায় ৬ লাখের মতো গরু তৈরি করছে খামারিরা। গরমে ষাঁড়গুলোর নাভিশ্বাস ওঠে গেছে। ঠিকমতো খাবার খেতে পারছে না। শিয়ালকোলের মুকুল হোসেন নামে এক খামারি বলেন, তিনি বিশাল আকৃতির দুটি ষাঁড় পালন করছেন। প্রচণ্ড গরমের কারণে খামার থেকে ষাঁড় বাইরে বের করা যাচ্ছে না। সেডগুলো সবসময় ভিজা রাখা হচ্ছে।

সিরাজগঞ্জের বেশ কয়েকটি উপজেলায় ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগি উৎপাদন করা হয়। খামারিরা বলেন, ২০ থেকে ২৫ শতাংশ ডিম উৎপাদন কমেছে। হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে মুরগি। হাঁসগুলো পুকুরের পানিতেও কুলোতে পারছে না।

বিলধলী এলাকার খামারি লোকমান হোসেন বলেন, যেখানে প্রতিদিন ৯০ শতাংশ ডিম উৎপাদন হতো, গরমের কারণে ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশের ওপর হচ্ছে না। মুরগি দুদিনের খাবার তিন দিনে খাচ্ছে। অসুস্থ হয়ে বা হিটস্ট্রোকে মারা যাচ্ছে। গরমের কারণে আমরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। শেডে কৃত্রিম ঝরনা তৈরি করে ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করছি।

একই এলাকার হাঁস ও মুরগির খামারি মোস্তফা কামাল বলেন, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পানি দিয়ে সেডে স্প্রে করা হচ্ছে। নিয়মিত স্যালাইন খাওয়ানো হচ্ছে। তারপরও লেয়ার ২০ শতাংশ আর ব্রয়লার ৩০ শতাংশের মতো মারা যাচ্ছে। ডিম উৎপাদন কমেছে ২৫ শতাংশ। পুকুরের পানি গরম হওয়ায় হাঁস জিহবা বের করে হাঁফাচ্ছে। মেশিন চালিয়ে পানি ঠান্ডা পানি দেওয়ার পর হাঁসগুলো কিছুটা স্বস্তি পায়।

জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. ওমর ফারুক বলেন, প্রায় ৬ লাখ গরু কোরবানির জন্য তৈরি করা হচ্ছে। চাহিদা ২ লাখ ২০ হাজারের মতো। বাকি গরুগুলো বাইরে সরবরাহ করা হবে। বর্তমানে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। এটা একটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। অলরেডি জেলা ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসগুলোতে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। গরমে কোনো পশুর সমস্যার তথ্য এলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছি। খামারিদের

বিভিন্নভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এই গরমে কেমন করে গরুগুলোকে রক্ষা করবে সে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রাণিসম্পদের সকল কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মাঠে থাকার জন্য। আমি নিজেও মাঠে রয়েছি।

তিনি বলেন, তাপমাত্রা বাড়ার কারণে গবাদিপশু খাওয়া কমিয়ে দেয়। এ কারণে দুধের উৎপাদন একটু কম হচ্ছে। তাপমাত্রা কমে গেলে আবার উৎপাদন স্বাভাবিক হবে।

মুরগির খামার একটি সেনসেটিভ বিষয়। সিরাজগঞ্জ সদর, কাজিপুর ও রায়গঞ্জ পোল্ট্রি জোন। এখানে একটু ঝুঁকি আছে। যেহেতু প্রচণ্ড তাপ চলছে ব্রয়লারের ক্ষেত্রে ঝুঁকিটা বেশি। মাংস ও ডিমের উৎপাদন কিছুটা কমে গেছে। খামারিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে দিনের বেলায় বেশি তাপমাত্রায় খাবার কম দিয়ে রাতে বেশি খাবার দিতে হবে। টিনের শেডে চট ভিজিয়ে রাখতে বলা হয়েছে। ভিটামিন সি জাতীয় খাবার বেশি দিতে হবে।

এদিকে তাড়াশ কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, গত দুদিন ধরে এ অঞ্চলে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এ সপ্তাহজুড়েই এমন অবস্থা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এইচএসসি পাসে সেলস অফিসার নেবে স্কয়ার গ্রুপ

ফসলি জমি কেটে রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে

ফোর্বসের তালিকায় ৯ বাংলাদেশি

ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলছাত্রী নিহত

রিট আরও আগেই করা উচিত ছিল : নিপুন

ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস আজ

ক্ষমতার দাপট, খাল বন্ধ করে বহুতল ভবন নির্মাণ

মঞ্চ কাঁপাচ্ছেন ডিজে ভিক্ষু, মাতাল হয়ে শুনছে সবাই

মিষ্টি জান্নাতকে চুমু খেতে চেয়েছেন জয়, আছে ভিডিও

তামাকজাত দ্রব্যে কর বৃদ্ধিতে পাশে থাকবেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী

১০

ভাড়া বাসা থেকে এনজিও কর্মীর লাশ উদ্ধার

১১

২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার নতুন এডিপি অনুমোদন

১২

মৌলভীবাজারের তাজের প্রার্থিতার বিপক্ষে ইসির আপিল খারিজ, নির্বাচন স্থগিত

১৩

আকর্ষণীয় বেতন আইসিডিডিআরবিতে চাকরি

১৪

চোট নিয়েই মেয়ের হাত ধরে কানে ঐশ্বরিয়া, হাঁটবেন লালগালিচায়

১৫

একাদশ শ্রেণিতে ক্লাস শুরু ৩০ জুলাই

১৬

গরম পানি ঢেলে স্ত্রীর শরীর ঝলসে দিলেন স্বামী

১৭

সিল মারা ব্যালটসহ ফেসবুকে পোস্ট, ইউপি চেয়ারম্যানকে ইউএনওর নোটিশ

১৮

বিমানবন্দরের সামনে ফ্লাইওভারে প্রাইভেটকারে আগুন

১৯

পুতিনপন্থি প্রধানমন্ত্রীকে গুলির নেপথ্যে আমেরিকা?

২০
X