কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৭ মে ২০২৫, ১০:৫৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

সুব্রত বাইনের উত্থান কীভাবে

সুব্রত বাইন ওরফে ফতেহ আলি। ছবি : সংগৃহীত
সুব্রত বাইন ওরফে ফতেহ আলি। ছবি : সংগৃহীত

ঢাকার অপরাধজগতে শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ওরফে ফতেহ আলি আলোচনায় আসেন সর্বপ্রথম ১৯৯১ সালে। সেসময় জাসদ ছাত্রলীগ নেতা মুরাদ হত্যার মধ্য দিয়ে তার কুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে। এক পর্যায়ে ‘সেভেন স্টার’ নামে সন্ত্রাসী গ্রুপের প্রধান হয় সে। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষিত ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য যে পুরস্কার ঘোষণা করে, সেই তালিকাতে শীর্ষে নাম ওঠে তার। এরপর আর তার নাগাল পাওয়া না গেলেও আগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন দুবার।

মঙ্গলবার (২৭ মে) ভোর ৫টার দিকে কুষ্টিয়ার কালিশংকরপুর এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ অভিযানে ঘনিষ্ঠ সহযোগী মোল্লা মাসুদসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রায় দেড় মাস ধরে ওই বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন। এরপরই নতুন করে আলোচনায় এই শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন।

এদিকে শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা সেনানিবাসে এক সংবাদ সম্মেলন করেন আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। সংবাদ সম্মেলনে আইএসপিআরের পরিচালক লেফট্যানেন্ট কর্নেল সামি-উদ-দৌলা বলেন, এই অভিযানটি ছিল দীর্ঘদিনের গোয়েন্দা তৎপরতা এবং পরিকল্পনার ফসল। অপারেশনটি অত্যন্ত সুনিপুণভাবে ক্ষয়ক্ষতি বা সংঘর্ষ ছাড়াই পরিচালিত হয় যা আমাদের বাহিনীর পেশাদারিত্ব এবং রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ সমন্বয়ে ও সহায়তা প্রদান করেছে সেনা সদরের সামরিক অপারেশন পরিদপ্তর, ৫৫ পদাতিক ডিভিশন, ১৪ স্বতন্ত্র ইঞ্জিনিয়ার বিগ্রেড, ৭১ মেকানাইজ বিগ্রেড ও এনএসআই।

তিনি বলেন, শীর্ষ এই সন্ত্রাসীদের নামে দেশের বিভিন্ন থানায় হত্যা ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন নাশকতামূলক কার্যক্রমের মামলা রয়েছে। সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদ সেভেন স্টার সন্ত্রাসী দলের নেতা এবং তালিকাভুক্ত ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অন্যতম।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্রে জানা গেছে, পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় নাম ওঠার পরও অন্তত দুই বছর দেশেই আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। এরপর ২০০৩ সালের দিকে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর তৎপরতা বেড়ে গেলে ভারতে পালিয়ে যান। কলকাতার স্পেশাল টাস্কফোর্স কারাইয়া এলাকা থেকে ২০০৮ সালের ১৩ অক্টোবর সুব্রতকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করার তথ্যও মেলে। তার বিরুদ্ধে কলকাতায় অস্ত্র ও অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলাও হয়। ওই মামলায় ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি জামিনে ছাড়া পেয়ে আবার গা ঢাকা দেন সুব্রত। তার পুরো নাম ত্রিমাতি সুব্রত বাইন।

গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ২০০৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্সের কর্মকর্তাদের ধাওয়া খেয়ে সুব্রত বাইন নেপাল সীমান্তের কাকরভিটা শহরে ঢুকে পড়েন। পরে নেপালের পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের প্রায় তিন বছরের মাথায় ২০১২ সালের ৮ নভেম্বর সুড়ঙ্গ খুড়ে নেপালের কারাগার থেকে পালিয়ে ফের ভারতে অনুপ্রবেশ করে এই শীর্ষ সন্ত্রাসী। একই বছরের ২৭ নভেম্বর কলকাতার বৌবাজারের একটি বাসা থেকে সুব্রতকে গ্রেপ্তার করে ভারতীয় পুলিশ। সেখানে ফতেহ আলি নাম নিয়ে ছদ্মবেশে বসবাস করছিলেন তিনি।

তবে বিদেশে দীর্ঘ কারাবাস করলেও সেখান থেকেই ঢাকার আন্ডারওয়াল্ডের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ ছিল তার হাতে। বড় বড় টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে নামে আসে তার বাহিনীর সন্ত্রাসীদের। কথিত আছে, ঢাকা থেকে করা চাঁদাবাজির টাকায় কলকাতায় তিনি বাড়ি আর জমির মালিক হয়েছেন।

ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে জন্ম নিলেও সুব্রত বাইনের শিশুকাল কাটে গ্রামের বাড়ি বরিশালে। তার আদি নিবাস বরিশালের আগৈলঝাড়া থানার জোবারপাড় গ্রামে। তার বাবা বিপুল বাইন ছিলেন একটি এনজিওর গাড়িচালক। তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্য সে সবার বড়। বরিশালেই একটি মিশনারি স্কুলে পড়ালেখা চলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। এরপর ঢাকার একটি স্কুল থেকে এসএসসি পাসের পর সিদ্ধেশ্বরী কলেজে ভর্তি হতে গিয়ে সেখানকার এক নেতার সঙ্গে পরিচয় হয় তার। এরপর প্রবেশ করেন আন্ডারওয়াল্ডের অন্ধকার গলিতে। অল্প দিনেই মগবাজার এলাকায় একটি সন্ত্রাসী চক্র গড়ে ওঠে তার নেতৃত্বে। ৯৩ সালেই মগবাজার এলাকায় সবজি বিক্রেতা খুনে তার নাম সামনে আসে।

ওই খুনের পর মগবাজারের বিশাল সেন্টার নির্মাণের সময় চাঁদাবাজির জেরে গোলাগুলিতে গণমাধ্যমের শিরোনাম হন এই সুব্রত বাইন। ১৯৯৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ট্রিপল মার্ডারেও নাম আসে সুব্রত বাইনের। এ ছাড়া মগবাজারের রফিক, সিদ্ধেশ্বরীর খোকনসহ বেশ কয়েকজন তার হাতে খুন হন।

জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে নয়াপল্টন এলাকার একটি হাসপাতাল থেকে তৎকালীন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সুব্রত বাইনকে গ্রেপ্তার করেছিল। এর দেড় বছর পর জেল থেকে বেরিয়ে চলতে থাকে তার সন্ত্রাসী কার্যক্রম।

উল্লেখ্য, ২০০১ সালের ২৫ ডিসেম্বর তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত সরকার যে ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা প্রকাশ করেছিল, তার মধ্যে অন্যতম ছিলেন সুব্রত বাইন। তার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ এখনো সক্রিয় রয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উত্তরা ইউনিভার্সিটিতে এডুকেশন অ্যান্ড অ্যাডমিশন ফেয়ার শুরু

আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত কড়াইলবাসীর পাশে দেশবন্ধু গ্রুপ

বস্তায় ভরে পুকুরে ডুবিয়ে ৮ কুকুর ছানা হত্যা

জোটবদ্ধ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের বিধান কেন অবৈধ নয়, হাইকোর্টের রুল

চলতি মাসে আসছে টানা ৩ দিনের ছুটি

নেতানিয়াহুকে দুঃসংবাদ দিলেন তার সাবেক আইনজীবী

বাংলাদেশে কারাদণ্ডের রায়ে টিউলিপের প্রতিক্রিয়া

যে ৫ লক্ষণে বুঝবেন আপনার শরীরে কোলেস্টেরল বাড়ছে

জামায়াত নেতার বাড়িতে আগুন, সব পুড়ে ছাই

প্রশাসনের ২২ কর্মকর্তার পদোন্নতি

১০

চকবাজারের আগুন নিয়ন্ত্রণে

১১

নিঃশব্দে থাইরয়েড ক্যানসার বাড়ছে না তো? জানুন ৫ লক্ষণ

১২

মানবতাবিরোধী অপরাধ হলে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার ট্রাইব্যুনালে হবে : চিফ প্রসিকিউটর

১৩

আমরণ অনশনে বসলেন এনসিপি নেতা জাহাঙ্গীর

১৪

ডা. জাহিদের বক্তব্য ছাড়া খালেদা জিয়ার সংবাদ প্রকাশ না করার আহ্বান

১৫

তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে যা বললেন আইন উপদেষ্টা

১৬

ডিজিটাল কমার্স অব দ্য ইয়ার পুরস্কার পেল দারাজ বাংলাদেশ

১৭

যুবলীগ নেতার কয়েক কোটি টাকার সম্পদ ক্রোক করল দুদক

১৮

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন কার্যক্রম স্থগিত

১৯

মেট্রোরেল-এনেক্স কমিউনিকেশনস লিমিটেডের চুক্তি স্বাক্ষর

২০
X