জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হকসহ চারজনকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। গতকাল রোববার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক ইমরান হোসাইনের পক্ষে ঢাকা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খাদেমুল ইসলাম এ নোটিশ পাঠান।
আইনি নোটিশ পাঠানো অন্যরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ড. কামালউদ্দিন আহমদ, প্রক্টর মোস্তফা কামাল ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. আইনুল ইসলাম।
নোটিশ পাওয়া সবাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির উপদেষ্টা। সাংবাদিক সমিতির নির্বাচনের তিন মাসের মধ্যে সমিতির নামে শুধু ফেসবুকে পোস্টার তৈরি করে গঠিত তথাকথিত আহ্বায়ক কমিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও বৈধ নির্বাচিত কমিটির দায়িত্ব পালনে সহযোগিতা করতে আইনি নোটিশে আহ্বান জানানো হয়।
নোটিশে বলা হয়, চলতি বছরের গত ২৭ ফেব্রুয়ারি জবি সাংবাদিক সমিতির ওই উপদেষ্টারা এবং সাধারণ সদস্যদের অংশগ্রহণে জবিসাসের কার্যনির্বাহী পরিষদ ২০২৩-২৪ মেয়াদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ১ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়। নির্বাচিত কমিটি গত ২০ মার্চ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যসহ জবিসাসের সদস্যগণের উপস্থিতিতে ১ বছরের জন্য দায়িত্ব গ্রহণ করে।
কিন্তু কমিটির মেয়াদের মাত্র তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে নির্বাচনে পরাজিত কয়েকজন সদস্য গত ১১ জুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে, যা জবিসাসের গঠনতন্ত্রের ৯ ধারা পরিপন্থি। কারণ এ ধরনের আহ্বায়ক কমিটি নির্বাচিত কমিটির মেয়াদকালে ঘোষণার এখতিয়ার কারও নাই।
জবিসাসের গঠনতন্ত্রের ৯ ধারায় বলা হয়েছে, কেবল দায়িত্ব গ্রহণের ১ বছর মেয়াদ শেষে পরবর্তী ১ মাসের মধ্যে নির্বাচিত কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে না পারলেই এ ধরনের আহ্বায়ক কমিটি করার বিধান গঠনতন্ত্র রয়েছে। তথাকথিত আহ্বায়ক কমিটির উল্লিখিত ১৫ ধারা অনুযায়ী সমিতিতে বিশেষ কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। এ ছাড়া তারা দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যদের স্বাক্ষর গ্রহণ ও প্রকাশ করেনি। শুধু ফেসবুকে চারজনের ছবি দিয়ে এক পোস্টার তৈরি করে আহ্বায়ক কমিটি হয়েছে দাবি করে পোস্ট করে, যা সম্পূর্ণ গঠনতন্ত্রবিরোধী।
এ ছাড়া এই অবৈধ আহ্বায়ক কমিটির কথা বলে কতিপয় সদস্য বহিরাগতাদের নিয়ে গত ১৩ জুন সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিক ও কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের ওপর হামলা করে। এ সময় তারা চাকু উঠিয়ে সমিতির সাধারণ সম্পাদক মামুন শেখকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করে। সেই হামলা ঠেকাতে গেলে সমিতির দপ্তর সম্পাদক সমকালের সাংবাদিক ইমরান হোসাইন, ঢাকাপোস্টের সাংবাদিক মাহতাব লিমনসহ সমিতির বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়ে ঢাকা মিডফোর্ড হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করে। এ ছাড়া সমিতির কার্যালয়ের লকার ভেঙে গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট তছনছ করে ও ড্রয়ার থেকে কিছু টাকা নিয়ে যায়।
অন্যদিকে সন্ত্রাসী হামলার পর কর্মরত সাংবাদিক ও কমিটির সদস্যদের সমিতির কার্যালয়ে প্রবেশে বাধা দিচ্ছে এবং পুনরায় হামলার হুমকি দিচ্ছে। এমতাবস্থায় বৈধ কমিটির সদস্যরা ও কর্মরত সাংবাদিকরা প্রাণের ভয়ে সমিতির কার্যালয়ে যেতে পারছেন না। এ সন্ত্রাসী হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সাংবাদিক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর একটি দরখাস্ত দেয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় তারা ফের হামলার হুমকি দিচ্ছে।
তাই নোটিশ প্রাপ্তির পর উপাচার্য, ট্রেজারার, প্রক্টর ও শিক্ষক সমিতির সভাপতিকে সাংবাদিক সমিতির উপদেষ্টা হিসেবে জবিসাসের তথাকথিত আহ্বায়ক কমিটির নামে বহিরাগতদের নিয়ে হামলা ও বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় আইনশৃঙ্খলা বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়। একইসঙ্গে সমিতির বৈধভাবে নির্বাচিত কমিটিকে নির্ভয়ে দায়িত্ব পালনের জন্য সুযোগ তৈরির ব্যবস্থা করার জন্য বলা হয়। অন্যথায় বৈধ কমিটি তাদের কার্যালয়কে নির্বিঘ্ন করতে এবং হামলার বিচারের পরে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য হবে বলে আইনি নোটিশে জানানো হয়।
মন্তব্য করুন