সিঁধ কেটে বসতঘরে প্রবেশ করে স্বর্ণালংকার ও নগর টাকা চুরিসহ ভিকটিম গৃহকর্ত্রীকে ধারালো ছুরিকাঘাত করে খুন করার অপরাধে একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন কুমিল্লার আদালত।
বৃহস্পতিবার (৩০ মে) কুমিল্লা অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ পঞ্চম আদালতের বিচারক মোছা. ফরিদা ইয়াসমিন এ রায় দেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির নাম মো. আরাফাত হোসেন দিদার (২৮)। তিনি কুমিল্লা মনোহরগঞ্জ উপজেলার হাতিমারা গ্রামের আবুল হাসেমের ছেলে। নিহত গৃহকর্ত্রীর নাম শিউলি আক্তার (৩৫)। তিনি কুমিল্লা মনোহরগঞ্জ উপজেলার হাতিমারা গ্রামের মৃত দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৪ সালের ১৭ জুন রাত ২টায় আসামি দিদার কুমিল্লা মনোহরগঞ্জ উপজেলার হাতিমারা গ্রামে ভিকটিমের বসতঘরে সিঁধ কেটে প্রবেশ করে।
ঘরের মালামাল চুরি করার সময় নড়াচড়ার শব্দে ঘুম ভেঙে গেলে চুরি করা অবস্থায় ভুক্তভোগী শিউলি আক্তার চোরকে দেখে ফেলে। এতে চোর ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করে শিউলিকে জখম করে এক ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন ও নগদ ১০ হাজার টাকা নিয়ে ঘর থেকে দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরে শিউলির অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হসপিটালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। পরের দিন সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভিকটিম শিউলি আক্তার মারা যান।
এ ব্যাপারে পর দিন নিহতের বড়ভাই কুমিল্লা মনোহরগঞ্জ উপজেলার হাতিমারা গ্রামের মৃত দেলোয়ার হোসেনের ছেলে মো. জামাল হোসেন (৩৮) বাদী হয়ে একই গ্রামের আবুল হাসেমের ছেলে মো. আরাফাত হোসেন দিদারকে একমাত্র আসামি করে মনোহরগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এতে তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেন। পরে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সনজিত চন্দ্র নাথ, পায়েল হোসেন, হাবিব সরদার ও মো. বেলাল হোসেন ঘটনার মূল রহস্য উদ্ঘাটন করলে আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়। এতে ২০১৫ সালের ২৬ মার্চ বিজ্ঞ আদালতে আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
পরে মামলাটি বিচারে আসলে ২০১৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি আসামি দিদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে রাষ্ট্রপক্ষে ১৪জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আসামি দিদারের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে খুনের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ৩ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া দোষী সাব্যস্ত করে আসামিকে অন্য এক ধারায় ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। রায় ঘোষণাকালে দণ্ড প্রাপ্ত আসামি মো. আরাফাত হোসেন দিদার আদালত কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপক্ষে নিযুক্তীয় বিজ্ঞ কৌশলী এপিপি অ্যাড. মো. জাকির হোসেন বলেন, এ রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ এবং বাদীপক্ষ সন্তুষ্ট। আমরা আশা করছি উচ্চ আদালত এ রায় বহাল রাখবেন।
মন্তব্য করুন