নরসিংদীর রায়পুরায় ইউপি নির্বাচনে বিজয়ী ও পরাজিত প্রার্থীকে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেওয়াকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে টেঁটাবিদ্ধসহ ২০ জন আহত হয়েছে। এ সময় বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
সোমবার (১৩ মে) সন্ধ্যার দিকে উপজেলার চড়আড়ালিয়া ইউনিয়নের বাঘাইকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার (১৪ মে) দুপুরে রায়পুরা থানায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগীদের একজন মো. আবু কালাম।
মামলায় ২২ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরও ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়েছেন।
জানা গেছে, গত ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত রায়পুরা উপজেলার চর আড়ালিয়া ইউনিয়নের ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করেন মাসুদা জামান। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরাজিত হন সজিব সরকার। এসব নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। সোমবার চেয়ারম্যান মাসুদা জামানের স্বামী হাসানুজ্জামান সরকারের চাচাতো বোনের মেয়ের বিয়ে ছিল। ওই অনুষ্ঠানে স্বামীসহ চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন। তারা দাওয়াত খেয়ে চলে আসার পর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পরাজিত প্রার্থী সজীব সরকারের সমর্থক নিকচাঁন সরকারের নেতৃত্বে একদল কর্মী-সমর্থক বিয়ে বাড়িতে গিয়ে ‘বিএনপির চেয়ারম্যানকে কেন দাওয়াত দেওয়া হলো’ তা জানতে চান। এ সময় তারা ওই বিয়েবাড়ির লোকজনকে মারধর করে অনুষ্ঠানের খাবার ফেলে দেন এবং ৪টি গরু লুট করে নিয়ে যায়।
এ ঘটনা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামানের চাচাতো ভাই আবু কালাম ইউপি কার্যালয়ে গিয়ে বিষয়টি চেয়ারম্যান মাসুদা জামানকে বিষয়টি জানান।
পরে আমিরগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আমিনুল ইসলামসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে যান। একপর্যায়ে পুলিশের সামনেই সজিব সরকারের সমর্থকরা দলবল নিয়ে চেয়ারম্যানের বাড়িতে ককটেল নিক্ষেপ করে ভাঙচুর এবং বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় চেয়ারম্যান মাসুদা জামান ঘর থেকে বেরিয়ে এলে তার হাত থেকে মোবাইলফোনসহ ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়া হয়। হামলাকারীরা চেয়ারম্যানের সমর্থকদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও বসতবাড়িতে মালামালও লুট করে। এসব ঘটনায় দুজন টেঁটাবিদ্ধসহ আহত হয় অন্তত ২০ জন।
আহতদের উদ্ধার করে নরসিংদীর সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়। আহতরা হলেন আবু কালাম (৪৪), বাহার উদ্দীন (৬০), সুফিয়া (২০) ও আ. বাতেন (৪০)। বাকিদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
এ ব্যাপারে সজীব সরকারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি পরে কথা বলবেন বলে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন।
হামলায় নেতৃত্ব দেওয়া নিকচাঁন সরকার বলেন, চেয়ারম্যানের বাড়িতে হামলার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তবে বিয়েবাড়িতে তারা গেলে কথাকাটাকাটি হয়। লুটপাটের ব্যাপারে তিনি অবগত নন।
ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদা জামান বলেন, নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর থেকেই প্রতিপক্ষরা একটি ইস্যু খুঁজছিল। বিয়ে বাড়িতে দাওয়াত দেওয়া নিয়ে যে ঘটনা তারা ঘটিয়েছে তার জন্য অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। এসব ঘটনায় অন্তত ১০টি বাড়ি পুড়েছে, বাড়িগুলোতে ভাঙচুর এবং লুটপাট করা হয়েছে। কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছে। এ সময় তার একটি মোবাইল ফোন ও ব্যাগও ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ছাড়া তিনি নিজেও তাদের হাত থেকে রক্ষা পেতে দৌড়ে পালিয়েছেন।
রায়পুরা থানার ওসি সাফায়েত হোসেন বলেন, বিয়ের দাওয়াত নিয়ে দ্বন্দ্বে ইউপি নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকরা এসব ঘটিয়েছেন। এ ঘটনায় মামলার ভিত্তিতে তিনজন আসামিকে গ্রেপ্তার হয়েছে। গ্রেপ্তরকৃতদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। জড়িত বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
মন্তব্য করুন