ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ-সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ড তদন্তে একের পর বেরিয়ে আসছে এক সন্দেহভাজনের নাম। আর এসব নামের পরিপ্রেক্ষিতেই খুনের পেছনে রাজনৈতিক বিরোধের সূত্র খুঁজছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ ওরফে গ্যাস বাবুর সম্পৃক্ততা মিলেছে এই হত্যাকাণ্ডে। এমপি আনারকে ‘হত্যার জন্য অপহরণের’ মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। রোববার (৯ জুন) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে তাকে আদালতে পাঠাবে গোয়েন্দা পুলিশ।
ঝিনাইদহ পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদেও রয়েছেন বাবু। তিনি ঝিনাইদহ জেলা শহরের ভুটিয়ারগাতি গ্রামের মৃত রায়হান উদ্দিনের ছেলে। ডিবি পুলিশের ভাষ্য, কিছু তথ্যের ভিত্তিতে বাবুকে আটক করা হয়েছে। তার কাছ থেকে কিছু প্রশ্নের জবাব নেওয়ার চেষ্টা চলছে। তার মতো ঝিনাইদহ জেলা আ.লীগের আরও কয়েকজন সন্দেহভাজন নজরদারিতে রয়েছেন। এমপির নিজ এলাকায় রাজনৈতিক বিরোধ রয়েছে-এমন কয়েকজনকে ডেকেছে ডিবি পুলিশ। তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ডিবির সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এমপি আনার হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার শিমুল ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্লাহর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই বৃহস্পতিবার রাতে আটক করা হয় আ.লীগ নেতা বাবুকে। এ পর্যন্ত যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে হত্যাকাণ্ডে তার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলেছে। শিমুল ভূঁইয়া ও বাবুর দেওয়া তথ্য যাচাই করা হচ্ছে প্রযুক্তির মাধ্যমে।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাবু ঝিনাইদহ সদর থানায় হাজির হয়ে একটি জিডি করেন। ওই জিডিতে তিনটি মোবাইল ফোন হারিয়ে গেছে বলে উল্লেখ করেন বাবু। এর একটি আইফোন, একটি ভিভো এবং একটি রেডমি মোবাইল ফোন। জিডি করার পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঝিনাইদহ শহরের আদর্শপাড়ায় বাসা থেকে আটক করা হয় বাবুকে। হত্যাকাণ্ডের পর শাহীনের সঙ্গে দফায় দফায় কথা হয়েছে বাবুর। হয়েছে এসএমএস লেনদেন। একসঙ্গে বৈঠকেও বসেছেন। উঠে এসেছে শাহীনের সঙ্গে বাবুর অর্থ লেনদেনের বিষয়ও। শিমুল ভূঁইয়া, বাবু এবং শাহীনের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে।
বাবুকে আটকের পর তার বড় ভাই কাজী গিয়াস আহমেদ বলেন, চরমপন্থী সংগঠন জনযুদ্ধ (লাল পতাকা) প্রধান ডা. মিজানুর রহমান টুটুল আমাদের মামাতো ভাই। শিমুলের বোনকে বিয়ে করেছিলেন ডা. টুটুল। টুটুল শাহীনের আপন চাচাতো ভাই। সেই সূত্রে শিমুল, শাহীন উভয়ই আমাদের আত্মীয়।
বাবুর বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ গতরাতে জানিয়েছেন, জিজ্ঞাসাবাদে উনি আমাদের প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। সে কারণে আমরা তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছি। রোববার তাকে আমরা কোর্টে প্রেরণ করবো এবং রিমান্ড চাইবো। রিমান্ডের পর তার কাছ থেকে আমরা বিস্তারিত তথ্যগুলো জানার চেষ্টা করবো।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তার তিনজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। হত্যাকান্ডের পর ভারত থেকে দেশে এসে কাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, কি কথা বলেছেন, তদন্তের স্বার্থে আমি এখন বলবো না। কিন্তু তাদের সংশ্লিষ্টতা আছে।
তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, এমপি আনার চিকিৎসার উদ্দেশে গত ১২ মে কলকাতায় যান। সেখানে বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাসায় ওঠেন। পরদিন দুপুরে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন বলে ওই বাসা থেকে বের হলেও তিনি যান কলকাতা নিউটাউনের একটি আলিশান ফ্ল্যাটে। সেইদিন ওই ফ্ল্যাটে হত্যার শিকার হন এমপি আনার। মরদেহ টুকরো টুকরো করে ট্রলি ব্যাগে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেয় হত্যাকারীরা। ওইদিন ফ্ল্যাটে ছিলেন আমানুল্লাহ সাইদ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভূঁইয়া, তানভীর ভূঁইয়া, শিলাস্তি রহমান, জিহাদ হাওলাদার, সিয়াম হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান, ফয়সালসহ অন্যরা। আর এই হত্যার মূল পরিকল্পনা করেন এমপি আনারের বন্ধু যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক আক্তারুজ্জামান শাহীন। যিনি হত্যার চূড়ান্ত ছক কষে আনার কলকাতা যাওয়ার আগেই দেশে ফিরে আসেন। হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে বাংলাদেশ থেকে দিল্লি, কাঠমান্ডু, দুবাই হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যান।
মন্তব্য করুন