বিএনপির পদযাত্রা ও আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে জেলা শহরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। জেলার গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিরাপত্তা জোরদার করতে রাত থেকে শহরে র্যাবের টহল চলছে। এই পরিস্থিতিতে বিএনপি দলীয় লোকজনের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এদিকে সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনার বিষয়ে মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) রাতেই সংবাদ সম্মেলন করেছে জেলা বিএনপি। এসময় বিএনপি নেতারা তাদের শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় আওয়ামী লীগ ও পুলিশ বাধা দিয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা প্রকাশ করেছে বলে দাবি করেন। পৃথক পয়েন্টে একাধিক ঘটনায় দলীয় এক কর্মী নিহত হওয়াসহ শতাধিক নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়েছে বলেও দাবি করেন বিএনপি নেতারা।
তাবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে পালটা বিএনপিকে দায়ী করে বক্তব্য দিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ।
একইভাবে জেলা পুলিশও বিএনপিকে অভিযুক্ত করে শর্ত ভঙ্গ ও সংঘর্ষের সূত্রপাত করার জন্য দায়ী করে।
সংঘর্ষের ঘটনায় মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) রাতে সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপি আহ্বায়ক শহিদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেন, আমরা আমাদের শান্তিপূর্ণ পদযাত্রার আয়োজন করি। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে নেতাকর্মীরা শহরের বশির ভিলার দিকে আসতে থাকে। পথে পথে আওয়ামী লীগের হাতে বাধার সৃষ্টি হয়। আমরা বিকেলে যখন পদযাত্রা শুরু করি, তখন সামাদ মোড় এলাকায় কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে আমাদের লোকজনের ওপর চোরাগোপ্তা হামলা চালায়। এতে আমাদের একজন কর্মী নিহত হন।
তিনি বলেন, যিনি নিহত হয়েছে, সে আমাদের চরশাহী ইউনিয়ন কৃষকদলের সদস্য। তার বাড়ি সদরের চরশাহী ইউনিয়নের নুরুল্যাপুর গ্রামে। তার বাবার নাম আবু তাহের। তাকে ধাওয়া করে মদিন উল্যা হাউজিংয়ের সামনে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমরা হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি, যারা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনতে হবে।
পুলিশের ওপর হামলার বিষয়ে এ্যানি বলেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মী বিএনপিকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে ওই ইটপাটকেল পুলিশের গায়ে পড়ে।
তিনি বলেন, হতাহতের ঘটনায় আমরা একাধিক মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
সংঘর্ষের ঘটনায় বিষয়ে জানতে চাইলে সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হুমায়ুন কবির পাটওয়ারী বলেন, আমরা আমাদের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শান্তি সমাবেশের আয়োজন করি। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা শান্তি সমাবেশে যোগ দিতে শহরে আসে। পুলিশের পক্ষ থেকে আমাদের প্রতি অনুরোধ ছিল আমরা যাতে বাজার সড়কের ব্রিজের দক্ষিণে না যাই। তাই আমরা ব্রিজের উত্তর প্রান্ত থেকে বাজার সড়ক হয়ে উত্তর এসে বাস টার্মিনালের দিকে যাই। কিন্তু শহরের সামাদ মোড় এলাকায় কী হয়েছে তা আমাদের জানা নেই। শান্তি সমাবেশে আমাদের প্রায় ১০-১২ হাজার লোক অংশ নিয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের নেতাকর্মীরা বিএনপির কারও ওপর আক্রমণ করেনি। উলটো আমাদের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন জায়গা থেকে দলবদ্ধ হয়ে আসার সময় বিএনপির লোকজনের আক্রমণের শিকার হয়েছে। আমাদের নেতাকর্মীও আহত হয়েছে। তবে কতজন আহত হয়েছে, সে সংখ্যা তিনি জানাতে পারেননি।
কৃষকদলের সদস্য নিহতের ঘটনায় তিনি বলেন, দলীয় আন্তঃকোন্দলের কারণে বিএনপির লোকজন নিজেদের লোককে এদিন হত্যা করে আওয়ামী লীগের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। এসব পাঁয়তারা করে তারা রাজনৈতিক সুবিধা হাসিলের ব্যর্থ চেষ্টা করছে। জনগণ বিএনপির মিথ্যাচারের জবাব দিবে।
সংঘর্ষের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জেলা পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ বলেন, বিএনপির একটি পদযাত্রা কর্মসূচি ছিল। তারা আগের দিন (সোমবার) আমাদের কাছে এসেছে। আমরা তাদের রুট দিয়ে দিয়েছিলাম, যেহেতু আওয়ামী লীগেরও একটি শান্তি সমাবেশ ছিল। তাদের (বিএনপি) হাইওয়ে সড়কে ওঠা নিষেধ ছিল। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তারা যখন হাইওয়েতে ওঠার চেষ্টা করে, পুলিশ তাদের বাধা দিয়েছিল। তারা পুলিশকে পেছন থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে। তাদের প্রত্যেকের হাতে জাতীয় পতাকার সঙ্গে লাঠি ছিল। পুলিশ ধৈর্য ধারণ করে তাদের বাধা দিয়েছিল, তারা যেন হাইওয়েতে না যায়। কিন্তু আমাদের ওভারটেক করে যেতে চেষ্টা করেছে। আমাদের ওপর ইটপাটকেল মেরেছে। আমাদের ২৫-৩০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। দীর্ঘ ৪৫ মিনিট পর তাদের নিবৃত্ত করতে সক্ষম হই। তারা আধুনিক হাসপাতালে পুলিশদের অবরোধ করে রাখে। শহরের নিরাপত্তার জন্য র্যাব এসেছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, সংঘর্ষের ঘটনায় সদর হাসপাতাল থেকে ৬৬ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। অনেকেই আবার চিকিৎসা না নিয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। একসঙ্গে এত লোককে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে। আহতদের মধ্যে অনেকেই গুলিবিদ্ধ ছিল।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) বিএনপির পদযাত্রা ও আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় ত্রিমুখী সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে লক্ষ্মীপুর শহর। সংঘর্ষে বিএনপির অঙ্গ-সংগঠন কৃষকদলের এক কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে শতাধিক লোকজন। এদের মধ্যে ২০-৩০ জন পুলিশ সদস্য রয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের এসপি।
মন্তব্য করুন