জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) কেন্দ্রীয় সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) এদিন বিকাল ৫টায় ভোট শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কিছু কেন্দ্রে লাইন দীর্ঘ থাকায় এবং দুপুরে কিছু কেন্দ্রে এক ঘণ্টা ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকায় রাত ৮টা পর্যন্তও চলমান দেখা যায়।
এরপর কয়েক ঘণ্টা বিরতি দিয়ে গতকাল রাত ১০টায় গণনা শুরু হয়। কিন্তু শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ২টা পর্যন্ত ৩৩ ঘণ্টা পার হলেও গণনা শেষ হয়নি। ২৮ ঘণ্টা পর শুক্রবার রাত ৯টার দিকে ২১টি হল সংসদের ভোট গণনা শেষ হয়েছে। এরপর কেন্দ্রীয় সংসদের ভোট গণনা শুরু হয়। কিন্তু কেন ভোট গণনার এই অবস্থা?
এর আগে গতকাল ভোট গণনার ওএমআর মেশিন নিয়ে কয়েকটি প্যানেল আপত্তি তোলে। পরে সনাতন (ম্যানুয়াল) পদ্ধতিতে ভোট গণনার ঘোষণা দেয় নির্বাচন কমিশন। তখন বলা যায়, হাতে গণনা করা হবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনিরুজ্জামান শুক্রবার সন্ধ্যার পর সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আজ (শুক্রবার) রাতেই গণনা শেষ হতে পারে। তবে সময় নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।
এদিকে হল সংসদের ভোট গণনা শেষ হলেও কেন্দ্রীয় ফলাফল নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা। এতে প্রার্থীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। ভোট গণনায় এত সময় লাগায় স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, ভোট কীভাবে গণনা হচ্ছে এবং তাতে এত সময়ইবা কেন লাগছে।
জাকসু নির্বাচনের মোট ভোটার ১১ হাজার ৭৪৩ জন। এর মধ্যে ভোট পড়েছে ৬৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ। অর্থাৎ, প্রায় সাত হাজার ৯৪৭ জন ভোট দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় সংসদে মোট পদ ২৫টি, প্রার্থী ১৭৭ জন।
যেমন কেন্দ্রীয় সংসদের ভোট গণনা পদ্ধতি— কেন্দ্রীয় সংসদে তিন পৃষ্ঠার ব্যালট পেপারে ২৫টি পদ ও প্রার্থীর নাম আছে। প্রতিটি ব্যালট পেপার হাতে নিয়ে কর্মকর্তারা একটি নির্দিষ্ট পদের ভোট আলাদা করে ফেলেন। যেমন– ভিপি, জিএস বা এজিএস পদ।
কেন সময় লাগছে
ভোট গণনা নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নওয়াব ফয়জুন্নেসা হল কেন্দ্রের রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক সুলতানা আক্তার। তিনি বলেন, হল সংসদে একটি মাত্র ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোট হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সংসদের ব্যালট তিন পৃষ্ঠার। অর্থাৎ প্রদত্ত ভোট যদি প্রায় ৮ হাজার হয়, তাহলে শুধু কেন্দ্রীয় সংসদে ২৪ হাজার কাউন্ট (গণনা) করতে হবে।
সুলতানা আক্তার বলেন, ‘তিন দিনেও তো এটা শেষ করা সম্ভব হবে না। আমরা এই পদ্ধতির পরিবর্তন চাই।’
লোকবল বৃদ্ধি
শুক্রবার সারা দিনে ভোট গণনা শেষ না হওয়ায় নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেন শিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট প্যানেলের জিএস প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম, বাগছাস সমর্থিত শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতু।
এই বৈঠকের পর নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ফল ঘোষণার সময় নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। আজ (শুক্রবার) পুরো রাতও লেগে যেতে পারে। আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। যারা ভোট গণনা করছেন তাদের সংখ্যা সীমিত, চেষ্টা করছি সংখ্যাটা বাড়িয়ে রাতের মধ্যে ফল দেওয়ার।’
একপর্যায়ে মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ভোট গণনা শেষ হতে আরও ৯২ ঘণ্টা লাগবে।’
তবে গণনা পদ্ধতির বাইরে নির্বাচন নিয়ে নানা আলোচনা আছে। ছাত্রশিবির সমর্থিত জিএস প্রার্থী বিএনপিপন্থি তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেছেন, নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে। ছাত্রদলসহ পাঁচটি প্যানেল আগেই এ ভোট বর্জন করেছে। ফলে গণনাপদ্ধতির কারণে, নাকি রাজনৈতিক কারণে ভোটের ফল প্রকাশে দেরি হচ্ছে, সে প্রশ্নও উঠছে।
এদিকে ভোট গণনার বলিও হয়েছেন একজন শিক্ষক। জান্নাতুল ফেরদৌস (৩১) নামে চারুকলা বিভাগের ওই সহকারী অধ্যাপক প্রীতিলতা হলের পোলিং কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন। বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত ভোট গণনায় যুক্ত ছিলেন তিনি। শুক্রবার সকালে আবার ভোট গণনা করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের গণনাকক্ষের সামনে পড়ে যান। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে গ্রামের বাড়ি পাবনায় তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. জাকির আহমেদ জানান, ‘সিনেট ভবনসহ পুরো ক্যাম্পাসে পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’
মন্তব্য করুন