ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রকাশ : ৩১ মে ২০২৪, ০৪:২২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

৮০ কোটি টাকা খরচেও কাঙ্ক্ষিত পানি নেই নদীতে

ঠাকুরগাঁওয়ের স্থানীয় একটি নদী। ছবি : কালবেলা
ঠাকুরগাঁওয়ের স্থানীয় একটি নদী। ছবি : কালবেলা

নদীর নাব্য বৃদ্ধি ও শুষ্ক মৌসুমে পানির সহজলভ্যতা নিশ্চিতকরণে ঠাকুরগাঁওয়ে ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে সাতটি নদী এবং একটি খাল খনন করা হলেও কাঙ্ক্ষিত সুফল না পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। খননের এক থেকে দুই বছরেই এসব নদী এখন ফসলের মাঠে পরিণত হয়েছে। চলছে চাষাবাদ।

স্থানীয়রা জানায়, নদী খননের আগে যা পানির প্রবাহ ছিল, খননের পরে উল্টো আরও কমেছে। শুধু টাকার অপচয়ই হয়েছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি এমন ক্ষোভ প্রকাশ করেন ৭০ বছর বয়সী মোজাম্মেল হক নামে এক জেলে। ওই জেলের ক্ষোভের প্রেক্ষিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) যুক্তি দিয়ে বলছে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এ এলাকার নদী ৬০ মিটার উঁচুতে থাকায় পানির প্রবাহ ধরে রাখা যাচ্ছে না।

পাউবোর তথ্য অনুযায়ী, জেলায় নদ-নদী আছে ১৪টি। যার দৈর্ঘ্য ২৯৬ কিলোমিটার। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি খালসহ সাতটি নদী খনন করে। ২০৪ কিলোমিটার পথের ৭টি নদী খননে ব্যয় হয়েছে ৮০ কোটি ৩ লাখ ৯ হাজার টাকা। খনন করা নদীগুলোর মধ্যে আছে লাচ্ছি, ভুল্লী, সুক, তীরনই, পাথরাজ, কুলিক ও টাঙ্গন নদী এবং যমুনা খাল।

প্রবীণদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলা শহরের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে টাঙ্গন ও সুক নদী। এ নদীর কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠে ঠাকুরগাঁও শহর। যাতায়াতের মাধ্যম ছিল এ নদী। তবে এখন জেলার প্রধান এই নদ-নদী দুটিতে ধান চাষ হচ্ছে।

এ নদী দুটির দুই কিলোমিটার অংশ ঘুরে দেখা গেছে, এতে ভুট্টা ও বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। নদীর অস্তিত্বই বোঝা যায় না।

সদর উপজেলার ফেরসাডাঙ্গী গ্রামের কৃষক সিদ্দিকুল বলেন, ‘টাঙ্গন নদীর পানি দিয়ে জমি আবাদ করতাম। এ আবাদের ফসল দিয়ে সংসার চলে। কিন্তু এবার টাঙ্গনে পানি নাই। এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি হামরা ।’

একই গ্রামের জব্বার আলী বলেন, ‘এক বছর হলো নদীটি খনন করার। অথচ এখনই শুকনো। পারের মানুষের লাভ না হলেও প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের লাভ হয়েছে।’

এদিকে সুক নদী সরেজমিনেও একই অবস্থা দেখা গেছে। সুক নদীর পাড়ের স্থানীয় বাসিন্দা কায়েস অভিযোগ করে বলেন, নদীটি নামে মাত্র খনন করা হয়েছে। খননযন্ত্র দিয়ে দায়সারাভাবে শুধু মাটি তুলে রাখা হয়েছে। খননের আগে যে পানি ছিল, এখন তাও নেই।

ওই এলাকার শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘৬ কোটি টাকায় নদটি খনন হয়েছে শুনেছি। কিন্তু বাস্তবে ২ কোটি টাকার কাজও হয়তো হয়নি।’

তার কথা কেড়ে নিয়ে জয়নব বেগম বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে নদীতে পানি থাকে না। ফলে গোসলসহ গৃহস্থালি কাজের পানির চরম সংকট হয়।

জেলার পরিবেশবাদী সংগঠন সৃজনের সভাপতি আব্দুল্লা আল মামুন বলেন, খরস্রোতা টাঙ্গনের সেই জৌলুশ এখন আর নেই। নদীর তলদেশ ভরাট হওয়ায় নদীর বুকে এখন ধান চাষসহ বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ করা হচ্ছে। বর্তমানে জেলার বেশির ভাগ নদী নাব্য হারিয়ে দখল ও দূষণে অস্তিত্ব সংকটের মধ্যে রয়েছে। পরিকল্পিতভাবে নদীগুলো খনন করা গেলে এর নাব্য আবারও ফিরে আসবে।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. গোলাম যাকারিয়া বলেন, খনন করা নদীতে পানি না থাকার কারণ হচ্ছে, এ জেলায় দিন দিন ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার বাড়ায় পানির স্তর নিচে চলে যাচ্ছে। জেলার চারটি সম্মিলিত নদীতে পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শেষ হলে নদীগুলোর পানি ধরে রেখে নিচে নেমে যাওয়া পানির স্তর কিছুটা হলেও ধরে রাখা যাবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দেশের বাইরে থেকেও স্কুল শিক্ষিকা তুলছেন বেতন, নিচ্ছেন সুযোগ-সুবিধা

আতাই নদীর বাঁধ ভেঙে অভয়নগরের দুই শতাধিক পরিবার পানিবন্দি

সিদ্ধিরগঞ্জে ৪ মাসে ৯ খুন

বেনাপোল বন্দরে চাঁদা আদায়ের অভিযোগে ৫৪ আনসার বদলি

শেখ হাসিনা রাজনীতিকে বিষাক্ত প্রাণীদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন : স্বপন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

পরশুরাম উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ঢাকায় গ্রেপ্তার

‘প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যানসার শনাক্ত হলে সম্পূর্ণরুপে নিরাময় সম্ভব’

চুরি, ডাকাতি ও হত্যার ঘটনায় আতঙ্কিত তারাগঞ্জবাসী

চৌদ্দগ্রামে মেম্বারকে শালিশে না ডাকায় নারীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ

১০

রংপুরের ঘটনায় দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি হিন্দু মহাজোটের

১১

জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শীর্ষস্থানে : যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত

১২

স্বামীর বিরুদ্ধে ‘বালিশ চাঁপা’ দিয়ে স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগ 

১৩

৩ বিভাগে ভারী বৃষ্টির আভাস

১৪

মাদ্রাসার সভাপতিকে বাদ দিতে সুপারের কাণ্ড

১৫

বিভাজন না করে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ গড়তে হবে : শিক্ষা উপদেষ্টা

১৬

শ্বশুরবাড়ির নির্যাতন সইতে না পেরে যুবকের আত্মহত্যার অভিযোগ

১৭

কাপ্তাই হ্রদ থেকে বালু উত্তোলন, জরিমানা

১৮

‘তারেক রহমানই গণঅভ্যুত্থানের মূল নায়ক’

১৯

গভীর সমুদ্রে মাছ আহরণে জোর দেওয়ার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

২০
X