নদীর নাব্য বৃদ্ধি ও শুষ্ক মৌসুমে পানির সহজলভ্যতা নিশ্চিতকরণে ঠাকুরগাঁওয়ে ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে সাতটি নদী এবং একটি খাল খনন করা হলেও কাঙ্ক্ষিত সুফল না পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। খননের এক থেকে দুই বছরেই এসব নদী এখন ফসলের মাঠে পরিণত হয়েছে। চলছে চাষাবাদ।
স্থানীয়রা জানায়, নদী খননের আগে যা পানির প্রবাহ ছিল, খননের পরে উল্টো আরও কমেছে। শুধু টাকার অপচয়ই হয়েছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি এমন ক্ষোভ প্রকাশ করেন ৭০ বছর বয়সী মোজাম্মেল হক নামে এক জেলে। ওই জেলের ক্ষোভের প্রেক্ষিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) যুক্তি দিয়ে বলছে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এ এলাকার নদী ৬০ মিটার উঁচুতে থাকায় পানির প্রবাহ ধরে রাখা যাচ্ছে না।
পাউবোর তথ্য অনুযায়ী, জেলায় নদ-নদী আছে ১৪টি। যার দৈর্ঘ্য ২৯৬ কিলোমিটার। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি খালসহ সাতটি নদী খনন করে। ২০৪ কিলোমিটার পথের ৭টি নদী খননে ব্যয় হয়েছে ৮০ কোটি ৩ লাখ ৯ হাজার টাকা। খনন করা নদীগুলোর মধ্যে আছে লাচ্ছি, ভুল্লী, সুক, তীরনই, পাথরাজ, কুলিক ও টাঙ্গন নদী এবং যমুনা খাল।
প্রবীণদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলা শহরের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে টাঙ্গন ও সুক নদী। এ নদীর কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠে ঠাকুরগাঁও শহর। যাতায়াতের মাধ্যম ছিল এ নদী। তবে এখন জেলার প্রধান এই নদ-নদী দুটিতে ধান চাষ হচ্ছে।
এ নদী দুটির দুই কিলোমিটার অংশ ঘুরে দেখা গেছে, এতে ভুট্টা ও বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। নদীর অস্তিত্বই বোঝা যায় না।
সদর উপজেলার ফেরসাডাঙ্গী গ্রামের কৃষক সিদ্দিকুল বলেন, ‘টাঙ্গন নদীর পানি দিয়ে জমি আবাদ করতাম। এ আবাদের ফসল দিয়ে সংসার চলে। কিন্তু এবার টাঙ্গনে পানি নাই। এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি হামরা ।’
একই গ্রামের জব্বার আলী বলেন, ‘এক বছর হলো নদীটি খনন করার। অথচ এখনই শুকনো। পারের মানুষের লাভ না হলেও প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের লাভ হয়েছে।’
এদিকে সুক নদী সরেজমিনেও একই অবস্থা দেখা গেছে। সুক নদীর পাড়ের স্থানীয় বাসিন্দা কায়েস অভিযোগ করে বলেন, নদীটি নামে মাত্র খনন করা হয়েছে। খননযন্ত্র দিয়ে দায়সারাভাবে শুধু মাটি তুলে রাখা হয়েছে। খননের আগে যে পানি ছিল, এখন তাও নেই।
ওই এলাকার শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘৬ কোটি টাকায় নদটি খনন হয়েছে শুনেছি। কিন্তু বাস্তবে ২ কোটি টাকার কাজও হয়তো হয়নি।’
তার কথা কেড়ে নিয়ে জয়নব বেগম বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে নদীতে পানি থাকে না। ফলে গোসলসহ গৃহস্থালি কাজের পানির চরম সংকট হয়।
জেলার পরিবেশবাদী সংগঠন সৃজনের সভাপতি আব্দুল্লা আল মামুন বলেন, খরস্রোতা টাঙ্গনের সেই জৌলুশ এখন আর নেই। নদীর তলদেশ ভরাট হওয়ায় নদীর বুকে এখন ধান চাষসহ বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ করা হচ্ছে। বর্তমানে জেলার বেশির ভাগ নদী নাব্য হারিয়ে দখল ও দূষণে অস্তিত্ব সংকটের মধ্যে রয়েছে। পরিকল্পিতভাবে নদীগুলো খনন করা গেলে এর নাব্য আবারও ফিরে আসবে।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. গোলাম যাকারিয়া বলেন, খনন করা নদীতে পানি না থাকার কারণ হচ্ছে, এ জেলায় দিন দিন ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার বাড়ায় পানির স্তর নিচে চলে যাচ্ছে। জেলার চারটি সম্মিলিত নদীতে পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শেষ হলে নদীগুলোর পানি ধরে রেখে নিচে নেমে যাওয়া পানির স্তর কিছুটা হলেও ধরে রাখা যাবে।
মন্তব্য করুন