ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে ‘এক কালে : ওয়ান্স আপন আ টাইম’ শীর্ষক ১০ দিনব্যাপী আলোকচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরুল বাড্ডা ক্যাম্পাসে শেষ হয়।
এই প্রদর্শনীটি আয়োজন করেছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস (সিপিজে)। প্রদর্শনীটির পরিকল্পনা ও উপস্থাপনা করেছেন গ্রেগ কনস্টানটাইন। তিনি একজন প্রামাণ্যচিত্র আলোকচিত্রী, লেখক ও ভিজ্যুয়াল সাংবাদিক। মানবাধিকার, অবিচার ও বৈষম্য নিয়ে কাজের জন্য তিনি বিশ্বে সুপরিচিত।
ভিজ্যুয়াল স্টোরিটেলিং, আলোচনা এবং বিভিন্ন সেশনের মাধ্যমে তিনি দর্শকদের সামনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ইতিহাস, পরিচয় ও তাদের বর্তমান সংকটকে নতুনভাবে তুলে ধরেন।
প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গ্রেগ কনস্টানটাইন বলেন, রোহিঙ্গারা বহু বছর ধরে উচ্ছেদ, কষ্ট আর সহিংসতার শিকার হয়ে আসছে। এ কারণে তারা নিজেদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অনেক কিছুই হারিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ১১টি দেশের রোহিঙ্গাদের সহায়তায় এই প্রদর্শনী তাদের হারানো জীবন ও স্মৃতিকে নতুনভাবে গড়ে তোলার একটি চেষ্টা।
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার বলেন, ‘ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে আমরা এ ধরনের প্রদর্শনীর মাধ্যমে আলোকচিত্র ব্যবহার করে আমরা তুলে ধরতে চাই আগামী দিনগুলোতে কি ঘটতে যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এমন একটা পৃথিবী চাই না যা বৈষম্য ও অবিচারের ওপর ভিত্তি করে গড়া। আমরা ভিন্নতা থেকে শিখতে চাই। খুব ভালো হতো যদি এখানে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মানুষ থাকত। তাহলে তারা নিজেদের মুখে তাদের গল্পগুলো তুলে ধরতে পারত।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেন, এই চিত্রপ্রদর্শনীটি হচ্ছে বৈশ্বিক দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার এক সময়োপযোগী প্রচেষ্টা।
তিনি বলেন, এটি এক ভয়াবহ বাস্তবতা। রোহিঙ্গারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবিরে জীবনযাপন করছে। কয়েক দশক ধরে তাদের পরিচয় অস্বীকার ও বিকৃত করা হয়েছে।
চিত্রপ্রদর্শনীর সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি ব্রিটিশ হাইকমিশনার ও ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টর জেমস গোল্ডম্যান। তিনি বলেন, এই প্রদর্শনীটি তাকে গভীরভাবে আলোড়িত করেছে। তিনি উল্লেখ করেন, এটি স্মৃতি সংরক্ষণ এবং নিপীড়িতদের কণ্ঠস্বরকে আরও জোরালো করার গুরুত্বকে দৃঢ়ভাবে তুলে ধরেছে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গারা বর্তমানে এক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যেখানে তাদের ধীরে ধীরে মানবিক মর্যাদা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রদর্শনীটি মানুষকে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের বিষয়ে নতুনভাবে ভাবতে শেখাবে।
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির অফিস অব কমিউনিকেশনসের ডিরেক্টর খায়রুল বাশার বলেন, পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ ১০ দিনব্যাপী এ প্রদর্শনীটি ঘুরে দেখেছেন। প্রদর্শনীটি ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার লাভ করেছে।
অনুষ্ঠানে এই প্রদর্শনীকে ঘিরে আয়োজিত ডিজিটাল পোস্টার প্রতিযোগিতায় সেরা তিন স্কুলশিক্ষার্থীকে পুরস্কৃত করা হয়।
এ ছাড়া সমাপনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ট্রেজারার আরিফুল ইসলাম, রেজিস্ট্রার ড. ডেভিড ডাউল্যান্ড, সিপিজের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মনজুর হাসান ওবিই, স্টুডেন্ট লাইফের জয়েন্ট ডিরেক্টর তাহসিনা রহমানসহ ছয়টি স্কুল ও ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
মন্তব্য করুন