সাংবাদিকতা শুধু পেশা নয়, এটি সত্য অনুসন্ধানের এক নিরন্তর প্রয়াস, নিরপেক্ষ এক বাহন, প্রশ্নমুখর সাহসী সত্তা। যা কাজ করে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে। সমাজই তার বিচরণক্ষেত্র। সমাজের দর্পণ হয়ে কাজ করার এই অভিযাত্রায় তরুণদের অগ্রণী ভূমিকা অনস্বীকার্য।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাব সেই তরুণদের জন্য এক অনন্য প্ল্যাটফর্ম, যেখানে সংবাদ জগতে প্রবেশের প্রথম সিঁড়ি হিসেবে ভূমিকা রচনা করে তরুণ সাংবাদিকদের পক্ষে। হাতছানি দেয় স্বাধীন একটি ক্যারিয়ারের দিকেও। ৯ মে, ২০২৫ সংগঠনটির ৬ষ্ঠ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বা অর্ধযুগপূর্তিতে শুভেচ্ছা জানাই।
শুরুটা যেভাবে : ‘ঐক্যে মোরা, সত্যের পথে’ স্লোগানকে সামনে রেখে ২০১৯ সালের ৯ মে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়। ময়মনসিংহের ত্রিশালে ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম ক্রিয়াশীল সংগঠন এটি। লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের সাংবাদিকতা চর্চার সুযোগ সৃষ্টি ও গণমাধ্যমের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ত করা। এটি শুধু খবর সংগ্রহ ও প্রচারের স্থান নয় বরং মুক্ত চিন্তা, বিশ্লেষণধর্মী সাংবাদিকতা এবং বস্তুনিষ্ঠ তথ্য উপস্থাপনের একটি কার্যকর মঞ্চ।
তরুণদের জন্য এক অনন্য সুযোগ : বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে আগ্রহীরা এখানে হাতে-কলমে সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা অর্জনের পাশাপাশি সংবাদ লেখার কৌশল, প্যাকেজ রিপোর্টিং, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ও ফিচার রাইটিংয়ের মতো বিষয়েও দক্ষতা বাড়াতে পারে। এখান থেকে কাজ করা অনেক সদস্য ইতোমধ্যেই জাতীয় গণমাধ্যমে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন, যা এই প্রেসক্লাবের সফলতার বড় উদাহরণ।
সংবাদ থেকে আন্দোলন : নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব শুধু সংবাদ প্রচারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি সময়ের সাহসী কণ্ঠস্বরও। শিক্ষার্থীদের সমস্যা, ক্যাম্পাসের অনিয়ম, শিক্ষার মানোন্নয়ন ও সমাজ সচেতনতামূলক বিষয়ে কাজ করে প্রেস ক্লাব। বিভিন্ন সময় বিতর্কিত ইস্যুতে সত্য তুলে ধরতে এই সংগঠন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
বিভিন্ন সাফল্য : ২০২২ সালে দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের নিয়ে ন্যাশনাল ক্যাম্পাস জার্নালিজম ফেস্ট আয়োজন ছিল এখন পর্যন্ত বড় সাফল্য এই সংগঠনের। এ ছাড়া তাদের উল্লেখযোগ্য প্রকাশনা রয়েছে যেমন কলম, ক্যালেন্ডারসহ অন্যান্য। তারা সাংবাদিকতার মাধ্যমে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করতে পারেন এই বিষয়টিও সাফল্যের মধ্যে অন্যতম।
কমিটি : প্রেস ক্লাবের কমিটি করা হয় সংগঠনের সবার সঙ্গে মুক্ত আলোচনার মাধ্যমে। সবার ঐক্যমত্যে নতুন কমিটির প্রকাশ ঘটে। সাধারণত ১৫-২০ জনের কমিটি করা হয়। সদস্যদের সৃজনশীলতা, নিরপেক্ষতা, দক্ষতা, একাগ্রতাসহ বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যকে স্থিতিমাপ করে গভীরভাবে মূল্যায়ন করা হয়।
এক্সট্রা কারিকুলাম : শিক্ষার্থী পরিচয়ের পাশাপাশি সাংবাদিকতা করা একটি গুরুত্বপূর্ণ এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি। এই পেশায় যুক্ত হলে কেবল রিপোর্ট লেখা নয়, বরং আরও নানা ধরনের কার্যক্রমে যুক্ত থাকতে হয়, যা একাডেমিক পড়াশোনার বাইরে গিয়ে শিক্ষার্থীর দক্ষতা বাড়ায়। যেমন সংবাদ সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি ও অনুসন্ধান, ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ের উপর তথ্য যাচাই, সাক্ষাৎকার গ্রহণের কৌশল শেখা ও প্রয়োগ, পাবলিক স্পিকিং ও উপস্থাপনার দক্ষতা বৃদ্ধি, ভিডিও/অডিও রিপোর্ট তৈরি, সংবাদ সম্পাদনা, দলগতভাবে কাজ করার অভ্যাস গড়ে তোলা, সময় ব্যবস্থাপনা ও চাপের মধ্যে কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন প্রভৃতি। এসব কাজ শিক্ষার্থীর চিন্তাশক্তি, বিশ্লেষণ ক্ষমতা ও আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করে। সাংবাদিকতা তাই পেশার বাইরে একধরনের সার্বিক ব্যক্তিত্ব বিকাশের মাধ্যম।
স্বপ্নসারথি সাংবাদিকরা এগিয়ে চলবে : বিশ্ববিদ্যালয় জীবনই হলো স্বপ্ন বুননের সময়। প্রেস ক্লাবের সদস্যরা শুধু সাংবাদিকতা শেখেন না, তারা সাহসী ও দায়িত্বশীল সংবাদকর্মী হয়ে ওঠার প্রস্তুতি নেন। ভবিষ্যতের গণমাধ্যম জগতে তারা দায়িত্বশীল ও ন্যায়নিষ্ঠ সাংবাদিক হয়ে সমাজে পরিবর্তন আনতে পারবেন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাব তাই শুধু একটি সংগঠন নয়, এটি স্বপ্ন দেখা তরুণ সাংবাদিকদের আত্মপ্রকাশের একটি উজ্জ্বল পথ।
মূল্যবোধের শিক্ষা : ক্যাম্পাস-লাইফ পরবর্তী সবাই যে এই পেশাকে স্থায়ীভাবে গ্রহণ করেন, তা নয়। বরং এই সময়টুকুতে অর্জিত নৈতিকতা, ধৈর্য, বিশ্লেষণী দৃষ্টিভঙ্গি ও পেশাগত শৃঙ্খলার অভ্যাস তাদের জীবনের অন্য যে কোনো পেশায়ও মূল্যবান সম্পদ হয়ে ওঠে। এখান থেকেই গড়ে ওঠে একটি ইতিবাচক মানসিকতা—সুশাসনের পক্ষে দাঁড়ানো, শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকা এবং দেশের কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত করার মানসিক প্রস্তুতি। আর এটাই হবে তাদের জন্য মূল্যবোধ বজায় রাখা।
সাবেক সাধারণ সম্পাদক, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাব।
মন্তব্য করুন