ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে প্রত্যাশিত ফল পাওয়ার পর এবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনেও জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে চায় ইসলামী ছাত্রশিবির। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংগঠনটির মনোনীত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল ৩৩ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছে। এ ইশতেহার ১২ মাসে পূরণ করার অঙ্গীকারও করেছে প্যানেলটি। তবে ছাত্রশিবিরের মতো নির্বাচনে জয়ী হতে মরিয়া ছাত্রদলসহ অন্য প্যানেলও। তারাও নানা কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরে জোর প্রচারণা চালিয়েছেন।
ছাত্রশিবিরের নেতারা বলছেন, তাদের প্যানেলে প্রার্থী নির্বাচনে বৈচিত্র্য আনা হয়েছে। দলীয় ছাড়াও এমন শিক্ষার্থীদের আনা হয়েছে, যারা নিজ নিজ অবস্থানে সেরা। তাই শিক্ষার্থীরা সেরা প্রার্থীদেরই ভোট দিবে বলে আশাবাদী তারা। প্যানেলের প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে নিজেদের ইশতেহার তুলে ধরে প্রচারণা চালিয়েছেন। এর পাশাপাশি অনলাইন প্রচারণায়ও তারা সমানভাবে অংশ নিয়েছেন।
ছাত্রশিবিরের ইশতেহারে ইশতেহারে আবাসনসংকট নিরসনে পুরোনো হল সংস্কার, নতুন টিনশেড ও এক্সটেনশন ব্লক নির্মাণের মাধ্যমে আসনসংখ্যা ১০ শতাংশ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। শাটল ট্রেনের বগি বৃদ্ধি, ট্র্যাকিং অ্যাপ চালু ও দ্বিতীয় রেললাইন স্থাপন প্রকল্প ত্বরান্বিত করার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া ই-কার ও শাটল বাস সার্ভিস চালু, সুলভ মূল্যে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার সরবরাহ, সেশনজট নিরসনে ডিজিটাল অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার, নারী শিক্ষার্থীদের জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটি, চাইল্ড কেয়ার কর্নার ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধ সেল শক্তিশালী করার উদ্যোগ রয়েছে।
গবেষণায় বরাদ্দ বৃদ্ধি, রিসার্চ ফেস্ট আয়োজন, বিভাগীয় লাইব্রেরি আধুনিকায়ন ও মেডিকেল সেন্টারকে ৫০ শয্যার হাসপাতালে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তায় সিসিটিভি, পুলিশ বক্স ও পার্টটাইম নিরাপত্তা টিম গঠনের পাশাপাশি গ্রিন ক্যাম্পাস ও সৌরশক্তি ব্যবহারের অঙ্গীকারও করা হয়েছে।
প্যানেলটির ভিপি পদপ্রার্থী মো. ইব্রাহিম হোসেন রনি কালবেলাকে বলেন, শিক্ষার্থীরা যোগ্য প্রার্থীকেই ভোট দেবে। এখানে প্যানেল মুখ্য বিষয় না, মূখ্য বিষয় যোগ্য প্রার্থী। আমাদের প্যানেলে বৈচিত্র্য আছে। এখানে যেমন ছাত্রশিবিরের ভাইয়েরা আছেন, তেমনি অন্যান্য প্লাটফর্মের সেরা শিক্ষার্থীরাও আছেন। প্যানেলের সবাই যার যার জায়গায় দক্ষ। আমরা মনে করি শিক্ষার্থীরা এ বিষয়টি বিবেচনা করবে।
তিনি বলেন, আমরা ইশতেহার ঘোষণার আগে গবেষণা ও জরিপ করেছি। শিক্ষার্থীদের চাওয়াগুলোই ইশতেহার তুলে ধরা হয়েছে। আমরা ১ বছরের মধ্যে এগুলো পূরণ করতে পারব। আমরা ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে জয়ে ধারা চাকসুতেও অব্যাহত থাকবে বলে আমরা আশাবাদী।
এদিকে জয়ের ব্যাপারে একইভাবে আশাবাদী ছাত্রদলের প্যানেলসহ অন্যান্য ১২ প্যানেলের প্রার্থীরাও। জয়ী হতে তারাও সকাল থেকে রাত অবধি ক্যাম্পাসজুড়ে চষে বেড়িয়েছেন। শিক্ষার্থীদের আশার বাণী শুনিয়েছেন। তুলে ধরেছেন নিজেদের ইশতেহারও।
ছাত্রদলের প্যানেলের জিএস পদপ্রার্থী আইয়ুবুর রহমান তৌফিক বলেন, ‘যখন ক্যাম্পাসে নির্বাচনী আলাপ ছিল না, নির্বাচন হওয়ার সুযোগ ছিলো না, তখনো কথা বলেছি, আওয়াজ তুলেছি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়েছি৷ সেটি শুধু দায়বদ্ধতার ও বিবেকের তাড়না থেকে করেছি। ইশতেহারে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা, চাওয়াগুলোই তুলে ধরেছি। আমরা বলেছি শিক্ষার্থীদের চাওয়াই আমাদের ইশতেহার। আমরা যে ইশতেহারগুলো দিয়েছি, সেগুলো আমরা এক বছরের মধ্যেই পূরণ করতে পারব বলে আমরা বিশ্বাসী। আর শিক্ষার্থীরা এখন সচেতন। তারা যোগ্য খুঁজেই ভোট দেবে।
বিনির্মাণ শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী আবির বিন জাবেদ কালবেলাকে বলেন, আমরা জয়ের ব্যাপারে পুরোপুরি আশাবাদী। ডাকসু ও জাকসুর মতো অবস্থা চাকসুতে হবে না। ওই দুই ক্যাম্পাসে শিবির আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে ছিল। এ কারণে শিক্ষার্থীরা তাদের ভোট দিয়েছে। কিন্তু ফ্যাসিজমের আগে ও পরে শিবির চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আধিপত্যের রাজনীতি করেছে। তাই এখানে আগের হিসাব চলবে না।
স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মাহফুজুর রহমান কালবেলাকে বলেন, আমরা মোটামুটি সব জায়গায় প্রচারণা চালিয়েছি। সবার কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছি। আমরা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে শিক্ষার্থীদের মতামত আমাদের পক্ষেই থাকবে বলে আশাবাদী।
সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদের জিএস পদপ্রার্থী সাকিব মাহমুদ রুমী বলেন, আমরাও জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। আমরা মনে করি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়িত্বশাসিত, এখানকার শিক্ষার্থীরা অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রভাবিত হবে না। তারা স্বাধীনচেতা। তারা যোগ্য দেখেই প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। তাই চাকসুতে ভিন্ন ফলাফল আসবে বলেই আমরা আশাবাদী।
প্যানেল নয়, যোগ্য দেখে ভোট দিবেন শিক্ষার্থীরা চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন ৯০৮ জন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছে ১৩টি প্যানেল। তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, তারা প্যানেলের চেয়ে যোগ্য প্রার্থীকেই প্রাধান্য দেবেন। যে পদে সর্বোচ্চ যোগ্য যিনি তাকেই ভোট দেবেন।
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী গিয়াস উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, আমি প্যানেল নয়, যোগ্য প্রার্থী দেখেই ভোট দেব।
একই বিভাগের সাইফুল ইসলাম বলেন, তিনটা পদে নির্দিষ্ট প্যানেলের প্রার্থীকে ভোট দেব। বাকি পদে যোগ্যদেরই প্রাধান্য দেব।
বন ও পরিবেশবিদ্যা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মো. আব্দুল্লাহ বলেন, ভোট অনেকেই চেয়েছেন। তবে আমরা কাছে যাকে যোগ্য মনে হয়, যিনি আমাদের চাওয়াগুলো পূর্ণ করতে পারবেন, তাকেই ভোট দেব। এক্ষেত্রে অবশ্যই প্যানেল প্রাধান্য পাবে না।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৫ অক্টোবর। এদিন সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। কেন্দ্রীয় সংসদে ২৬ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪১৫ জন প্রার্থী। অন্যদিকে ১৪টি হল ও একটি হোস্টেলে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন ৪৯৩ জন।
প্রতিটি হলে ১৪টি করে পদ রয়েছে। নির্বাচনে মোট ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ২৭ হাজার ৫১৮ জন শিক্ষার্থী। ভোটগ্রহণের জন্য পাঁচটি অনুষদ ভবনকে নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন। এসব ভবনে ১৫টি হলের নামে ১৫ ভোট কেন্দ্র হবে। নির্বাচনকে ঘিরে ইতিমধ্যে সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছে কমিশন।
মন্তব্য করুন