ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে নিজ বিভাগের ছাত্রীদের যৌন হয়রানি ও তাদের নানাভাবে মানসিক নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গত ২২ জুন পৃথকভাবে বিভাগের সভাপতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ছাত্রীরা।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৮ জুন থেকে অভিযুক্ত শিক্ষককে একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. এ কে এম নাজমুল হুদা।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) অভিযুক্ত শিক্ষককে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন তিনি। অভিযুক্ত ড. আজিজুল ইসলাম বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক।
কল দিয়ে কুরুচিপূর্ণ কথা বলা, টিউটোরিয়ালে ফেল করানো, নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ কথা বলা, শ্রেণিকক্ষে ভুক্তভোগীদের লক্ষ্য করে বাজে ইঙ্গিত করা, শরীরের গঠন ও উচ্চতা নিয়ে কথা বলাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, তার বিভাগের এক ছাত্রীকে করোনার ছুটিতে ইমোতে ভিডিও কল দেন আজিজুল। ওই ছাত্রী কল রিসিভ না করলে তাকে অডিও কল দিয়ে ভিডিও কল ধরল না কেন জানতে চান। তখন ওই ছাত্রী ভিডিও কলে কথা বলেন না বলে জানান। তখন অভিযুক্ত শিক্ষক তাকে বলেন, ‘অনেক দিন তোমাদের দেখিনি, তোমরা মোটা হয়েছ না চিকন হয়েছ দেখার জন্য ফোন দিয়েছি।’
এ ছাড়া আজিজুল ইসলাম ভুক্তভোগীর কোনো বয়ফ্রেন্ড আছে কি না জানতে চান। ওই ছাত্রী না বললে তিনি বলেন, ‘এখন বলছো কেউ নাই, কিছুদিন পর তো দেখব ক্যাম্পাসে কোনো ছেলের হাত ধরে ঘুরছ।’
অন্য এক ছাত্রীর অভিযোগ, শ্রেণিকক্ষে তাকে উদ্দেশ করে আজেবাজে ইঙ্গিত দিতেন ও বিভিন্ন বাজে কথা বলতেন শিক্ষক আজিজুল। এ ছাড়া শ্রেণিকক্ষে সবার সামনে ওই ছাত্রীর উচ্চতা নিয়ে কুরুচিপূর্ণ কথা, স্বামী-স্ত্রীর ব্যক্তিগত জীবন ও সম্পর্ক নিয়ে নানা মন্তব্য করতেন।
বিভাগের অন্য এক ছাত্রী অভিযোগ করেন, পিঠা উৎসবের দিন কয়েকজন বান্ধবীসহ শ্রেণিকক্ষের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। তখন কয়েকজন অভিযুক্তকে তাদের সঙ্গে ট্যুরে যাবেন কি না জানতে চান। এ সময় তিনি ভুক্তভোগীকে উদ্দেশ করে সাঁতার পারে কি না জানতে চান। ভুক্তভোগী না বলায় তিনি তাকে বলেন, ‘সাঁতারই তো পার না, কক্সবাজারে গিয়ে কী হবে, একসঙ্গে সমুদ্রে নেমে তো গোসল করতে পারব না।’
জানা যায়, বিভাগটির দশের অধিক ছাত্রী আজিজুলের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। শ্রেণিকক্ষে ভুক্তভোগীদের উদ্দেশ করে নানা বিব্রতকর প্রশ্ন করা, ভালো রেজাল্টের প্রলোভন দেখিয়ে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা, নিজস্ব কক্ষে ডেকে নিয়ে নানা অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ের অবতারণা করা, ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অবাঞ্ছিত জিজ্ঞাসা, কল দিয়ে বিরক্ত করাসহ নানাভাবে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ করেছে তারা।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা কথা বলতে রাজি হননি।
অভিযুক্ত আজিজুল ইসলাম বলেন, আমি বলেছি একভাবে, তারা বুঝেছে অন্যভাবে। তারা আমার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে এসব অভিযোগ করেছে। করোনাকালীন বিভাগের সভাপতির দায়িত্বে থাকায় সেশনজট কমানোর উদ্যোগ নিতে আমাকে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলতে হয়েছে।
বিভাগটির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ কে এম নাজমুল হুদা বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত তিনি বিভাগের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকবেন।
মন্তব্য করুন