প্রতিদিন বিকাল হলেই দোকানের টেবিলের চারপাশে লেগে থাকে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন ভোজন রসিকরা। তাদের লক্ষ্য থাকে বিকেলে এসে বিভিন্ন ভর্তার মিশেলে আলু-পরোটা খাওয়া।
বিকেল হতেই ভোজন রসিকদের পদচারণায় জমে উঠে দিনাজপুর জেলার বিরামপুর রেলস্টেশনের দক্ষিণে অবস্থিত হোসেনে আরা বেওয়ার আলুপরোটা ও পেঁয়াজুর দোকান।
হোসেনে আরা বেওয়া পৌরসভার কাজীপাড়ার বাসিন্দা। প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা কিংবা ১০টা পর্যন্ত চলে কেনাবেচা। সুস্বাদু হওয়ায় আলুপরোটার দোকানটি বেশ পরিচিতি পেয়েছে। সেই সঙ্গে বিক্রিও হচ্ছে বেশ ভালো। প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে অনেক মানুষ এ দোকানে খেতে আসেন।
আলুপরোটার সঙ্গে হোসেনে আরা বেগম ক্রেতাদের প্লেটে তুলে দেন বাদাম, তিল, শর্ষে, কাঁচামরিচ, ধনিয়া, শসা ও শুঁটকিসহ পাঁচ মিশালি ভর্তা। দোকানের কাজে তাকে সহযোগিতা করেন তার নাতি রাব্বি হোসেন। আর যখন দোকানে ক্রেতার ভিড় বেড়ে যায় তখন হোসেনে আরার ছেলে শাহাবুদ্দিন দোকানে এসে তাদের সহযোগিতা করেন।
জানা গেছে, প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ৭০০-৮০০ আলুপরোটা বিক্রি করেন হোসেনে আরা বেগম। শুক্রবার বেশি আলুপরোটা বিক্রি হয়। প্রতিটি আলুপরোটার দাম ১৫ টাকা। আয় বাড়াতে আলুপরোটার পাশাপাশি কয়েক মাস ধরে দোকানে পেঁয়াজু বিক্রি করা হচ্ছে।
প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০টি পেঁয়াজু বিক্রি হয়। প্রতিটি পেঁয়াজুর দাম পাঁচ টাকা। এতে প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার টাকা বেশি বিক্রি হয়। আলুপরোটা বিক্রির আয়েই ছেলের বউ, দুই নাতি, নাতবউ, নাতিদের দুই ছেলেসহ আটজনের সংসার চলে।
আলুপরোটার দোকানে কাজের ফাঁকে জানতে চাইলে হোসেনে আরা বেগম কালবেলাকে বলেন, আলুপরোটা তৈরি ও সুস্বাদু করতে আদা, রসুন, মসলা, টেস্টি লবণ ও জিরা ব্যবহার করি। আলুপরোটা তৈরিতে প্রতিদিন আধা মণ আলু ও দেড়মণ আটা লাগে।
তিনি বলেন, প্রতিদিন সকালে বাড়িতে মেয়ে, দুই নাতবউ মিলে আলু, আটা ও বিভিন্ন ধরনের মসলা মেখে খামির তৈরি করেন। দুপুরে চার-পাঁচ প্রকারের ভর্তা তৈরি করেন। পরে বিকেলে দোকানে আলুপরোটা তৈরি করে বিক্রি করা হয়। প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮০০টি পরোটা বিক্রি হয়। পরোটা বিক্রির আয় দিয়েই চলে আমার সংসারের আটজনের ভরণপোষণ।
হোসেন আরা আরও বলেন, আমার স্বামী ইসরাইল হোসেন খুলনায় একটি জুটমিলে চাকরি করতেন। ১৯৭১ সালে পক্ষাঘাতগ্রস্ত (প্যারালাইসিস) হয়ে তিনি মারা যান। এর পর থেকে ছেলে আনোয়ার হোসেনকে নিয়েই চলে বেঁচে থাকার লড়াই। ছেলে বড় হলে বেঁচে থাকার অবলম্বন খুঁজে পাই। আমার কাছ থেকে ছেলেও আলুপরোটা বানানো শিখেছেন। লড়াই করে যাচ্ছি বলে আজ জমজমাট হয়েছে আমার আলুপরোটার ব্যবসা।
আলুপরোটা খেতে এসেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা এডুকেশন বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার। তিনি কালবেলাকে বলেন, আমি নানির বাড়িতে বেড়াতে এসে আলুপরোটার কথা শুনে খেতে এসেছি। খুব সুস্বাদু, খেতে মজাদার এ আলুপরোটা। বিশেষ করে এর সঙ্গে ভর্তা মিশিয়ে খেলে বেশি মজা লাগে।
দিওড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক মন্ডলের শ্বশুর আবু তাহের বলেন, দুই পিচ আলুপরোটা খেলাম, বেশ মজাদার ও সুস্বাদু। মাঝে মাঝে এখানে আলুপরোটা খেতে আসি।
বিরামপুরের পার্শ্ববর্তী উপজেলা নবাবগঞ্জ থেকে আসা আমরুজ্জামান বলেন, বিরামপুরে আলুপরোটা খেতে এসেছি। আলুপরোটার সঙ্গে বাদাম ভর্তা, মরিচের ভর্তা খেয়েছি, এখানকার আলুপরোটার স্বাদ অন্যরকম।
বিরামপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র বকুল হোসেন বলেন, হোসেন আরা বেগমের দোকানে আলুপরোটা খেতে শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষজন রেলস্টেশনে আসেন। এলাকায় তার আলুপরোটার বেশ সুনাম রয়েছে। হোসেনে আরা বেগম যদি পৌরসভা থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা চান, তাহলে তাকে সহযোগিতা করা হবে।
মন্তব্য করুন