বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারসহ একাধিক দাবিতে রাজধানীর নতুনবাজার মোড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করছেন ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (২১ জুন) সাড়ে ৮টার দিকে ইউআইইউ শিক্ষার্থীরা নতুন বাজার সড়কে অবস্থান নিলে কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বাড্ডাগামী সড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে সড়কের অপর পাশে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
শিক্ষার্থীরা দুটি দাবিতে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করছে। তারা দাবিগুলো- উপাচার্য ও একজন বিভাগীয় প্রধানের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারাদেশ নিঃশর্তে প্রত্যাহার করতে হবে। এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক শূন্যতা দূর করে দ্রুত স্বাভাবিক একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করতে হবে।
ইউআইইউ শিক্ষাথী মুস্তাসিম ফুয়াদ বলেন, আজ সকাল ৮টা থেকে নতুনবাজার মোড়ে ব্লকেড ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি। ইউআইইউ প্রশাসনের অবৈধভাবে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে সক্রিয় রাজনৈতিক সিন্ডিকেট ও স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ,ছাত্রদের মত প্রকাশের অধিকার এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতকরণ।
তিনি আরও বলেন, এই আন্দোলন দেশের বেসরকারি উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের একটি ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ।
ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাকিবুল হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, শিক্ষার্থীরা বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়া এবং স্বেচ্ছাচারী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে সড়কে অবস্থান নিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ ও ২৭ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের অসন্তোষের জেরে উপাচার্যসহ ১১ জন প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদত্যাগ করেন। এরপর ২৮ এপ্রিল ইউআইইউ কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য সব শিক্ষা কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করে। যদিও ২০ মে থেকে অনলাইন ক্লাস শুরু হয়েছে, শিক্ষার্থীদের একটি অংশ তা প্রত্যাখ্যান করে ক্যাম্পাসে সরাসরি ক্লাস ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতা দাবি করে আসছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের যৌক্তিক ১৩ দফা দাবি দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষা করে আসছে। বরং আন্দোলন দমন করতে বহিষ্কার ও তদন্তের ভয় দেখানো হচ্ছে। ট্রাস্টি বোর্ড থেকে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে দেওয়া এক খোলা চিঠিতে বলা হয়েছে, ২৬ মের মধ্যে যারা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়তে চায়, তারা ভর্তি বাতিল করলে পূর্ণ টিউশন ফির অর্থ ফেরত পাবে। তবে যেসব শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তারা এই সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় না ছাড়লে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার মুখোমুখি হতে পারে বলেও জানানো হয়।
একজন শিক্ষার্থী সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে লিখেছেন, ‘দেশ ও দশের জন্য প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব ছাত্র তাদের জীবন দিয়ে লড়েছিল, এবার তাদের পাশে দাঁড়ানোর সময় এসেছে। আমরা অবৈধ বহিষ্কার আদেশ বাতিল না হওয়া পর্যন্ত থামবো না।’
এদিকে, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) জানিয়েছে, তারা বিশ্ববিদ্যালয়টি দ্রুত সচল করতে ট্রাস্টি বোর্ড ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।
উল্লেখ্য, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ) দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, যা ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে ইউনাইটেড গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিষ্ঠিত হয়। গুলশান সংলগ্ন বাড্ডার মাদানি অ্যাভিনিউয়ে অবস্থিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ব্যবসায় শিক্ষা, সমাজবিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চশিক্ষা প্রদান করে থাকে।
মন্তব্য করুন