বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি বন্ধ এবং দলীয় রাজনীতির ব্যানারে নির্যাতন-নিপীড়নকারীদের বিচারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন কাউন্সিলের আহ্বায়কসহ ডিনদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন পরবর্তীতে সন্দেহবশত ৩ জন বহিরাগত ছাত্রদল সমর্থককে আটক করে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা যখন রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের জন্য আন্দোলন করছে, তখন ক্যাম্পাসে তাদের প্রবেশে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখায় দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) দুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সম্মেলন কক্ষে ওই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাকৃবি ডিন কাউন্সিলের আহ্বায়ক এবং কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. খন্দকার মো. মোস্তাফিজুর রহমান, পশুপালন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. রুহুল আমিন, মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম সরদার এবং ভেটেরিনারি অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক ড. মো. বাহানুর রহমান প্রমুখ।
জানা যায়, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা রাজনীতি বন্ধের জন্যে একটি বিক্ষোভ মিছিল করেন। বিক্ষোভ মিছিল শেষে তারা প্রশাসনিক ভবনের ভেতরে ঢুকে ভিতর থেকেই তালা মেরে দেন। পরে তারা প্রশাসনিক বিভিন্ন শাখার প্রধান কর্মকর্তাদের সঙ্গে রেজিস্ট্রার অফিসে আলোচনায় বসেন। সেখানে ফলপ্রসূ কোনো উত্তর না পাওয়ায় তারা ডিন কাউন্সিলের আহ্বায়কের সঙ্গে কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অফিসের সম্মেলন কক্ষে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ডিনদের আলোচনা হয়। প্রায় ২ ঘণ্টা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেন ডিন ও শিক্ষকরা। মূলত শিক্ষার্থীরা ডিনদের কাছে থেকে ক্যাম্পাসে রাজনীতি বন্ধের জন্য লিখিত চেয়েছিলেন। কিন্তু ডিনরা এ বিষয়ে বলেন, এটি তাদের এখতিয়ারের বাইরে।
এ বিষয়ে ডিন কাউন্সিলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমি শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে শতভাগ একমত। ক্যাম্পাসে রাজনীতি আমিও চাই না। কিন্তু এখন ক্যাম্পাসে কোনো প্রশাসন নেই। উপাচার্য, রেজিস্ট্রার সবাই পদত্যাগ করেছেন। আগামী সপ্তাহের মধ্যে উপাচার্য নিয়োগ হলে প্রথমে জরুরি মিটিং ডেকে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হবে। পরে সিন্ডিকেট ডেকে আমরা রাজনীতি বন্ধের বিষয়ে আলোচনা করব। আমি ডিন কাউন্সিলের আহ্বায়ক হিসেবে বিষয়টি লিখিত আকারে সিন্ডিকেটে তুলে ধরব।
আলোচনা শেষে বিকেল ৪টার দিকে শিক্ষার্থীরা ডিন অফিসের সামনে এলে সন্দেহবশত বহিরাগত ৩ লোককে আটক করেন শিক্ষার্থীরা। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং মোবাইল ফোন যাচাই করে তারা নিশ্চিত হন যে, তারা বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। আটকদের মধ্যে রিফাতের বাড়ি বাকৃবির করিম ভবনের কাছে এবং তিনি শহরের ছাত্রদলকে সমর্থন করে বলে জানিয়েছেন। তৈয়ব এবং হিরা নামে দুজনের বাড়ি বাকৃবির ফিশারিজের মোড়ে এবং তারাও ময়মনসিংহ শহরে ছাত্রদলের সঙ্গে জড়িত বলে তাদের মোবাইল ফোনের ফেসবুক গ্রুপ থেকে শিক্ষার্থীরা নিশ্চিত হয়েছেন। তাদের আটকের পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। পরে উপস্থিত শিক্ষকরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। পরিস্থিতি শান্ত হলে শিক্ষার্থীরা ওই আটকদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখায় শিক্ষকদের উপস্থিতিতে হস্তান্তর করেন।
সন্দেহবশত আটক ছাত্রদল সমর্থিতদের সঙ্গে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) শাখা ছাত্রদলের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানান বাকৃবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. আতিকুর রহমান।
মন্তব্য করুন