রবিবার, ২৫ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০২৪, ০১:৩৮ পিএম
আপডেট : ১৮ মার্চ ২০২৪, ০২:৩৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ড. ইউনূসকে দোষী সাব্যস্তকরণ আদেশ স্থগিতের সিদ্ধান্ত অবৈধ : হাইকোর্ট

ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পুরোনো ছবি
ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পুরোনো ছবি

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ গ্রামীণ টেলিকমের চার শীর্ষ কর্মকর্তাকে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে দোষী সাব্যস্তকরণ আদেশ (কনভিকশন অর্ডার) স্থগিত করে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তকে অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।

হাইকোর্ট বলেছেন, কোনো মামলায় জামিন দেওয়া মানেই সেনটেন্স (দণ্ড) স্থগিত হয়ে যাওয়া। আর কনভিকশন (দোষী সাব্যস্তকরণ) কখনও সাসপেন্ড (স্থগিত) করা যায় না। এ মামলার আসামিদের কনভিকশন স্থগিত করে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্ত ছিল অবৈধ। তাদের কনভিকশন চলমান থাকবে। তবে তাদের ছয় মাসের সাজা, অর্থদণ্ডসহ শ্রম আদালতের আদেশের কার্যকারিতার ওপর দেওয়া স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে। সোমবার (১৮ মার্চ) বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দেন।

আদালতে ইউনূসের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন। কলকারখানা অধিদপ্তরের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান।

ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন জানিয়েছেন, একটা রায়ের দুটি অংশ থাকে। একটি দোষী সাব্যস্তকরণ (কনভিকশন) এবং অপরটি দোষী সাব্যস্তকরণের পর দেওয়া দণ্ড (সেনটেন্স)। এ মামলায় দোষীসাব্যস্ত করে ড. ইউনুসসহ চারজনকে ছয় মাসের কারাদণ্ড, অর্থদণ্ডসহ শ্রম আদালত দণ্ডাদেশ প্রদান করেন। কিন্তু এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল শ্রম আদালতের পুরো রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করেন। ফলে কনভিকশন ও সেনটেন্স দুটোই স্থগিত হয়ে যায়। কিন্তু কনভিকশন (দোষী সাব্যস্তকরণ) কখনও স্থগিত হয় না। আমরা এটা স্থগিতও চায়নি। কিন্তু শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল সেটা করে।

তিনি আরও বলেন, শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের স্থগিতাদেশের ফলে শ্রম আদালত থেকে চার আসামিকে দেওয়া ছয় মাসের সাজার আদেশ, অর্থদণ্ড এবং শ্রমিকদের পাওনা বেতন, ৫ শতাংশ হারে মুনাফা, অর্জিত ছুটিসহ সব পাওনা পরিশোধের যে আদেশ সেটা স্থগিত হয়ে যায়। পাশাপাশি তাদের দোষী সাব্যস্ত করার রায়ও স্থগিত হয়ে যায়। এ কারণে সেটা চ্যালেঞ্জ করে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর হাইকোর্ট-এ রিভিশন আবেদন করেন। হাইকোর্ট রুল মঞ্জুর করেছেন। দোষী সাব্যস্তকরণ (কনভিকশন সাসপেন্ড) অর্ডার বাতিল করেছেন। তবে তাদের যে ছয় মাসের সাজা, অর্থদণ্ডসহ যেসব আদেশ দিয়েছিলেন সেটা শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত থাকবে বলে হাইকোর্ট তার রায়ে বলেছেন। তিনি আরও বলেন, প্রকারান্তে এই আদেশ আমাদের পক্ষেই গেছে। সেজন্য আমরা এর বিরুদ্ধে আপিল করব না।

২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান বাদী হয়ে ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করেন। মামলার আসামিরা হলেন- গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক আশরাফুল হাসান, নুরজাহান বেগম ও এম শাহজাহান।

এ মামলার বিচার শেষে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ঢাকার শ্রম আদালত-৩ এর বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানা তাদের দোষী সাব্যস্ত করে তাদের সাজার রায় দেন। তাদের শ্রম আইনের ৩০৩ (ঙ) ধারায় সর্বোচ্চ ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ১০ দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অপরদিকে ৩০৭ ধারায় ২৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেন আদালত। এরপর আসামিপক্ষ আপিলের শর্তে জামিন আবেদন করেন। আদালত সে আবেদন মঞ্জুর করে পাঁচ হাজার টাকা বন্ডে এক মাসের জন্য জামিন দেন শ্রম আদালত। সেই সময়সীমার মধ্যেই শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করেন দণ্ডপ্রাপ্তরা। গত ২৮ জানুয়ারি শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনকে ৩ মার্চ পর্যন্ত জামিন দেন। আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে নথি তলব করেন। এ ছাড়া শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল থেকে দোষী সাব্যস্ত করে দেওয়া পুরো ওই সাজার রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করেন। এ স্থগিতের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করে কলকারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট এ বিষয়ে রুল জারি করেন। একই সঙ্গে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় সাজার রায় থেকে অব্যাহতি পাওয়া গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বিদেশ গমনের ক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি নিতে হবে। এ মামলার বাকি তিন আসামিকেও বিদেশযাত্রার ক্ষেত্রে একই আদেশ প্রতিপালন করতে হবে বলেও সেদিন আদেশ দেওয়া হয়। এরপর গত ১৪ মার্চ হাইকোর্ট এই রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি করেন। আজ সোমবার হাইকোর্ট এ বিষয়ে রায় ঘোষণা করেন। এরই মধ্যে দু’দফায় রচার আসামি শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল থেকে জামিন নেন। তারা আগামী ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত জামিনে রয়েছেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

শতবর্ষ উদযাপন স্কুল টুর্নামেন্টে সাজিদ ও সাফায়েত চ্যাম্পিয়ন

জাল সনদে চাকরি / ২ মাদ্রাসা শিক্ষকের এমপিও বাতিল

সেমিনারে বক্তারা / মাতৃমৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ এক্লাম্পসিয়া

জনগণ দুর্নীতিবাজ উপদেষ্টাদের রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখতে চায় না: আমিনুল হক

জুলাই আন্দোলনে হামলা / পরস্পরকে চাঁদাবাজ বললেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতারা

যুক্তরাজ্যে পাচার হওয়া সম্পদ জব্দের প্রথম পদক্ষেপে টিআইবির সাধুবাদ

থেমে থেমে বৃষ্টি ঝরবে কয়েকদিন, মঙ্গলবার থেকে ভারি বৃষ্টি

মানুষের বাস্তব সংকট সমাধানকে গুরুত্ব দিতে হবে : জোনায়েদ সাকি

বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচের টিকিট নিয়ে হুলস্থুল, ৮ মিনিটেই শেষ চার ক্যাটাগরি

শহীদ হাসানের জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত

১০

ভর্তি পরীক্ষা ৩১ মে / জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে সাড়ে ৫ লাখ পরীক্ষার্থী

১১

নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা কী বলেছেন, জানালেন প্রেস সচিব

১২

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি / ‘অটোপাস’ অসম্ভব, ইনকোর্স নিয়ে চলছে ‘প্রহসন’

১৩

রোগী সেজে হাসপাতালে দুদকের অভিযান, অতঃপর...

১৪

হামজাদের কাঁদিয়ে আট বছর পর প্রিমিয়ার লিগে সান্ডারল্যান্ড

১৫

ছাত্রদল নেতাসহ ইমো হ্যাকার চক্রের তিন সদস্য আটক

১৬

অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন আদায়ে আমাদের কাজ করে যেতে হবে : নয়ন

১৭

সাউথইস্ট ব্যাংক গৌরবময় ৩০ বছরের পথচলা

১৮

বড় ভাইয়ের ছুরিকাঘাতে ছোট ভাই নিহত

১৯

বিচ্ছিন্নতায় নয়, জাতীয় সম্পৃক্ততায় বিশ্বাস করতে হবে পাহাড়িদের : কাদের গনি চৌধুরী 

২০
X