দরজায় টোকা মারছে ঈদুল আজহা। সবাই ব্যস্ত সময় পার করছেন কোরবানির জন্য পশু ক্রয়ে। কিন্তু কোরবানি উপলক্ষে এখনো পশুর চামড়া সংগ্রহের প্রস্তুতি শুরু করেনি নওগাঁর চামড়া ব্যবসায়ীরা। কারণ ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে বছরের পর বছর পাওনা বকেয়া টাকা না পাওয়ার হতাশায় রয়েছে ব্যবসায়ীরা। ফলে চলতি বছর চামড়া ক্রয় নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ওই সকল চামড়া ব্যবসায়ীরা।
এ ছাড়া চামড়া প্রস্তুতির প্রধান উপকরণ লবণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় দুশ্চিন্তা বেড়েছে। চামড়া শিল্পকে রক্ষা করতে জেলাভিত্তিক চামড়া ব্যবসায়ীদের স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়াসহ সরকারের নজরদারি বাড়ানো গেলে আবারও ঘুরে দাঁড়াবে এই খাতটি- এমনটিই মনে করছেন উত্তরবঙ্গের চামড়ার অন্যতম মোকাম নওগাঁর ব্যবসায়ীরা।
ইতোমধ্যে সরকার এ বছর চামড়ার নতুন দাম নির্ধারণ করেছে। ঢাকায় প্রতি বর্গ ফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ৬০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। গতবারের তুলনায় খাসির কাঁচা চামড়ার দাম ২ থেকে ৫ টাকা বাড়িয়ে প্রতি বর্গফুট ২০ থেকে ২৫ টাকা এবং বকরির চামড়ার দাম ৬ টাকা বাড়িয়ে ১৮ থেকে ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
জেলায় প্রতি মৌসুমে চামড়া লবণজাত করতে প্রয়োজন হয় অন্তত ৩৫০ টন লবণ। যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৭৪ লাখ টাকা। কিন্তু বকেয়া টাকার পাশাপাশি লবণের দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। প্রতি বস্তায় লবণের দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। মোটা লবণের দাম ৯০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা। এতে চামড়া সংরক্ষণের খরচ বাড়বে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত ১৫০ জন চামড়া ব্যবসায়ী রয়েছেন। কয়েকজন ট্যানারি মালিকের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। সরকার চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিলেও ট্যানারি মালিকরা সে দামে কিনে না। সিন্ডিকেট থাকায় ব্যবসায়ীরা তাদের কাছে এক প্রকার জিম্মি। ২০০৮ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রায় ১০ কোটি টাকা বকেয়া পাওনা রয়েছে। এসব টাকা পেলে ঘুরে দাঁড়াবে চামড়া শিল্প। এ বছরও চামড়া কেনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা।
শ্রমিকরা জানান, জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৩০টি চামড়া গুদাম ছিল। যেখানে সারা বছর প্রায় শতাধিক শ্রমিকদের কর্মসংস্থান হয়েছিল। বর্তমানে রয়েছে ২টি গুদাম। যেখানে কাজ করেন ৫ জন। তবে কোরবানির মৌসুমে প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক কাজ করেন। চামড়া গুদামে কাজ করা অনেক কষ্টের হলেও সেই তুলনায় টাকা না পাওয়ার কারণে শ্রমিকরা ভিন্ন পেশায় চলে গেছে।
জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সাবেক সভাপতি আলাউদ্দিন খান বলেন, গত প্রায় ৫ বছরে ঢাকায় ব্যবসায়ীর কাছে আমার প্রায় ১২ লাখ টাকা বকেয়া পড়ে আছে। তাই পুঁজি হারিয়ে এখন দুর্বল হয়ে পড়েছি। কোরবানির সময় ধারদেনা করে চামড়া কিনতে হয়। কিন্তু ধারের টাকা আমরা পরিশোধ করতে পারি না। অপরদিকে ব্যবসায়ীরাও আমাদের টাকা আটকিয়ে রাখে। এভাবে আসলে ব্যবসা চলে না। প্রধানমন্ত্রীর নিকট অনুরোধ তিনি যেন চামড়া শিল্পের দিকে নজর দেন।
নওগাঁ জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি মো. মমতাজ হোসেন বলেন, গত বছর জেলায় গরু-মহিষ ও ছাগল-ভেড়াসহ প্রায় ১ লাখ ৬৫ হাজার পিস চামড়া প্রস্তুত করা হয়েছিল। যার বাজারদর প্রায় ৬ কোটি টাকা। এ বছরও একই পরিমাণ চামড়া কিনে প্রস্তুত করা হবে। গত ৫ বছরে (২০১৯-২৩ সাল) জেলার প্রায় ১৫০ জন চামড়া ব্যবসায়ী ট্যানারি মালিকদের নিকট প্রায় ৫ কোটি টাকা বকেয়া পাওনা রয়েছে। বকেয়া টাকা পাওয়া গেলে আবারও ব্যবসায়ীরা ঘুরে দাঁড়াবে। অনেক ব্যবসায়ী বকেয়া টাকা না পাওয়ার হুতাশে মারা গেছেন। অনেকেই সবকিছু হারিয়ে পথে বসেছে। তবে ২০২৩ সালের বকেয়া টাকার ১০-১৫ শতাংশ হারে পরিশোধ করা হচ্ছে। এই সামান্য টাকা দিয়ে আসলে তেমন কিছুই হবে না। আর এভাবে চলতে থাকলে চামড়া শিল্পে ধস নেমে আসবে।
মন্তব্য করুন