দেশের পূর্বাঞ্চলের ১৩ জেলার গণপরিবহন এবং পণ্য পরিবহন রাজধানীতে প্রবেশ করার একমাত্র রুট হচ্ছে ডেমরার স্টাফ কোয়ার্টার। এখান থেকে ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সংযোগ শুরু হওয়ায় পরিবহনের চাপ বেশি থাকে। এ কারণে স্টাফ কোয়ার্টারকে ঘিরে গড়ে উঠেছে ট্রাফিক পুলিশের রমরমা ঘুষ বাণিজ্য। এখান থেকে প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করছে ট্রাফিক পুলিশ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ডেমরা ট্রাফিক বক্সের সামনে প্রতিদিন সারিবদ্ধভাবে ব্যাটারি চালিত অটো-সিএনজি এবং পণ্য পরিবহনকারী ট্রাক এসব গাড়ি থেকে রেকারিং এবং ডাম্পিংয়ের বিল আদায় করছে। আর যাদের মানথলি করা রয়েছে কয়েক ঘণ্টা আটকে রেখে তাদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। পরে এসব অবৈধ গাড়ি আবারো সড়কে চলছে দেদার। এসব লোক দেখানো ডাম্পিং আর রেকার বিল শুধু সিএনজি, অটোরিকশা এবং ট্রাকের বেলায়। এখানে বাস, লেগুনার বেলায় কোনো ডাম্পিং বা রেকার জরিমানা কিছুই হচ্ছে না। কারণ এসব পরিবহনের মালিকরা সময় মতো সপ্তাহ (চাঁদার টাকা) পরিশোধ করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ডেমরার স্টাফ কোয়ার্টার এলাকা থেকে আছিম, স্বাধীন, আসমানী, রমজান, রাজধানী, আলিফ, ডেমরা এবং আশিয়ান পরিবহন নামে এসব লোকাল গণপরিবহন প্রতিদিন ডেমরা থেকে এবং ডেমরা হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন রোডে চলাচল করে। এ ছাড়া ডেমরার স্টাফ কোয়ার্টার থেকে প্রায় শতাধিক লেগুনা এবং অবৈধ সিএনজি চলাচল করে রাজধানী অথবা রাজধানীর বাইরের বিভিন্ন রুটে।
জানা গেছে, এসব বাস কোম্পানি থেকে প্রতি সপ্তাহে ৮ থেকে ১২ হাজার টাকা করে আদায় করে ডেমরা কোনাপাড়া ট্রাফিক পুলিশ। এবং অবৈধ লেগুনা থেকে প্রতি মাসে ১ হাজার টাকা ট্রাফিক পুলিশকে দিতে হয়। এসব লেগুনার চালকদের কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। এ ছাড়া এসব গাড়ির কোনো ফিটনেস সার্টিফিকেটও নেই। এ ছাড়া আন্তঃজিলা ট্রাক থেকে প্রতিমাসে আদায় করা হয় প্রায় ৩ লক্ষাধিক টাকা এবং সড়কের উপরে গাড়ি পার্কিং করে রাখার জন্য প্রতিটি গাড়ি থেকে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা করে নেয় হয়।
আরও জানা গেছে, ট্রাফিক ইনস্পেক্টর (টিআই) এর জন্য রয়েছে ওই ৮টি বাস কোম্পানি থেকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে মোট ৮০ হাজার টাকা এটা একান্তই টিআই সাহেবের।
এসব ঘুষ বাণিজ্য জায়েজ করতে ট্রাফিক থেকে ব্যাপক ছাড় দিতে হচ্ছে পরিবহন সংস্লিষ্টদের। স্টাফ কোয়ার্টার থেকে যেসব যাত্রী পরিবহন রাজধানী ঘুরে বেড়াচ্ছে এসব গাড়ির ফিটনেস, চালকের বৈধ লাইসেন্স ঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করার প্রয়োজন মনে করছেন না সংস্লিষ্ট ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা।
গুলিস্থানের লেগুনা ড্রাইভার মো. রউফ হোসেনের ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে কি না জানতে চাইলে তিনি দৈনিক কালবেলাকে বলেন, লাইসেন্স নাই সেই জন্য প্রতিদিন ৪শ টাকা দেই পুলিশকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপ্রাপ্ত বয়স্ক কয়েকজন চালক বলেন, আমাদের বয়স কম বলে ড্রাইর্ভিং লাইসেন্স করা যায় না। তবে পুলিশ ধরলে টাকা দিয়ে ছুটে যাই। আর মালিক ও নেতারা মাসে মাসে আমাদের কাছ থেকে আলাদা টাকা নেয় সড়কে চলাচলের জন্য। টাকা না দিলে পুলিশ কি রাস্তায় গাড়ি চালাতে দিবে মামা?।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৬৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, স্টাফ কোয়ার্টারে পরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্য কিছুতেই থামানো যাচ্ছেনা। প্রতিটি যানবাহনে মাদকাসক্ত চালকের হাতে মালিকরা তাদের মূল্যবান গাড়ি তুলে দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে প্রশাসন, ট্রাফিক পুলিশ ও সমাজের প্রভাবশালী মহল সহ আমরা সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।
ট্রাফিক বিভাগের চাঁদাবাজির বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মৃদুল কুমার পাল দৈনিক কালবেলা প্রতিবেদককে চায়ের দাওয়াত দিয়ে বলেন, ঊর্ধ্বতনের নির্দেশে সড়কে অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা, ডাম্পিং ও রেকারিং করছি। এ ছাড়া সড়কে শৃঙ্খলা আনতে পরিবহনের নেতারা, জনপ্রতিনিধি, থানা পুলিশ এবং ট্রাফিক বিভাগসহ সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
মন্তব্য করুন