ওয়াহিদুর রহমান রুবেল, কক্সবাজার
প্রকাশ : ০১ জুন ২০২৪, ০৯:১২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বারবার আগুন, নাশকতা নাকি দুর্ঘটনা

উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আগুনে পুড়ে গেছে ঘরবাড়ি। ছবি : কালবেলা
উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আগুনে পুড়ে গেছে ঘরবাড়ি। ছবি : কালবেলা

সপ্তাহের ব্যবধানে কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১৩ তে আবারও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুণ নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিট। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার আগে প্রায় দুই শতাধিক বসতি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। বারবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে নাশকতা বলে দাবি করেছেন সাধারণ রোহিঙ্গা ও স্থানীয়রা।

তাদের দাবি, ক্যাম্পে প্রভাব বিস্তার করতে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো পরিকল্পিতভাবে এই আগুন লাগাচ্ছে। অনেকে আবার আগুন লাগানোর ঘটনার সাথে বেশকিছু এনজিও সংস্থা জড়িত বলে দাবি করেছেন।

এদিকে আগুন লাগার ঘটনাটি পরিকল্পিত কি না- তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ৮ এপিবিএনর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আমির জাফর। তবে আগুনের সূত্রপাত নিয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস।

উখিয়া ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক কামাল হোসেন বলেন, ‘কীভাবে আগুনের সূত্রপাত তা এখনো বলা যাচ্ছে না। তদন্তের পর আগুন লাগার বিষয় ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বলা যাবে।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চারদিকে পাহাড় আর সরু রাস্তা। নেই পর্যাপ্ত পানির সরবরাহের ব্যবস্থা কিংবা পানির উৎস। এমন পরিস্থিতিতে আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। ফলে ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনা যাচ্ছে না।

সাধারণ রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, গেল ২৪ মে একই ক্যাম্পে দিনদুপুরে আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে প্রায় তিন শতাধিক বসতি। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ২ শতাধিক বসতি আর অর্ধ-শত দোকানপাট। সে ঘটনায় এখনো খোলা আকাশের নিচে দিনযাপন করছে সহস্রাধিক রোহিঙ্গা। এরইমধ্যে শনিবার (১ জুন) দুপুরে আবারও ক্যাম্প ১৩-তে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। নিয়ন্ত্রণে আসার আগে আগুনে পুড়ে গেছে প্রায় দুই শতাধিক বসতি। আংশিক ক্ষতি হয়েছে আরও অর্ধশত। বারবার আগুন লাগার ঘটনাকে রহস্যজনক বলে মনে করেন তারা।

তাদের অভিযোগ, আগুন লাগার ঘটনায় তদন্ত করা হলেও প্রকাশ্যে আসে না তদন্ত রিপোর্ট। আর অপরাধীদের চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হওয়ায় নাশকতার ঘটনা ঘটছে বারবার। যার ফল ভোগ করতে হচ্ছে সাধারণ রোহিঙ্গাদের।

তাদের দেওয়া তথ্য মতে, সম্প্রতি মিয়ানমারের অভ্যন্তরে আরকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সংঘাতের পর রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগঠন আরসা, আল ইয়াকিন, আরএসওসহ বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যরা ক্যাম্পে অবস্থান করছে। এরপর থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প দিন দিন উত্যপ্ত হয়ে ওঠে। ক্যাম্পে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ রাখতে খুনোখুনি পাশাপাশি নাশকতার চেষ্টা করছে তারা। এরইমধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে ভারি অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। এ সময় গ্রেপ্তার করা হয়েছে সংগঠনগুলোর অনেক সদস্যকে। এ অবস্থায় কম নিয়ন্ত্রণে থাকা ক্যাম্পে আগুন দিচ্ছে অপরাধীরা।

ক্যাম্প-১৩ বি-ব্লকের বাসিন্দা আব্দুর রশিদ বলেন, যে ক্যাম্পে সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণ নেই তারা সেখানে গিয়ে আগুন দিয়ে পালাচ্ছে। তারা ক্যাম্প নিয়ন্ত্রণে নিতে অপরাধ করছে। আর আমরা সাধারণ রোহিঙ্গারা কষ্ট পাচ্ছি।

রহিম উল্লাহ, আনাছ ও করিম উল্লাহ নামে অপর রোহিঙ্গারা বলেন, ক্যাম্পে অনেক গ্রুপ আছে। সন্ধ্যা হলেই পুরো ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে। এসব গ্রুপের সদস্যরাই অস্থিরতা তৈরি করতে ক্যাম্পে একের পর এক আগুন লাগাচ্ছে।

এদিকে শনিবার আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ইছহাক নামে এক রোহিঙ্গা বলেন, বসতি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কিছুই বের করতে পারেনি।

রহিম বলেন, আগুনে সবকিছু শেষ হয়ে গেল। ছোট বাচ্চাদের নিয়ে কি করব বুঝতে পারছি না।

তারা বলেন, কয়েক দিন আগের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখনো খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে কয়েক হাজার রোহিঙ্গারা। নেই পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা ও বিশুদ্ধ পানি। এখন আবারও আগুনের ঘটনায় আমাদের মনে আতংক তৈরি হয়েছে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা পরিবারগুলো খোলা আকাশের নিচে থাকবে না। যতদিন ক্ষতিগ্রস্ত বসতঘরগুলো তৈরি করা হচ্ছে না, ততদিন তারা আশপাশে তাদের নিকট আত্মীয়স্বজন ও বিভিন্ন সংস্থার সেল্টারগুলোতে অবস্থান করবে। খাবার নিয়ে এখনো কোনো সমস্যা তৈরি হয়নি। আশা করি, হবেও না। নাশকতার বিষয়টি শুনতে পাচ্ছি। বিষয়টি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করবে আশা করি।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা ৮ এপিবিএনের অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আমির জাফর বলেন, আগুন লাগার ঘটনা নাশকতা এ কথাটি আমাদের কানেও এসেছে। আমরা কথাটি একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছি না। বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা কাজ করছি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গণ্ডগোল শুরু হলে তার ছোঁয়া এপারেও লাগে। ওপারের অপরাধীরা গোপনে ক্যাম্পে আসেনি সেটি আমরা বলছি না। আমরা সব এজেন্সির সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছি। কোনো অবস্থায় অপরাধীদের ছাড় দেওয়া হবে না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইসির ইউটিউব চ্যানেল চালু, মিলবে যেসব তথ্য

শিশু ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ, গ্রেপ্তারের দাবি শিক্ষার্থী

চার বিভাগে ভারী বর্ষণের সতর্কতা জারি, পাহাড়ধসের আশঙ্কা

ভোলায় পাঁচ দিন ২০ নৌরুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ, ভোগান্তি চরমে

থানা ব্যারাকে নারী পুলিশ সদস্যকে ধর্ষণ, তিনজন ক্লোজড

পিআর পদ্ধতিতে সব ভোটারের মূল্যায়ন হয় : চরমোনাই পীর

তিস্তায় কার্টুন বক্সে ভাসছিল নবজাতকের মরদেহ

দেশের উন্নয়নে মেধাবী শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসতে হবে : চসিক মেয়র

কৃষক দল সম্পাদক বাবুলের মুক্তির দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল

চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের সতর্কবার্তা / ‘সাংবাদিকরা চুপ থাকলে সমাজ অন্ধকারে ডুবে যাবে’

১০

যেসব অনিয়মে বাতিল হবে এজেন্সির নিবন্ধন

১১

অবৈধ কার্যক্রম প্রতিরোধে সিলেট জেলা পুলিশ অঙ্গীকারবদ্ধ : পুলিশ সুপার

১২

বগুড়ায় সাহিত্য উৎসব শুক্রবার, অংশ নিবে দুই শতাধিক কবি

১৩

বিমানবন্দরে যাত্রী হয়রানি রোধে নতুন নির্দেশনা

১৪

জুলাই শহীদদের স্মরণে জবিতে গ্রিন ভয়েসের বৃক্ষরোপণ ও সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন

১৫

মার্কিন বিনিয়োগকৃত প্রতিষ্ঠানে রুশ হামলা

১৬

মালয়েশিয়ার পর চীন সফরে যাবেন নাহিদ

১৭

৩১ দফাই হচ্ছে আমাদের জাতীয় সনদ : সুব্রত চৌধুরী

১৮

টিসিবির নিয়ন্ত্রণ হারানো ট্রাকচাপায় বৃদ্ধ নিহত

১৯

ইতালির প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফর বাতিল

২০
X