জনপ্রিয় মোবাইল আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান নগদ বিক্রির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) যে পদক্ষেপ শুরু করেছে সেটি স্থগিত করেছে সুপ্রিম কোর্ট।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ আদালতের বিচারপতি মো. রেজাউল হক এ-সংক্রান্ত একটি রায় দিয়েছেন।
রায়ে বলা হয়েছে, নগদে প্রশাসক নিয়োগের বৈধতা মামলার শুনানি না হওয়া পর্যন্ত এ সম্পর্কিত কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা সরকারের হাতে নেই। আগামী ২৬ অক্টোবর প্রশাসক নিয়োগের বৈধতার শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
বিডা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের এই প্রক্রিয়াকে অবৈধ ঘোষণার ফলে নগদ বিক্রি বা নগদে বিনিয়োগ নেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্থগিত হয়ে যাবে। সাধারণ মানুষ ও বিনিয়োগকারীদের চোখ এখন আদালতের পরবর্তী শুনানির দিকে।
অর্থনীতি পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এটি সরকারের জন্য কেবল একটি আইনি ধাক্কা নয় বরং নীতিনির্ধারণী ব্যর্থতারও প্রতিফলন। ‘সুপ্রিম কোর্ট দেখিয়ে দিল, আইনই চূড়ান্ত কথা। ক্ষমতার জোরে অর্থনীতি চালানো যাবে না’ বলে মন্তব্য করেন এক বিশ্লেষক।
এদিকে, নগদ ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আদালতের এই রায়কে স্বাগত জানাচ্ছেন। অনেকে লিখেছেন, জনগণের টাকা নিয়ে সরকারের খেলা থামিয়ে দিলেন আদালত।
অতএব, আপাতত সরকারের হাতে নগদ নিয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নেই। সবকিছু নির্ভর করছে পরবর্তী শুনানির ওপর।
চেম্বার জজের এই রায় বিষয়ে নগদের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার মুহাম্মদ নওশাদ জমির বলেন, প্রতিষ্ঠানের মালিকানা এবং পরিচালনা সম্পর্কিত জটিলতা যেখানে শেষ হয়নি সেখানে অবৈধ দখলদার সংস্থা কীভাবে এটি বিক্রির পাঁয়তারা করে? বিজ্ঞ আদালত আমাদের আর্জি শুনে একটি অবৈধ প্রক্রিয়াকে অবৈধ হিসেবেই ঘোষণা করেছেন।
বৃহস্পতিবারের (১১ সেপ্টেম্বর) শুনানিতে সরকারের পক্ষে অংশ নেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনিক আর হক। নগদের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ব্যারিস্টার মুহাম্মদ জমিরউদ্দিন সরকার, অ্যাডভোকেট জায়নুল আবেদিন, ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমান খান, ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, কায়সার কামাল, অ্যাডভোকেট জিয়াউর রহমান এবং অ্যাডভোকেট মো. জামিলুর রহমান।
চেম্বার জজের রায় বিষয়ে নগদের নির্বাহী পরিচালক নিয়াজ মোর্শেদ এলিট বলেন, বেশ কিছুদিন ধরেই নগদকে ধ্বংস করার জন্যে একটি মহল চক্রান্ত করছে। আমরা লক্ষ্য করছি সরকারের অনেক পদস্থ ব্যক্তিরা এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িয়ে গেছেন। তিলতিল করে আমাদের গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠান তারা ধ্বংস করতে না পেরে এখন বিনিয়োগের নামে বিক্রি করে দেওয়ার পায়তারা করছে। বিজ্ঞ আদালত বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছেন বলে আমরা মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানাই।
গত ৩১ আগস্ট নগদ এর জন্য কৌশলগত অংশীদার খোঁজার জন্যে বিডা সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেয়। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য একটি আর্থিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের উদ্যোগ নেয় তারা। ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিডা কার্যালয়ে এ-সংক্রান্ত আবেদন জমা দিতে বলা হয়। বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে নগদের নির্বাহী পরিচালক মো. সাফায়েত আলম আদালতের দ্বারস্থ হলে বৃহস্পতিবার চেম্বার জজ তার রায়ে এ-সংক্রান্ত সকল প্রক্রিয়া স্থগিত করল।
মন্তব্য করুন