সিলেট ব্যুরো
প্রকাশ : ১৮ জুন ২০২৪, ১১:২১ পিএম
আপডেট : ১৯ জুন ২০২৪, ০৭:১৫ এএম
অনলাইন সংস্করণ

বন্যায় আক্রান্ত সিলেট, পানি বন্দী দুই লাখ মানুষ

সিলেটে ঘরের ভেতরে বন্যার পানি। ছবি : কালবেলা
সিলেটে ঘরের ভেতরে বন্যার পানি। ছবি : কালবেলা

২০ দিনের মাথায় দ্বিতীয় দফা বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে সিলেট। টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে সিলেটে চলমান দ্বিতীয় দফা বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ফের বাড়ছে নদ-নদীর পানি। পানিবন্দি হয়েছেন দুই লাখের বেশি মানুষ।

মঙ্গলবার (১৮ জুন) বিকেল পর্যন্ত ৪টি নদীর পানি ৬ পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেট নগরীতে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্ট হওয়া বাতিল করা হয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি।

রোববার (১৬ জুন) মধ্যরাত থেকে সিলেটে ঝরতে শুরু করে ভারী বৃষ্টি। সঙ্গে নামতে থাকে উজানের ঢল। ফলে সোমবার সকালের মধ্যেই প্রায় সকল উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়। এ ছাড়া সিলেট মহানগরের অধিকাংশ এলাকা হয় প্লাবিত। অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান সড়ক তলিয়ে গেছে পানিতে।

জানা যায়, মহানগরীর সব নীচু এলাকা পানিতে নিমজ্জিত। বিশেষ করে শাহজালাল উপশহর প্রায় পুরোটাই পানির নিচে। অনেকের বাসার নিচতলায় গলা পর্যন্ত পানি। এ ছাড়া যতরপুর, মেন্দিবাগ, শিবগঞ্জ, রায়নগর, সোবহানীঘাট, কালিঘাট, কামালগড়, মাছিমপুর, তালতলা, জামতলা, কাজিরবাজার, মাদিনা মার্কেট, আখালিয়া ও মেজরটিলাসহ মহানগরের অধিকাংশ এলাকা বন্যা কবলিত। এ ছাড়া মহানগরের মধ্যে অনেক প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কে পানি রয়েছে। দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর রোডসহ বিভিন্ন সড়কের বেশ কয়েকটি স্থান পানির নিচে।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, সোমবার দুপুর ১২টায় সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৩৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। একই নদীর সিলেট পয়েন্টে ২৪ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। জকিগঞ্জের কুশিয়ারা নদীর অমলসীদ পয়েন্টে ২৭ সেন্টিমিটার ও একই নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৮০ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সারি নদীর পানি সারিঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ও সারি গোয়াইন নদীর পানি গোয়াইনঘাট পয়েন্টে ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসেন জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টায়) সিলেটে ১৫৩ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে ও সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৪৪মিলি মিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১২ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। দুপুর ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

এদিকে, দ্বিতীয় দফায় বন্যা পানিতে ডুবে গেছে সিলেট নগরীর তালতলাস্থ সিলেট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কার্যালয়। ইতোমধ্যে বন্যার পানি ফায়ার সার্ভিসের ব্যারাকেও উঠে গেছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট জেলা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশনের উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুর রহমান বলেন, রোববার রাত থেকে ফায়ার স্টেশনে পানি প্রবেশ শুরু হয়। সোমবার বিকেল পর্যন্ত পানি কিছুটা কম থাকায় গাড়িগুলো স্টেশনের সামনে উঁচু স্থানে রাখা হয়েছে। কিন্তু আজ সকাল থেকে পানি বৃদ্ধি পাওয়াতে কিছু গাড়ি আলমপুরস্থ স্টেশনে নিয়ে রাখা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, যত সময় যাচ্ছে পানি বাড়ছে। স্টেশনে আমাদের লোকজন যেসব কক্ষে থাকতো সেগুলোগুলোতে পানি প্রবেশ করে হাঁটু সমান হয়ে গেছে। কিছু যন্ত্রপাতি দ্বিতায় তলায় তুলে রাখা হয়েছে আর কিছু যন্ত্রপাতি বাইরে নিয়ে আসা হয়েছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি পেলে গাড়ি ও ফাইটারদের শহরের অন্য কোথায় থাকার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

অপরদিকে, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জসহ কয়েকটি উপজেলার গ্রামীণ অনেক রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অনেক কৃষিজমির ফসল তলিয়ে গেছে, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। ঈদের দিন বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়ায় সিলেট মহানগরের কোরবানিদাতারা পড়েন বেশ বিপাকে। অনেকে ভোগান্তির সঙ্গে সোমবার পশু কোরবানি করেছেন। অনেকে অপেক্ষা করেছিলেন পানি কমার। কিন্তু আজ সকাল থেকে নগরীতে আরও পানি বাড়ায় তারাও পড়েছেন বিপাকে।

বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্ট হওয়ায় সিলেট সিটি করপোরেশনের কয়েকটি ওয়ার্ডে খোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র। এসব আশ্রয়কেন্দ্র ও বন্যা কবলিত বিভিন্ন পরিদর্শন করেছেন সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।

মঙ্গলবার (১৮ জুন) দুপুর ১টায় সিটি করপোরেশনের ২৬, ২৮ ও ২৯ নং ওয়ার্ডের আশ্রয়কেন্দ্রেগুলোতে যান সিসিক মেয়র। এ সময় তিনি কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মানুষের খোঁজ খবর নেন ও বন্যা দুর্গতদের জন্য সিসিকের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এ সময় স্থানীয় কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, বৃষ্টির মধ্যেও গতকাল আমরা সুন্দরভাবে ঈদ পালন করতে পেরেছি। কিন্তু আজ সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে আমাদের ২৬, ২৮ ও ২৯নং ওয়ার্ড এলাকায় পানি উঠেছে। ইতোমধ্যে আমাদের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করেছি। বন্যা পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবেলা করা যায় তার জন্য জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনার ও ১৭ পদাতিক ডিভিশনের মেজরের সঙ্গে আমি যোগাযোগ করেছি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

হংকংয়ের আগুন নিয়ন্ত্রণে, নিহত অন্তত ৯৪

শুষ্ক আবহাওয়ায় ঢাকায় তাপমাত্রা নেমে ১৮ ডিগ্রিতে

ভূমিকম্পের ‘উচ্চ ঝুঁকিতে’ মধুপুর ফল্ট, শঙ্কিত টাঙ্গাইলবাসী

২৮ নভেম্বর : ইতিহাসের এই দিনে যা ঘটেছিল

ওয়াশিংটনে গুলিবর্ষণ, নিহত ন্যাশনাল গার্ড সদস্য

আজ টানা ৯ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না যেসব এলাকায়

পাকিস্তানিদের ভিসা দিচ্ছে না আমিরাত, কিন্তু কেন?

বিএনপি প্রার্থীর বহরে থাকা গাড়িতে আগুন, দগ্ধ ৪

শুক্রবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

২৮ নভেম্বর : আজকের নামাজের সময়সূচি

১০

চলন্ত বাসের খোলা লকারের ধাক্কায় যুবক নিহত

১১

৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ

১২

পাবনায় নির্বাচনী প্রচারণায় জামায়াতের হামলার তীব্র নিন্দা বিএনপির

১৩

পুষ্টিগুণে ভরপুর রোজেল পানীয়

১৪

প্রশাসন ও গণমাধ্যম একে অপরের পরিপূরক : ডিসি অন্নপূর্ণা

১৫

রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা

১৬

আ.লীগ নেতা মুকুল গ্রেপ্তার

১৭

বন্ধুদের নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার পথে প্রাণ গেল কলেজছাত্রের

১৮

দলের প্রশ্নে আমরা সবাই এক : নজরুল ইসলাম আজাদ

১৯

নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে ৬০ লাখ টাকা মু‌ক্তিপণ দাবি

২০
X