খাগড়াছড়ি পৌরসভা এলাকায় সুজন্ত ত্রিপুরা ওরফে সুজন খুন হয়েছিলেন। এরপর সুজনের সন্তানসম্ভবা স্ত্রী সুজিতা ত্রিপুরার পাশে দাঁড়ান রাপ্রু মারমা। বন্ধুর এমন হত্যাকাণ্ডে মায়াকান্না করেন, সংসার চালাতে খরচ দেওয়ার প্রস্তাব দেন।
তবে হত্যাকাণ্ডের প্রায় তিন মাস পর জানা গেল- বন্ধু এই রাপ্রু মারমাই সুজনের খুনি। খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশের বিশেষ দল তাকে গ্রেপ্তারের পর এই ক্লু-লেস হত্যার রহস্য বেরিয়ে আসে।
খাগড়াছড়ি পৌরসভা স্বপ্ন মোহন কারবারি এলাকার তিন রাস্তার মোড়ে গত ১১ নভেম্বর এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। নিহত ২৪ বছর বয়সী ইজিবাইক চালক ছিলেন। অভিযুক্ত খুনি রাপ্রু মারমাও ইজিবাইক চালক। তারা পরস্পরের বন্ধু।
খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশ সুপার মুক্তা ধর কালবেলাকে বলেন, দিনদুপুরে ওই হত্যাকাণ্ডের পর এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। বাদী সুজিতা ত্রিপুরা অজ্ঞাতপরিচয়ে ব্যক্তিদের আসামি করেছিলেন। হত্যার কোনো ক্লু না পেয়ে রহস্য উদ্ঘাটনে খাগড়াছড়ি সদর থানার অফিসারদের সমন্বয়ে একটি চৌকস টিম গঠন করা হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় রাপ্রু মারমাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর সে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছে বলে জানান পুলিশ সুপার।
মুক্তা ধর বলেন, হত্যাকাণ্ডের বেশ কিছুদিন আগে সুজন ও রাপ্রুর মধ্যে বাজারে অটো ইজিবাইকের সিরিয়াল নিয়ে বাগ্বিতণ্ডা ও মারামারির ঘটনা ঘটে। ওই বিবাদের কারণে রাপ্রু মারমা সঙ্গীয় একজন সঙ্গে নিয়ে সুজনকে স্থানীয় যাদুরামপাড়ায় একা পেয়ে আক্রমণ করে। এতে উভয়ে আহত হয়। ওই ঘটনার জেরে সুজনকে হত্যার হুমকি দেয় রাপ্রু। পাশাপাশি রাপ্রু তার স্ত্রীকে বিরক্ত করায় সুজনকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে যাতে ধরা না পড়ে সে জন্য খুনের পর উল্টো সুজনের স্ত্রীর সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রাপ্রু মারমা জানিয়েছে, স্ত্রী সন্তানসম্ভাবা হওয়ার পর থেকে সুজন তার (রাপ্রু) স্ত্রীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করে। এতে সে ক্ষিপ্ত হয়। ইজিবাইকের লাইন নিয়ে ঝামেলা, মারামারি এবং নিজের স্ত্রীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের চেষ্টার খবরে সে সুজনকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়।
এর আগে বিষয়টি মীমাংসার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে মিমাংসার চেষ্টা চালানো হয়। সুজনের স্ত্রীকে নগদ ১৫ হাজার টাকা ও পরবর্তীতে ভরণপোষণ ও পারিবারিক খরচের জন্য মাসিক হিসেবে টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেয় সে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, গ্রেপ্তার রাপ্রু মারমার বিরুদ্ধে আগেও খুনের মামলা রয়েছে। ওই মামলায় দণ্ড পাওয়ার পর পলাতক ছিল। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও মারামারির মামলা রয়েছে।
মন্তব্য করুন