খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুকৃবি) নিয়োগ জটিলতায় পড়েছেন ৭৩ জন শিক্ষক। এ নিয়োগ জটিলতার কারণে পদোন্নতি আটকে আছে ৩৮ শিক্ষকের।
সোমবার (৯ অক্টোবর) খুকৃবির ৭৩ জন শিক্ষকের নিয়োগ সংক্রান্ত জটিলতার দ্রুত সমাধানের দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে মানববন্ধন কর্মসূচি আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। এ সময় অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি ঘোষণা করে শিক্ষকরা।
মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। গত ৩ আগষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৩ জন শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরবর্তীতে বিষয়টি পূণর্মূল্যায়নের জন্য একটি কমিটি গঠিত হয়।
ইতোমধ্যে সেই কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। কোনো অজ্ঞাত কারণে এখনো এই বিষয়ে কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২২ সালের ২২ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৮ জন প্রভাষক সকল শর্তপূরণ স্বাপেক্ষে পদোন্নতির আবেদন জমা দেন। প্রায় ১১ মাস অতিক্রম করলেও এখনো শিক্ষকদের পর্যায়োন্নয়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। এই পরিস্থিতির কারণে অনেক শিক্ষকই স্বনামধন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মানজনক স্কলারশিপ পেয়েও উচ্চ শিক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। এ ছাড়া পর্যায়োন্নয়নে বিলম্ব হওয়ায় শিক্ষক ও তাদের পরিবার মানসিক ও সামাজিকভাবে বিপর্যস্ত এবং অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
এদিকে শিক্ষকরা তাদের সকল একাডেমিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে গেছেন। তাছাড়া এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস বা পরীক্ষা একদিনও বন্ধ হয়নি। অবিলম্বে ৭৩ জনের নিয়োগ সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৮ জন শিক্ষকের পদোন্নয়ন নিশ্চিত করা ও তাদের অর্থনৈতিক ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করার জন্য এই মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
মানববন্ধনে শিক্ষকরা জানান, এই সমস্যাগুলোর সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনোপ্রকার প্রশাসনিক ও একাডেমিক কাজে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবেন।
খুকৃবি শিক্ষক সমিতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর বরাবর একাধিকবার স্মারকলিপির মাধ্যমে তাদের দাবি তুলে ধরেছেন বলে জানা গেছে।
শিক্ষকরা আরো জানান, এই অবস্থায় যেকোন অনাকাক্ষিত পরিস্থিতির দায়ভার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে নিতে হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খুকৃবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. আসাদুজ্জামান কালবেলাকে জানান, ‘আসলে কয়েকজন ব্যক্তি এই জটিলতা সৃষ্টির জন্য দায়ী। আমাদের ৩৮ জন শিক্ষকের পদোন্নয়ন হচ্ছে না এই জটিলতার জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন থেকে শুরু করে মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা আমাদের এই সমস্যাটাকে খুব একটা আমলে নিচ্ছেন না । তার প্রতিবাদ হিসেবেই আমাদের আজকের এই মানববন্ধন।’
এ দিকে খুকৃবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মো. আশিকুল আলম কালবেলাকে জানান, ‘প্রায় ১১ মাস ধরে ৭৩ জন শিক্ষকের এই নিয়োগ সংক্রান্ত সমস্যা চলমান আছে। এতে তারা আর্থিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। আমরা অনেকদিন অপেক্ষা করেও প্রশাসনের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখছি না। তাই আজকের এই মানববন্ধনের মাধ্যমে আমরা আমাদের এই সংকট নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন থেকে শুরু করে মন্ত্রণালয়ের নীতি নির্ধারকদের আহ্বান জানাচ্ছি।’
মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন এগ্রিকালচারাল কেমিস্ট্রি বিভাগের প্রভাষক রাকিবুল হাসান মো. রাব্বি, এনিমেল নিউট্রিশন বিভাগের প্রভাষক ডা. সবুজ ক্লান্তি নাথ, এগ্রিকালচারাল ফিনান্স কো-অপারেটিভ অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের প্রভাষক মাহবুবা আক্তার মিশু, সোসিওলজি এবং রুরাল ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রভাষক কারিমুন্নেসা, বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম, এনাটমি অ্যান্ড হিস্টোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা.স্বরূপ কুমার কুন্ডু এবং এনিমেল নিউট্রিশন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. তসলিম হোসেন।
সভাপতিত্ব করেন খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. আসাদুজ্জামান মানিক এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মো. আশিকুল আলম।
মন্তব্য করুন