জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে জেনারেল সেক্রেটারি (জিএস) নির্বাচিত হয়েছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের মাজহারুল ইসলাম ফাহিম। জুলাই আন্দোলনের তার অবদান ছিল ব্যাপক। আন্দোলনের সময় মাজহারুলের অবস্থান শনাক্ত করতেই তার ছোট ভাই ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজকে তুলে নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ফাইয়াজকে আটকের তিন দিন পর ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জার্সি পরা, দুই হাত মোটা সাদা রশি দিয়ে বাঁধা, হাতে একটি কাপড়ের ব্যাগ। প্রিজনভ্যান থেকে নামিয়ে তাকে নেওয়া হচ্ছিল আদালতে। জুলাই আন্দোলনের সময় এমন একটি ছবির দৃশ্য পুরো দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। এ ঘটনায় জাতিসংঘও বিবৃতি দিয়েছিল। এরপর সারা দেশে আলোচিত হয়ে ওঠেন ফাইয়াজ।
জুলাই আন্দোলন চলাকালে ফাইয়াজ ঢাকা কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ফাইয়াজরা তিন ভাই। তার মধ্যে মেজো ফাইয়াজ। তার বড় ভাই মাজহারুল ইসলাম ফাহিম জাকসুর নির্বাচনে জিএস পদে বিজয়ী হয়েছেন।
মাজহারুল ও ফাইয়াজ লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চর আলেকজান্ডার এলাকার বাসিন্দা এবং ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম মঞ্জুর বড় ছেলে।
মাজহারুলের বাবা আমিরুল ইসলাম বলেন, মাজহারুল ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী এবং ভদ্র স্বভাবের। ২০১৬ সালে নোয়াখালী জেলা স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি, ঢাকার সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করে। পরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হয়। পড়ালেখার পাশাপাশি সে অনেক ধরনের সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত।
তিনি আরও বলেন, জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় মাজহারুল অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। তার সন্ধান জানতেই ২৪ জুলাই আমার ছোট ছেলেকে পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। তিন দিন পর তাকে ডিবি কার্যালয়ে পাঠানো হয়। মিথ্যা সাক্ষ্য না দেওয়ায় তাকে নির্মম নির্যাতন করা হয়েছিল।
আমিরুল বলেন, ১৭ বছর বয়সী ফাইয়াজকে হাতে দড়ি বেঁধে আদালতে তোলে পুলিশ। আদালত তার রিমান্ড মঞ্জুর করে। এতে দেশবাসী ক্ষোভে ফেটে পড়ে। ফাইয়াজ কিশোর জুলাইযোদ্ধা হিসেবে সারা দেশে পরিচিতি পায়। তার ইস্যুতে জাতিসংঘও বিবৃতি দিয়েছিল।
ফলাফল ঘোষণার পর জাকসুর নবনির্বাচিত জিএস মাজহারুল ইসলাম বলেন, যেদিন শিক্ষার্থীরা আমাদের স্বীকৃতি দেবে যে, আমরা আমাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পেরেছি, এ ক্যাম্পাসের হাজার হাজার শিক্ষার্থী যারা আমোদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন, তাদের আমানতের ভার আমরা রক্ষা করতে পেরেছি, সেই দিন আমরা বলতে পারব আমরা বিজয় অর্জন করতে পেরেছি।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান এবং কমিশনের সদস্যসচিব একেএম রশিদুল আলম আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন। জাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্যানেলের আব্দুর রশিদ জিতু। এজিএস (ছাত্র) পদে ফেরদৌস আল হাসান ও এজিএস (ছাত্রী) পদে আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা নির্বাচিত হয়েছেন। তারা দুজনই ছাত্রশিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থী।
মন্তব্য করুন