‘৩৩ বছর কাটলে, কেউ কথা রাখেনি’। সুনীলের এই কবিতার মতো ৪০ বছর কাটলেও কথা রাখেননি জনপ্রতিনিধিরা। আশ্বাসের পর আশ্বাস মিললেও ঘর মেলেনি হালিমা বেগমের।
বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছে হালিমা বেগম। তার স্বামী ৩০ বছর আগে অন্যত্র বিয়ে করে সংসারি হয়েছেন। সন্তান-সন্তানাদি হয়নি তার। শরীরের গঠনও জীর্ণশীর্ণ। বয়স হয়েছে প্রায় ৬০ বছর। শেষ জীবনে একটু স্বচ্ছলতার আশায় ধরনা দিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে। চেয়েছেন বেঁচে থাকার জন্য একটি ঘর। আশ্বাস মিললেও এখনো জোটেনি কোনো বসবাস করার জন্য উপযুক্ত ঘর। তাই কোপাখুঁটির ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করছেন তিনি।
স্বামী সন্তান না থাকায় অন্যের অনুগ্রহে চলছেন তিনি। এ অবস্থায় হতদরিদ্র ওই নারীকে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। হালিমার বাড়ি পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার দৈহারী ইউনিয়নের কাঁটাদৈহারী গ্রামের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে।
এলাকাবাসীরা জানান, প্রায় ৪০ বছর যাবত এই ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করছেন হালিমা বেগম। তার স্বামী জবেদ আলী একে একে তিনটি বিয়ে করায় সংসার করা হয়নি তার। বৃদ্ধ বয়সে একা থাকেন তিনি। তার সংসারে কোনো পুরুষ সদস্য না থাকায় নিঃসন্তান হালিমা বেগমের জীবনে কষ্টের শেষ নেই। অন্যের বাড়ি পেটে ভাতে কাজ করে সংসার চালান তিনি। যেদিন কাজ করতে পারেন না সেদিন অনাহারে অর্ধাহারে থাকতে হয় তার।
রহিমা বেগম বলেন, ‘আগে ভিক্ষা কইরা খাইতাম, এখন আর কেউ ভিক্ষাও দেয় না। বহু কষ্টে আছি। এর মধ্যে খুব অসুস্থ হয়ে পড়ছি, ওষুধ কিইন্যা খাওয়া লাগে। চেয়ারম্যান-মেম্বাররার কাছে ভাতার কার্ডের লাইগ্যা কত্তবার গেছি, তার কুনু হিসাব নাই। তারা খালি কথা দিছে, কেউ কথা রাহে নাই। ভাঙা খুঁটির ঘরে থাকি। সরকার বাহাদুর কত মানুষেরে ঘর দিতাছে, প্রধানমন্ত্রী যদি একখানা ঘর দিত তাইলে শেষ জীবনে একটু বৃষ্টিতে না ভিজে থাকতে পারতাম।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য আলামিন হাওলাদার বলেন, হালিমা বেগম অসহায় ও হতদরিদ্র একজন মহিলা। তার অনেক আগেই ঘর পাওয়ার কথা ছিল। আমাদের এলাকার সবারই দাবি যে, হালিমা বেগম একটি ঘর পাক।
দৈহারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাহারুল ইসলাম বলেন, যারা ভূমিহীন তাদের প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপেরগুলো এখনো প্রক্রিয়াধীন। হালিমা বেগম যদি ভূমিহীন হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই তাকে ঘর দেওয়া হবে।
নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ৬০ বছর বয়সেও হতদরিদ্র ওই বৃদ্ধা যদি কোনো ভাতা ও থাকার ঘর না পেয়ে থাকে সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখব, তিনি যদি সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার যোগ্য হন অবশ্যই তাকে তার আওতায় আনা হবে।
মন্তব্য করুন