গত বছরের ৫ আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। প্রথম দিকে খারাপ লাগা ও মন খারাপ লাগার বিষয়ে প্রায় আদালতে গণমাধ্যমকে জানাতেন তিনি। তবে এখন বন্দি থেকে আর মন খারাপ হয় না পলকের। মানিয়ে নিয়েছেন কারাগার। আগামী সংসদ নির্বাচনে ভোটেও লড়তে চান বলে জানিয়েছেন পলক।
বুধবার (০৮ অক্টোবর) ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন তিনি।
এদিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয় বাংলাদেশ ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী, গাজী গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম দস্তগীর গাজী ও সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলককে। এরপর হাজতখানায় রাখা হয়। পরে সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটের দিকে হাজতখানা থেকে পুলিশের কঠোর নিরাপত্তায় প্রত্যেকের মাথায় হেলমেট, বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পড়িয়ে এজলাসে ওঠানো হয়।
এজলাসে ওঠানোর সময় সাংবাদিকদের উদ্দেশে পলক বলেন, সব কিছুরই শেষ আছে। এ সময় এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, সামনে তো নির্বাচন? আপনি কি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবেন। এই কথা শুনে ‘হ্যাঁ’ সূচক মাথা নাড়ান তিনি। এরপর আবারও পলক বলেন, সব কিছুরই শেষ আছে। পরে পুলিশ তাদের সিএমএম আদালতের ৫ তলার এজলাসে ওঠান। এরপর তাদের কাঠগড়ার ভেতর নেওয়া হয়। সেখান দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য তাদের মাথার হেলমেট, বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট খুলে দেন।
কাঠগড়ায় সামনের দিকে গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, পাশে ছিলেন জুনায়েদ আহমেদ পলক, রাশেদ খান মেনন ও আতিকুল ইসলাম। এ সময় তাদের আইনজীবীদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতে থাকেন।
এ সময় পলক তার আইনজীবীকে বলেন, আমি ভালো আছি। মানসিকভাবে শক্ত আছি। মন থেকে উজ্জীবিত রয়েছি। আগে মন খারাপ থাকলেও এখন আর মন খারাপ হয় না। নিজেকে মানিয়ে নিয়েছি। এই সংবাদ পলকের বাড়িতে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করেন।
পরে সকাল ১১টা ৮ মিনিটে বিচারক এজলাসে ওঠেন। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বনানী থানার উপপরিদর্শক মো. ইয়াছির আরাফাত তাদের জুলাই আন্দোলনে রাজধানীর বনানী থানায় মো. শাহজাহান নামে এক ব্যক্তি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন। পরে পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদেকুর রহমানের আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর আবারও তাদের তাদের মাথায় হেলমেট, বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পড়িয়ে এজলাসে থেকে হাজতখানায় নেওয়া হয়।
পলকের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম (সাইফ) জানান, তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে ভালো এই সংবাদ তার বাড়িতে জানাতে বলেছেন। জেলখানায় যে সুবিধা পাওয়া কথা সেটা তিনি পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন। কিছুদিন আগে আ.লীগের এক নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এই বিষয় তিনি ভীতিগ্রস্ত হলেও, এখন মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সব কিছুতেই নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন পলক।
মামলার অভিযোগে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৯ জুলাই ঢাকার এক কারখানার কর্মী মো. শাহজাহান বনানী থানাধীন মহাখালী ফ্লাইওভারের নিচে শান্তিপূর্ণ মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিলে দেশিয় অস্ত্রসহ আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলিবর্ষণ করে। এ সময় ভিকটিম শাহজাহান বুকে ও পেটে দুইটি গুলিবিদ্ধ হন। চারদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় গত ১৮ ডিসেম্বর ভিকটিমের মা সাজেদা বনানী থানায় ৯৭ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মন্তব্য করুন