ময়মনসিংহের ত্রিশালে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুরপাড়ে স্থাপিত ‘অঞ্জলি লহ মোর’ ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের আওতায় ২০২৪ সালে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাস্কর্যটি স্থাপন করেছিলেন সাবেক উপাচার্য সৌমিত্র শেখর। ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেছিলেন ভাস্কর মনিন্দ্র পাল। ঈদের ছুটিতে ‘আপত্তির মুখে’ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসন ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলে।
এদিকে ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এর প্রতিবাদে বুধবার (১৮ জুন) দুপুরে তারা ভাস্কর্যটির পাশে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। ভাস্কর্য ভাঙার মাধ্যমে যারা রাষ্ট্রীয় সম্পদ অপচয় করেছেন, তাদের শাস্তির দাবি জানান তারা। ভাস্কর্য নির্মাণে আগের প্রশাসনের অনিয়মের তদন্ত, মূল নকশা অনুসারে ভাস্কর্যটি সংস্কারের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, মূলত প্রতিহিংসার জেরেই ছুটি চলাকালীন ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী কামরুল হাসান তুষার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুরের সৌন্দর্যবর্ধনের অংশ হিসেবে তৈরি ‘অঞ্জলি লহ মোর’ নামক যে স্থাপনাটি, তা প্রশাসনের নির্দেশে ভেঙে ফেলা হচ্ছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত ছাড়াও অন্যভাবে এটি নিয়ে নতুন পরিকল্পনা করা যেত, যা অধিক যুক্তিযুক্ত হতো।
ভাস্কর্য ভাঙার বিষয়ে পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তরের পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ভাস্কর্যটা বর্তমান প্রশাসন গ্রহণ করছে না। তাই এটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। উপাচার্য স্যারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত এসেছে।
উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব পালন করা ট্রেজারার অধ্যাপক ড. জয়নুল আবেদীন সিদ্দিকী বলেন, এ বিষয়ে অনেক আগেই ডিনসহ সবাইকে নিয়ে একটা সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এটা সম্ভবত সেই সিদ্ধান্তের কারণেই হচ্ছে। তখন তো অনেক বিতর্কিত কর্মকাণ্ড হয়েছিল, কেউ কেউ ভাস্কর্যটি নিয়ে তীব্রভাবে আপত্তি জানিয়েছিল। ফলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তবে ভাস্কর্যটি ভাঙার ব্যাপারে পূর্বে কোনো ধরনের লিখিত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন রেজিস্ট্রার, প্রকৌশল দপ্তর এবং একাধিক অনুষদের ডিন। এমনকি ভাস্কর্যটির বিষয়ে কী ধরনের আপত্তি ছিল এমন প্রশ্নেরও সুনির্দিষ্ট উত্তর দিতে পারেননি কেউ। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা শুরু হলে বুধবার অনলাইনে এক সভা করে ভাঙার কাজ আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন।
ছুটিতে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম কালবেলাকে বলেন, ভাস্কর্যটি যেভাবে তৈরি করার কথা ছিল, আগের প্রশাসন তা করেনি। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন অংশ থেকে ভাস্কর্যটির বিষয়ে আপত্তি ছিল। আমরা এটি সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছি। বুধবার অনলাইনে ডিনস কমিটির একটি মিটিং হয়েছে। আগামী ২২ জুন সংশ্লিষ্ট দপ্তর প্রধান এবং ডিনদের সমন্বয়ে আবারও আলোচনা হবে।’
মন্তব্য করুন