কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার হোসাইন আল মাসুম পেশায় একজন ব্যবসায়ী। গত ৩০ মে রাতে অপহৃত হন তিনি। নির্যাতন করে মুক্তিপণ আদায় করা হয় ৫ লাখ। ছেড়ে দেওয়ার পর অপহরণকারীরাই উল্টো মামলা করে মাসুমের বিরুদ্ধে। ওই মামলায় মাসুমকে যেতে হয় জেলে। জামিনে ছাড়া পেয়ে অপহরণকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তিনি।
গত ১৪ আগস্ট ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেছেন মাসুম। এ মামলার তদন্ত ভার দেওয়া হয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি)। মামলার পরবর্তী শুনানি ২৪ সেপ্টেম্বর।
মামলার নথি অনুযায়ী, ৩০ মে রাত ১১টার দিকে তার ঢাকার বাসার কাছে ফরায়েজী হাসপাতাল থেকে তার স্ত্রীর (তৎকালীন সময়ে সন্তান সম্ভবা) কিছু মেডিকেল রিপোর্ট নিয়ে ফেরার পথে মাসুমের সঙ্গে মো. শামিম রহমানের দেখা হয়। এরপর সেখানে তাপসী নামের এক তরুণী আসে, যাকে শামিম তার বন্ধু হিসেবে পরিচয় দেয়। কথাবার্তার একপর্যায়ে মাসুম দুজনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসার উদ্দেশে পা বাড়ায়। অল্প কিছুদূর এগোতেই একটি নিশান এক্সট্রেইল এবং টয়োটা এক্স করোল্লা গাড়ি তার পথরোধ করে। মাসুমকে আশ্চর্য করে দিয়ে গাড়িগুলোর একটি থেকে বেড়িয়ে প্রথমে শামিম তার সামনে আসে। এরপর শামিমের নেতৃত্বে তাপসী, অপু, রিমা, হান্নান ও বাবুসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজন তাকে অস্ত্রের মুখে জোরপূর্বক অপহরণ করে।
এ বিষয়ে মাসুম বলেন, তারা আমাকে অস্ত্রের মুখে গাড়িতে ওঠায় এবং চিৎকার করলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এরপর আমার চোখ আর মুখ বেঁধে ফেলা হয়। তারপর আমাকে শামিমের নিকেতনের অফিসের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মামলার ২ নম্বর আসামি ইফতেখার উদ্দিন টুটুল আমার মাথায় পিস্তল ঠেকায় এবং এই সুজোগে তাপসী আমার দেড় লাখ টাকা মূল্যের আইফোন ও নগদ ১৭ হাজার ৫০০ টাকা নিয়ে নেয়। এরপর আমাকে বেধড়ক মারধর করা হয়।
মাসুম বলেন, এর কিছুক্ষণ পর শামিম আমার কাছে এক কোটি টাকা দাবি করে। আমি অস্বীকৃতি জানালে আমাকে আবারও মারধর করা হয়। একপর্যায়ে আমি আর সহ্য করতে না পেরে এবং জীবনের ভয়ে তাদের কথায় রাজি হই। এরই মধ্যে তারা আমাকে কতগুলো খালি স্ট্যাম্প এবং সাদা কাগজে সই করায়। এরপর আমাকে আমার ফোনটা হাতে দিয়ে টাকার ব্যবস্থা করতে বলে। তখন আমি টাকার বিষয়ে আমার পরিচিত বড় ভাই মো. ফরহাদ রেজাকে জানাই। সে অনুযায়ী তিনি পর দিন অর্থাৎ ৩১ মে সকালে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে শামিমের অ্যাকাউন্টে ৫ লাখ টাকা পাঠান। কিন্তু তারা আরও টাকার জন্য আমাকে চাপ দিতে থাকে।
তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে আমার স্ত্রী আমাকে নানা জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে ৩১ তারিখেই খিলগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে (জিডি নং-২৫১০)। এই বিষয়টি টের পেয়ে শামিম, টুটুল এবং তাদের লোকরা আমাকে নিকেতন থেকে মুন্সীগঞ্জ নিয়ে যায়। সেখানে আমাকে অনেক মারধর করে। এরপর তারা আমাকে ২ জুন হাতিরঝিল থানায় এনে একটি বানোয়াট প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার করিয়ে দেয়। এই মামলায় আমি এক মাসের বেশি জেল খেটে ৪ জুলাই বের হই। এরই মাঝে ঘটনার আকস্মিকতায় আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। তবে নিজেকে গুছিয়ে এখন ন্যায়বিচার পেতে আদালতের দারস্থ হয়েছি। ইতোমধ্যে আদালত আমার মামলাটির দায়ভার পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে দিয়েছে।
মন্তব্য করুন