

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা হবে কিছুক্ষণের মধ্যেই। রায় শুনতে ট্রাইব্যুনাল চত্বরে ব্যানার-পোস্টার নিয়ে হাজির হয়েছেন বেশকিছু শহীদ পরিবারের সদস্য। যাদের নির্দেশে তাদের স্বজনদের হত্যা করা হয়েছে, তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রত্যাশা।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করবেন।
এদিন সকালেই রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে হাজির করা হয়েছে ট্রাইব্যুনালে। ঐতিহাসিক এই রায় ঘোষণা সরাসরি সম্প্রচার করবে বিটিভি ও বার্তা সংস্থা রয়টার্স। শেখ হাসিনা ছাড়াও আলোচিত এ মামলার অপর আসামি হলেন—সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
ট্রাইব্যুনাল চত্বরে কান্নাজড়িত কণ্ঠে শহীদ মারুফের বাবা বলেন, আমরা ট্রাইব্যুনালের ওপর নিরাশ হয়ে গেছিলাম, কবে রায় পাব! একপর্যায়ে একটা সুসংবাদ আসছে আমাদের শহীদ পরিবারের সামনে—শেখ হাসিনার রায় আজ। রায় শুনতে আসছি, কী হয়। এই স্বৈরাচারী সরকার আমার ছেলেকে হত্যা করেছে, এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
আরেক শহীদ হাফিজুর রহমানের বাবা আবুবকর সিকদার বলেন, আমার ছেলে চব্বিশের ২০ জুলাই শহীদ হয়েছে। আমার ছেলে অটোরিকশা চালাত। রিকশা চালানো অবস্থায় পুলিশের গুলিতে মারা গেছে। আমি আজ ট্রাইব্যুনালে এসেছি শেখ হাসিনার ফাঁসির রায় শুনতে।
গত ১৩ নভেম্বর এ মামলার রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিন ধার্য করা হয়। ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ দিন নির্ধারণ করেন।
শেখ হাসিনার এ মামলায় মোট ২৮ কার্যদিবসে ৫৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা শেষ হয়। আর ৯ কার্যদিনে চলে প্রসিকিউশন-স্টেট ডিফেন্সের যুক্তিতর্ক পাল্টা যুক্তিখণ্ডন। ২৩ অক্টোবর রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানের সমাপনী বক্তব্য এবং চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেনের যুক্তিখণ্ডন শেষে রায়ের তারিখ নির্ধারণে সময় দেওয়া হয়।
যুক্তিতর্কে শেখ হাসিনা ও কামালের সর্বোচ্চ সাজা চেয়েছে প্রসিকিউশন। তবে রাজসাক্ষী হওয়ায় মামলার অন্যতম আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের ব্যাপারে ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। যদিও তার খালাস চেয়েছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
এ মামলায় তিন আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। এর মধ্যে রয়েছে উসকানি, মারণাস্ত্র ব্যবহার, আবু সাঈদ হত্যা, চানখাঁরপুলে হত্যা ও আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানো। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র ২ হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দ তালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি ৪ হাজার ৫ পৃষ্ঠার ও শহীদদের তালিকার বিবরণ ২ হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার। সাক্ষী করা হয়েছে ৮৪ জনকে। গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে এ মামলার প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
মন্তব্য করুন