সিলেট ব্যুরো
প্রকাশ : ২১ জুন ২০২৪, ০৮:৫৮ পিএম
আপডেট : ২১ জুন ২০২৪, ১০:২৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
সিলেটে বন্যা

পানিবন্দি ১০ লাখ মানুষ, আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছায়নি পর্যাপ্ত ত্রাণ

সিলেটে দ্বিতীয় দফায় বন্যা। ছবি : কালবেলা
সিলেটে দ্বিতীয় দফায় বন্যা। ছবি : কালবেলা

টানা বৃষ্টি অতিবর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে বিপর্যস্ত সিলেটে দেখা মিলেছে রোদের। প্রায় ৫ দিন পর রৌদ্রোজ্জ্বল সকালে মানুষের মনে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে। এদিকে সিলেটের বেশ কয়েকটি নদ-নদীর পানি বিভিন্ন পয়েন্টে কমেছে। ফলে বিভিন্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।

দ্বিতীয় দফার বন্যায় সিলেটে ১০ লাখ ৪৩ হাজার ১৬১ জন মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। এর মধ্যে নগরীতে বন্যা আক্রান্ত হয়েছেন ৬০ হাজার মানুষ। বন্যার পানিতে ভোগান্তিতে পড়েছেন মানুষ। বন্যার পানিতে গোসল করতে নেমে মুক্তিরচক এলাকায় অভি (১৭) নামের এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় বন্যাকবলিত প্রায় ৫ হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন। ৪২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। এর মধ্যে ৩৮টি কেন্দ্রে লোকজন আশ্রয় নিয়েছেন। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছায়নি বলে অভিযোগ করেছেন আশ্রয় নেওয়া মানুষজন।

পানিবন্দিদের পাশে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন রাজনীতি দল ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা বন্যাকবলিত মানুষদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী ও রান্না করা খাবার বিতরণ করছে। বন্যায় এখন ১০ থেকে ১২ হাজার গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি যে কোনো পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের পাশে থাকার জন্য এ অঞ্চলের সব বিদ্যুৎকর্মীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

শুক্রবার (২১ মে) সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দেওয়া তথ্যমতে, সিলেটের প্রধান দুটি নদী সুরমা ও কুশিয়ারার কয়েকটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও আগে থেকে অনেকটা কমেছে পানি।

দুপুরে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানায়, সিলেট নগরীর ২৯টি ওয়ার্ডসহ ১৩টি উপজেলায় ১০ লাখ ৪৩ হাজার ১৬১জন মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। এর মধ্যে সিলেট নগরীর ৪২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৯টি ওয়ার্ডের ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। ৭১৩টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে আশ্রয় নিয়েছেন ২৮ হাজার ৯২৫জন। ১৩টি উপজেলায় ১৫৫২টি গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, গোলাপগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, বিশ্বনাথ ওসমানী নগর।

এদিকে, পাঁচ দিন পর শুক্রবার সকালে সিলেটের আকাশে সূর্যের দেখা মিলেছে। বিভিন্ন এলাকায় রোদ উঠতে দেখা গেছে। এতে জনজীবনে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে।

অন্যদিকে, কোম্পানীগঞ্জ থানা সদর সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কাঠালবাড়ী, আশ্রয়ণ প্রকল্প ও বুড়দেও গ্রামের মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।

কাঠালবাড়ী আশ্রয়ণ প্রকল্পের মো. রফিক আহমদ বলেন, আমরা ১৬টি পরিবার ঈদের দিন এখানে আশ্রয় নিয়েছিলাম। সেদিন রাতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০ কেজি চালসহ কিছু খাবারের জিনিস দিয়েছিল। এরপর দিন মঙ্গলবার উপজেলা চেয়ারম্যান মজির উদ্দিন এসে চিড়া মুড়ি গুড় দিয়ে গিয়েছিলেন আর কিছু দেওয়া হয়নি। বুধবার থেকে কিছু না পাওয়ায় খুব কষ্টে দিন পার করতেছি।

ছফিনা বেগম কালবেলাকে বলেন, পরিবারের ৭ জন মানুষ নিয়ে আমরা মঙ্গলবার এখানে এসেছি। সেদিন কিছু চিড়া-মুড়ি গুড় পেয়েছিলাম। আর কিছু পাইনি। বাচ্চাদের জন্যও কিছুই দেওয়া হয়নি।

এদিকে ৬টি ইউনিয়নের জন্য ১১ জন ট্যাগ অফিসার রয়েছেন। তারা কেউ এখনো ত্রাণ বিতরণে যাননি। তাদের ২-৩ জন ছাড়া আর কেউ চেয়ারম্যানদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেননি।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজীব হোসাইন জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ২০ মিলিমিটার। গতকাল দুপুর থেকে কোনো বৃষ্টিপাত হয়নি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য মতে, শুক্রবার দুপুর ১২টায় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৮ সেন্টিমিটার ও সিলেট পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর অমলসীদ পয়েন্টে ৫৫ সেন্টিমিটার ও শেওলা পয়েন্টে পানি ৫ সেন্টিমিটার এবং একই নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ১০৩ ও শেরপুর পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

আশ্রয়কেন্দ্রে থেকেও পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছে না এ বিষয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান কালবেলাকে বলেন, বন্যা আসার পর থেকে আমি কোম্পানীগঞ্জ তিন থেকে চার বার গিয়েছে। আজও এখন কোম্পানীগঞ্জ থেকে ফিরছি। এমন বক্তব্য ও বিষয় হওয়ার কথা না। আপনি যে আশ্রয়কেন্দ্রের কথা বললেন আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বলছি এ বিষয়ে যাচাই করে দেখার জন্য। এমন ধরনের ঘটনা যদি ঘটে সেখানে খাবার না পাওয়ার কথা না। আমরা প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্রে টাচ করছি। পানিবন্দি যারা বাড়ি থেকে আসে নাই যারা, তাদের আমরা খাবার পৌঁছানোর ব্যবস্থা করছি। পর্যায়ক্রমে সব মোটামুটি প্রয়োজন-চাহিদা অনুসারে দেওয়া হচ্ছে। পরিবার প্রতি ১০ কেজি চাল, শুকনো খাবারের প্যাকেট, আজকেও রান্না করা খাবার বিতরণ করে আসলাম ২টা জায়গায়। আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পুলিশ সদস্যদের হামলা ও অপদস্তের প্রতিবাদ দুই সংগঠনের 

ফুটপাতে পাওয়া সেই নবজাতককে নিতে চান ২৩ দম্পতি

আগামী বছর থেকে ফুটবল ক্যালেন্ডারে আসছে বড় পরিবর্তন

ট্রাম্পের জন্মদিনে হোয়াইট হাউসে ইতিহাস রচনা করবে ইউএফসি লড়াই

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষা সংস্কার কমিশন করা হবে : তারেক রহমান

আধুনিক যন্ত্রেই নিশ্চিত হবে নিরাপদ খাদ্য : মেয়র শাহাদাত

শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচন স্থগিত

একযোগে গণঅধিকার পরিষদের ৩৬ নেতার পদত্যাগ

মেঘনা নদীতে নৌযানে চাঁদাবাজি, সংঘর্ষে পুলিশসহ আহত ৫

ইরাক থেকে প্রচুর তেল নিচ্ছে চীন-ভারত

১০

‘রোহিত-বিরাটের বিদায়ের পিছনে দায় গম্ভীরের’

১১

৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ, এনবিআরের সদস্য বেলালের নামে দুদকের মামলা

১২

ঢাকার আদালতে ১৩৫ কোটি টাকার মাদক ধ্বংস

১৩

আ.লীগ নেতার হিমাগারে সেফটিপিন ফুটিয়ে তিন ভাইবোনকে নির্যাতন

১৪

ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচনে সরকারের হস্তক্ষেপের প্রমাণ আছে : আমিনুল হক

১৫

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসএসএফ স্টাফ কারাগারে

১৬

ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে কাজের সুযোগ, আবেদন যেভাবে

১৭

পাকিস্তানের কাছে উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রির অনুমোদন যুক্তরাষ্ট্রের

১৮

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৭৮ রানে অলআউট বাংলাদেশ

১৯

সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

২০
X