চৈত্রের শেষে বাংলা নতুন বছরের শুরুর দিকে অসহনীয় দাবদাহে পুড়েছে দেশ। তীব্র গরমে কৃষি, প্রাণ ও প্রকৃতি ছিল বিমর্ষ। এখন কিছুটা সহনীয় প্রকৃতিতে মিলছে বৃষ্টি। বাতাসে দোল খাচ্ছে বোরো ধানক্ষেত। প্রকৃতি অনুকূলে থাকায় ফুরফুরে মেজাজে কৃষকরা শুরু করেছেন ধান কাটা ও মাড়াই।
ফরিদপুরের সদরপুরে চলতি মৌসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ছাড়িয়েছে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা। তবে ফলন ভালো হলেও ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কিত কৃষকরা। উৎপাদন বেশি হলে কম দামে ধান-চাল বিক্রি করতে হয় তাদের। এতে মাঠের হাসি হাটেই শেষ হওয়ার শঙ্কা থাকে বেশি।
এখনকার সময়ে বোরো ধান দুই ধরনের হয়ে থাকে। অনেক জায়গায় সবুজ রং ধারণ করে আবার কোথাও হলুদ রং। বিস্তীর্ণ ধানখেতে সবজু-হলুদ বর্ণে দোল খাচ্ছে সেচ নির্ভর বোরো ধান। বৈশাখের শেষ দিকের এই সময়ে সদরপুরে প্রকৃতি অনুকূলে থাকায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। আর অল্প কিছু দিন পর পুরোদমে শুরু হবে ধান কাটা ও মাড়াই উৎসব। তবে শেষ মুহূর্তে এসে বৈরী আবহাওয়ার কারণে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকেরা।
রোববার (১২ মে) সদরপুর উপজেলার আকোটের চর, খেজুরতলা, চর বিষ্ণপুর, পূর্ব শ্যামপুর, কাটাখালি, শৌলডুবি, ঢেউখালি, চর ডুবাইল, চন্দ্রপাড়া, পিয়াজখালি, আমিরাবাদ, আটরশি, পশ্চিম শ্যামপুরসহ বেশকিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, যতদূর চোখ যায় বৈশাখের শেষের দিকের হালকা বাতাসে ধানের শীষে দোল খাচ্ছে সবুজ-হলুদ বর্ণ বোরোর চাদর। যেন সোনালী ধানে ভরপুর ফসলি মাঠ।
সদরপুরের সতেররশি এলাকার ধানচাষি আমিন সর্দার প্রতি বছরের মতো এবারো বোরো ধান আবাদ করেছেন। এবার তিনি আগের বছরের চেয়ে বেশি জমিতে আবাদ করেছেন।
তিনি জানান, প্রায় তিন একর জমিতে সেচের পানি, সার, ধান কাটাসহ তার খরচ পড়েছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। বৃষ্টি হইলে সমস্যা নাই। বাতাসি ঝড় বা শিলাবৃষ্টি হইলে আমাগো সমস্যা। পাকা ধানের অনেক ক্ষতি হইবো।
পূর্ব শ্যামপুরের কৃষক রব বেপারী জানান, এপ্রিল মাসজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহ থাকলেও ইরি ধানের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। বুধবার (৮ মে) সকাল পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফুরফুরে মেজাজে ছিলাম। কিন্তু সম্প্রতি দেশজুড়ে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে কালবৈশাখি ঝড় ও শিলাবৃষ্টির সম্ভাবনা থাকায় চিন্তিত হয়ে পড়েছি। কালবৈশাখি ঝড়, শিলাবৃষ্টি, তীব্র দাবদাহে ধানে চিটা পড়া এবং ন্যায্যমূল্য পাবে কি না এইসব নিয়েই এখন তাদের চিন্তা। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকলে বাম্পার ফলনের আশা করছেন তারা।
সেকেন্দার শিকদার নামের আরেক কৃষক বলেন, শনিবার সাড়ে সাতরশি হাটে প্রতি মণ মোটা ধান ৮০০ টাকা থেকে ৯০০ টাকা এবং চিকন ধান এক হাজার থেকে এক হাজার ১০০ টাকা মণে বিক্রি হচ্ছে। দাম ও ফলন মোটামুটি ভালোই। কিন্ত আবহাওয়ার খারাপের কারণে ও মাঝে ঝড় হওয়াতে ধানের অনেক ক্ষতি হয়েছে। যদি আবহাওয়ার ভালো থাকে তাহলে একর প্রতি জমিতে ২০ হাজার লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সদরপুর কার্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৭৪০ হেক্টর জমি। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে বোরো ধান চাষ হয়েছে এক হাজার ৭৯৫ হেক্টর জমিতে। এবার প্রতি হেক্টরে ৪ দশমিক ৩২ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হবে। এরইমধ্যে উপজেলার অনেক এলাকায় ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়েছে। আবাদের শুরু থেকে বোরো ধানের বীজ, সার ও কীটনাশকসহ অন্যান্য উপকরণ সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে কৃষকদের। ফলে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে ধান চাষে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নিটুল রায় জানান, দাবদাহ মোকাবিলা করতে সার্বক্ষণিক কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করা যায়। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে কালবৈশাখি ঝড় ও শিলাবৃষ্টি পাকা ধানের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করতে পারে।
তিনি জানান, এই উপজেলার প্রায় ৮০ ভাগ ধান পেকে গেছে। যত দ্রুত সম্ভব পাকা ধানগুলো কেটে গোলায় নিয়ে আসার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
মন্তব্য করুন