পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের গোপন কক্ষে ব্যালট পেপারে সিল মেরে তা ছবি ও সেলফি তুলে ফেসবুকে শেয়ারের পর বিপাকে পড়েছেন শালবাহান ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম। এ ঘটনায় তাকে নিয়ে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসে।
স্থানীয় সরকারের একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে কেন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না এ মর্মে গত ১২ মে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি প্রদান করেছেন তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফজলে রাব্বি।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ৮ মে উপজেলায় ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনের দিনে আপনি তেঁতুলিয়া উপজেলাধীন ৪নং শালবাহান ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হিসেবে শালবাহান ইউনিয়নের মাঝিপাড়া দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের গোপন কক্ষে ভোট দেওয়ার সময় নিজের ও মার্কিং সিলসহ ব্যালট পেপারের ছবি ধারণ করে আপনার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে আপলোড করেছেন, যা নির্বাচনী আচরণ বিধিমালার পরিপন্থি। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন জাতীয়, স্থানীয় পত্রিকা, টেলিভিশন চ্যানেল এবং অনলাইন পোর্টালে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ হয়েছে।
তাই স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ এর ১০৭ ধারা অনুযায়ী জনসেবক হওয়া সত্ত্বেও নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে ভোটকেন্দ্রের গোপন কক্ষে ভোট প্রদানের সময় নিজের ও মার্কিং সিলসহ ব্যালট পেপারের ছবি ধারণ করে ভোটকেন্দ্রের বাইরে এসে জনসাধারণ ও সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক আইডিতে প্রদর্শন করেন। পরে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ব্যক্তিগত আইডিতে লাইভে এসে বিবৃতি প্রদান করেন, যা জনসাধারণের মাঝে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ এর ৩৪ এর (৪) ধারার (খ) ও (ঘ) উপধারা মোতাবেক অসদাচরণের শামিল।
সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা, ২০১৯ এ প্রদত্ত নির্দেশনা অনুসরণের পরিপন্থি মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে। তাই এমন কর্মকাণ্ডের দায়ে আপনার বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ এর ৩৪ ধারা অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে কেন সুপারিশ করা হবে না এর সন্তোষজনক ব্যাখ্যা ১৬ মে তারিখের মধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে দাখিল করতে অনুরোধ করা হলো।
এর আগে, শালবাহান ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম বলেছিলেন, দেশের অনেক জায়গায় তো এ ধরনের পোস্ট করতে দেখেছি। কই তাদেরকে তো কোনো কিছু করা হয়নি। এ ধরণের অভিযোগ এককভাবে নয়, যারা করছেন তাদের সবাইকে সতর্ক করার অনুরোধ জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ৮ মে নির্বাচনের দিন তেঁতুলিয়া উপজেলার শালবাহান ইউনিয়নের মাঝিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম। নির্বাচনী আচরণবিধি অমান্য করেই স্মার্টফোন নিয়ে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করেন। পরে নিজের ভোট দিতে কেন্দ্রের গোপন কক্ষে ব্যালট পেপার নিয়ে ব্যালটে সিল মেরে সেখানেই সিল মারা ব্যালটসহ ছবি (সেলফি) তুলেন। পরে সেটি বিকেলে ফেসবুকে ব্যক্তিগত আইডিতে পোস্ট করেন।
সে পোস্টের ছবিতে দেখা যায়, সিলমারা ব্যালট পেপার এক হাতে ধরে আরেক হাতে সেলফি তুলেছেন। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ঘটনাটি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে নির্বাচন কমিশনের নজরে আসলে প্রশাসনিকভাবে এ পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ওই চেয়ারম্যান ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।
মন্তব্য করুন