

চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁয় ডাকাতের উৎপাত, আছে ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও মাদককারবারিও। তাদের নিয়ন্ত্রণসহ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ ও অপরাধ দমনে রাজশাহী বিভাগে চলছে পুলিশের বিশেষ অভিযান ‘অপারেশন ফার্স্ট লাইট-২’।
গত বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) রাতভর চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁয় পুলিশ এই বিশেষ অভিযান চালিয়ে ৬৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এরমধ্যে ১১ জন চিহ্নিত ডাকাত। অভিযানে একটি রামদা, একটি লোহার ছুরি, চারটি হাসুয়া, ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত গাছ কাটার একটি ইলেকট্রিক করাত, ৮টি লোহার রড, ১০০ পিস ট্যাপেন্ডাডল, ৪৬লিচার চোলাই মদ, ২০ পিস ইয়াবা ও ৪৫০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, গত কয়েক মাস ধরেই চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁয় বেড়েছে ডাকাতের উৎপাত। তাদের উৎপাতে অতিষ্ঠ মানুষ। জনজীবনে স্বস্তি ফেরাতে বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে প্রায় একই সময়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলায় শুরু হয় পুলিশের এই বিশেষ অভিযান অপারেশন ফার্স্ট লাইট-২।
রাজশাহী রেঞ্জ পুলিশের নেতৃত্বে অভিযানে দুই জেলা এলাকায় আরআরএফ এবং সংশ্লিষ্ট জেলা মিলিয়ে ২৫০ জন পুলিশের ফোর্স অভিযান চালায়। এই দুই জেলার চিহ্নিত ডাকাত, অস্ত্র ও মাদক কারবারি ধরতে তাদের বাড়ি ও অপরাধ স্পটগুলোতে চলে চিরুনি অভিযান। অভিযানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা এলাকায় রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (প্রশাসন ও অর্থ) মো. শাহাব উদ্দীনের নেতৃত্বে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম ও রেঞ্জের পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ শাহজাহান মিয়াসহ ১২৫ জন অফিসার ফোর্স মোতায়েন ছিল। অপরদিকে নওগাঁ জেলা এলাকায় রাজশাহী রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্সের (আরআরএফ) কমান্ড্যান্ট (অতিরিক্ত ডিআইজি) দীন মোহাম্মদের নেতৃত্বে নওগাঁ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শফিউল সারোয়ার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপ্স) জয়ব্রত পাল, রাজশাহী রেঞ্জসহ ১২৫ জন অফিসার ফোর্স মোতায়েন ছিল।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার রেজাউল করিম রেজা বলেন, অভিযানে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৪১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। নওগাঁর জেলা পুলিশ জানায়, শতাধিক পুলিশ সদস্য রাতভর নওগাঁর পোরশা, নিয়ামতপুর ও সদর এলাকায় অভিযানে অংশ নেন। চোর-ডাকাত, অস্ত্র ব্যবসায়ী ও মাদক কারবারিদের পাশাপাশি বিভিন্ন মামলার পলাতক আসামিদের ধরতে বাড়ি-বাড়ি তল্লাশি, সড়কপথে চেকপোস্ট স্থাপন এবং অপরাধপ্রবণ এলাকায় বিশেষ নজরদারি বাড়ানো হয়।
অভিযানে পোরশা থানায় ১৪ জন, নিয়ামতপুর থানায় ৯ জন এবং নওগাঁ সদর থানা এলাকায় ২ জনসহ মোট ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে রয়েছে ৮ জন চিহ্নিত ডাকাত ও কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী। এ সময় দেশীয় অস্ত্র ও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মাদকদ্রব্যও উদ্ধার করা হয়।
নিয়ামতপুর ও পোরশা উপজেলার স্থানীয় বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই ও মাদক বিস্তার নিয়ে জনমনে উদ্বেগ দেখা দিয়েছিল। রাতভর অভিযান পরিচালনার ফলে মানুষের মনে স্বস্তি ফিরেছে। তারা আশা প্রকাশ করেন—অপরাধ দমনে এমন অভিযান নিয়মিত হলে পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক হবে।
পোরশা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, পোরশা এলাকায় সম্প্রতি বেশ কয়েকটি চুরি-ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এসব মামলার আসামি ছাড়াও মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে আমরা বিশেষ নজরদারি চালাচ্ছি। অপারেশন ফার্স্ট লাইট এখনো চলছে; গ্রেপ্তারের সংখ্যা বাড়তে পারে।
নিয়ামতপুর থানার ওসি মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, রাতভর ও ভোরে একাধিক স্থানে অভিযান হয়েছে। বেশ কয়েকজন পলাতক আসামি ও মাদক ব্যবসায়ীকে ধরা গেছে। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছি।
নওগাঁর পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ শফিউল সারোয়ার বলেন, পোরশা-নিয়ামতপুর এলাকায় সাম্প্রতিক চুরি-ডাকাতির ঘটনা এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমরা এই বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছি। অপরাধী যেই হোক, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। পুরো জেলার নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে।
তিনি আরও বলেন, অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই চলছে। প্রয়োজন হলে আরও বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
এ বিষয়ে রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ও অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে পর্যায়ক্রমে পুরো বিভাগজুড়ে এ অভিযান চলবে।
উল্লেখ্য, গত ৯ নভেম্বর পদ্মার চরে পুলিশ, র্যাব ও এপিবিএন সদস্যরা অপারেশন ফার্স্ট লাইট পরিচালনা করে ৬৭ জনকে আটক করেছিল।
মন্তব্য করুন