এখনো অচলাবস্থা কাটেনি খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট)। দীর্ঘ আড়াই মাস বন্ধ থাকার পর অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চালুর ষষ্ঠ দিনেও কর্মবিরতিতে অনড় শিক্ষকরা। এদিকে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করা ৩৭ শিক্ষার্থীকে শোকজ করেছে কুয়েট কর্তৃপক্ষ।
সোমবার (১২ মে) তাদের শোকজ করা হয়। এর আগে ৬ মে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
নোটিশ দেওয়া শিক্ষার্থীদের আগামী ১৫ মে বিকেল ৫টার মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে বলে জানান, কুয়েটের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ ইলিয়াছ আক্তার। আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে শাস্তি কার্যকর করা না হলে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন থেকেও বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শিক্ষকরা।
শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠানো চিঠির সূত্রে জানা যায়, ১৯ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেটের ৯৮তম (জরুরি) সভায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও শিক্ষকদের হেয়প্রতিপন্ন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ছাত্র শৃঙ্খলা বিধি অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তার জবাব চাওয়া হয়েছে। ১৫ মের মধ্যে এর জবাব দিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও গত ১৮ ফেব্রুয়ারির হামলার ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যম দ্রুত অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরুর দাবিতে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা। সোমবার (১২ মে) দুপুরে ‘কুয়েট শিক্ষার্থীরা’ ব্যানারে এই কর্মসূচি পালিত হয়।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রায় তিন মাস ধরে আমাদের সব অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম অচল হয়ে রয়েছে। আমাদের সবকিছু স্থবির হয়ে রয়েছে। আমরা স্থবিরতার বিপক্ষে। আমরা চাই সব অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম দ্রুত চালু হোক, ক্লাস পরীক্ষা চালু হোক এবং আমরা দ্রুত কুয়েট ক্যাম্পাস থেকে সবকিছু সম্পন্ন করে বের হয়ে যেতে চাই। স্যারদের কাছে করজোড়ে প্রার্থনা করি, ছাত্রদের ওপর যে জুলুম করা হয়েছে সেটার বিচার করা হোক, যারা এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে জড়িত আমরা চাই তাদের বিচারক হোক এবং আমরা শিক্ষক লাঞ্ছনারও বিচার চাই।
কুয়েটে হামলার সঙ্গে যারা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য কুয়েট প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা জানান, প্রাক্তন ভিসি মাসুদের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুসারে গত ১৪ এপ্রিল ৩০ জন নির্দোষ আন্দোলনকারীদের বহিষ্কারাদেশ দেওয়া হয়েছিল, যা পরবর্তীতে ২৪ এপ্রিল প্রত্যাহার করা হয়। শিক্ষার্থীদের দেওয়া সেই বহিষ্কারাদেশ আবার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পুনর্বহাল করতে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে লিস্ট ধরে ধরে নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের হেনস্তা করার উদ্দেশে ‘কারণ দর্শানো’র চিঠি দেওয়া হচ্ছে, বলে দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।
১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক মানুষ আহত হন। এরপর থেকেই ক্যাম্পাসে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। এক পর্যায়ে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করলে উপাচার্য ও উপউপাচার্যকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ১ মে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) অধ্যাপক মো. হজরত আলীকে কুয়েটের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
মন্তব্য করুন