ঝড়-বৃষ্টিতে নদীর পানি বাড়লেই বাঁধ ভেঙে প্লাবনের শঙ্কা তৈরি হয় খুলনার কয়রায়। ঝুঁকিতে রয়েছে উপকূলজুড়ে থাকা অধিকাংশ বেড়িবাঁধ ও শত শত মানুষ। আইলায় ক্ষতিগ্রস্তের ১৫ বছর পার হলেও এখনো নির্মাণ হয়নি স্থায়ী বেড়িবাঁধ।
চলতি মে মাসে আবারও ঘূর্ণিঝড় রেমাল আগামী ২৬ মে সম্ভাব্য আঘাত হানবে এমন বার্তায় নতুন করে শঙ্কিত নদী তীরবর্তী মানুষগুলো। কয়রা উপকূলবাসীর কাছে আতঙ্কের মাস মে। এই মে মাসে সুন্দরবন উপকূলে আছড়ে পড়েছিল আইলা, ফণী, বুলবুল, ইয়াস ও আম্পানের মতো প্রলয়ংকরী সব ঘূর্ণিঝড়। এ সময় সুন্দরবন–সংলগ্ন উপকূলীয় উপজেলা কয়রার বিভিন্ন বেড়িবাঁধে দেখা দেয় ভাঙন।
এলাকাবাসী, জনপ্রতিনিধি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়রা সদর ইউনিয়নের মদিনাবাদ লঞ্চঘাট থেকে গোবরা পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার, হরিণখোলা-ঘাটাখালী এলাকায় এক কিলোমিটার, ৫ নম্বর কয়রা ক্লোজার, স্লুইস গেট সংলগ্ন ৫০০ মিটার, ৬ নম্বর কয়রা এলাকায় ৬০০ মিটার, ২ নম্বর কয়রা এলাকায় ৫০০ মিটার, মহারাজপুর ইউনিয়নের মঠবাড়ি-দশহালিয়া এলাকায় দুই কিলোমিটার, উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের কাটকাটা থেকে শাকবাড়িয়া গ্রাম পর্যন্ত এক কিলোমিটার, কাশির হাটখোলা থেকে কাটমারচর পর্যন্ত ৭০০ মিটার, গনেষ মেম্বারের বাড়ির পাশে, পাথরখালী এলাকায় ৬০০ মিটার ও মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের শেখেরকোনা, নয়ানি, শাপলা স্কুল, তেঁতুলতলার চর ও চৌকুনি এলাকায় তিন কিলোমিটারের মতো বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মদিনাবাদ লঞ্চঘাট এলাকায় ১ কিলোমিটার বাঁধ ধসে সরু হয়ে গেছে। চর ভেঙে একেবারে বাঁধের পাশ দিয়ে স্রোত প্রবাহিত হচ্ছে। কয়েক জায়গায় নিচু বাঁধের ওপর মাটির দেয়াল তৈরি করে জোয়ারের পানি ঠেকানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
মঠবাড়ী গ্রামের আবু সাইদ মোল্যা বলেন, শাকবাড়িয়া নদীর পানির চাপে কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশন সংলগ্ন সুতি বাজার স্লুইসগেটের দুই পাশে বাঁধে ফাটল ধরেছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড তা মেরামত করছে না। সময়ের কাজ সময় মতো করলে আমাদের এত ভোগান্তি হতো না। গাঙের পানি যখন চরের নিচে থাকে, তখন কারও দেখা পাওয়া যায় না। যেই সময় গাঙের পানি বাঁধের কানায় কানায় এসে ঠেকে, তখনই শুরু হয় তোড়জোড়।
গাববুনিয়া গ্রামের ষাটোর্ধ্ব উশিলা মন্ডল বলেন, ঝড়-বন্যায় বাঁধ ভেঙে ঘরবাড়ি সব গাঙে গেছে। বারবার এভাবে ভাঙলে আমাদের আর থাকার জায়গা থাকবে না।
গোবরা গ্রামের নূরুল আমীন জানান, উপকূলের বিভিন্ন জায়গায় ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে সবাই আতঙ্কে রয়েছেন। কারণ ঝড়-বৃষ্টিতে উপকূলে কিছু না কিছু প্রভাব পড়ে।
কয়রা সদর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান এস,এম লুৎফার রহমান বলেন, এ পর্যন্ত যত দুর্যোগ এসেছে, তার বেশিরভাগ মে মাসে। এ জন্য মে মাস এলে আতঙ্কিত থাকে উপকূলীয় কয়রার শত শত মানুষ। প্রতিবছর মে মাস এলেই পাউবো কর্তৃপক্ষ বাঁধ মেরামতের খুব তোড়জোড় শুরু করে। কী কারণে সেটা কেউ বলতে পারে না। অথচ শীত মৌসুমে কাজ করার অনেক সুবিধা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম বলেন, কয়রার ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের তালিকা করা হয়েছে। কিছু এলাকায় সংস্কারকাজ এরইমধ্যে শুরু হয়েছে। বর্তমানে কয়রার উত্তর বেদকাশী ও দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নে বাঁধ নির্মাণসহ প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্প শেষ হলে ৩১ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিমুক্ত হবে। পর্যায়ক্রমে ঝুঁকিপূর্ণ অন্যান্য বাঁধগুলো জরুরিভিত্তিতে কাজ করা হবে। তবে বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ না এলে কোনো সমস্যা হবে না।
মন্তব্য করুন