নওগাঁয় নাজিম উদ্দিন ফকির (৬২) নামের এক গ্রাম্য মাতব্বরকে হত্যার ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে সদর থানা পুলিশ।
মঙ্গলবার (১১ জুন) সন্ধ্যায় শহরের দপ্তরীপাড়া এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে লিশ।
গ্রেপ্তাররা হলেন- সদর উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের বিলভবানীপুর গ্রামের মৃত আব্দুস সামাদের ছেলে সুজাত আলী (৩২) ও রঘুনাথপুর গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে মেহেদি হাসান ( ২৮)।
এর আগে গত সোমবার (১০ জুন) রাত সাড়ে ১১ টার দিকে বিলভবানীপুর গ্রামে নিজ বাড়ির সামনে ছুরিকাঘাতে আহত হন তিনি। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
বুধবার (১২ জুন) দুপুরের দিকে নওগাঁ সদর মডেল থানা চত্বরে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিষয়টি জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. গাজিউর রহমান।
সংবাদ সম্মেলনে গাজিউর রহমান বলেন, গত সোমবার রাতে বিলভবানীপুর শুকুরের মোড় হতে নাজিম উদ্দিন ফকির মোটরসাইকেল নিয়ে বিলভবানীপুর মৎস্যজীবী পাড়ায় একলাস এর বাড়িতে স্থানীয় সালিশ দরবার করার জন্য যান। সালিশ দরবার শেষে বাড়ি ফেরার সময় রাতা ১২টার দিকে বাড়িতে প্রবেশ করার সময় আসামিরা ধারালো অস্ত্র ও হাতুড়ি দিয়ে বুকের নিচে ও বাম পাশে, মাঝখানে, পেটের বাম পাশে ও ডান পাশে এবং ডান বাহুতে আঘাত করে গুরুতর জখম করে। আহত ভিকটিমের ডাক-চিৎকার ও গোঙনির শব্দ শুনে বাড়ির ভিতর থেকে তার ছেলে, স্ত্রীসহ আত্মীয়স্বজন বের হয়ে তাকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখতে পান। পরে তাকে চিকিৎসার জন্য ভ্যানযোগে নওগাঁ সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
কী কারণে এমন হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক বছর পূর্বে স্থানীয় এক নাপিতকে মারধরের অপরাধে গ্রাম্য সালিশ বসিয়ে মাতব্বর নাজিম উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন মাতব্বর সুজাত আলীকে মারধর ও নগদ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। ওই গ্রাম্য শালিসে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি ক্ষিপ্ত ছিল নাজিমের উপর। তৈরি হয়েছিল শত্রুতা। সে রাগ পুষিয়ে রেখে বিয়ে না করেই অবিবাহিত থেকেই পরিকল্পনা করেন মাতব্বরকে হত্যা করার। এর পর সুজাতের বন্ধু মেহেদী হাসানকে নিয়ে এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি ও হাতুড়ি ক্রয় করে তাকে হত্যা করে। এ ছাড়া প্রায় ৬-৭ মাস আগে পারিবারিক জমি সংক্রান্ত বিষয়ে একটি আপোষ করেন নিহত নাজিমুদ্দিন।
এরপর হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি পুলিশ সুপার রাশিদুল হক স্যারের সার্বিক দিক নির্দেশনায় পুলিশের একটি চৌকস দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও তথ্য প্রযুক্তি এবং সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করার মাধ্যমে মঙ্গলবার শহরের দপ্তরীপাড়া এলাকা হতে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তাররা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পূর্বের রাগ ও ক্ষোভের জেরে দীর্ঘ পরিকল্পনার মাধ্যমে তারা নাজিম উদ্দিন ফকিরকে হত্যা করার বিষয়টি স্বীকার করে। তাদের দেয়া তথ্য মোতাবেক বিভিন্ন স্থান থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র চাকু ও ভাঙা হাতুড়ি উদ্ধার করে পুলিশ।
তিনি বলেন, আসামিদের আইনি প্রক্রিয়া শেষে আদালতে পাঠানো হবে। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কি না সেই বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য আদালতের কাছে আসামিদের রিমান্ডের আবেদন করা হবে। আরও তথ্য জানা যেতে পারে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা। আসামিরা যাতে শাস্তি পায় সেজন্য সকল তথ্য-প্রমান সংগ্রহ করা হয়েছে।
এসময় আরও উপস্থিতি ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ফৌজিয়া হাবিব খান, নওগাঁ সদর মডেল থানার ওসি জাহিদুল হক ও পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল গফুর।
মন্তব্য করুন