খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) ক্যাফেটেরিয়ায় খাবারের দাম বাড়ানো হলেও সেই তুলনায় বাড়েনি খাবারের মান। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ক্যাম্পাস সংলগ্ন বাইরের দোকানগুলোর তুলনায় বেশি দামে খাবার বিক্রি করা হলেও মান তাদের চেয়ে কম।
জানা যায়, ক্যাফেটেরিয়ায় খাবারের দাম বেশি থাকায় শিক্ষার্থীরা সাধারণত আবাসিক হলে এবং ইসলামনগর রোডের (হলরোড) দোকানগুলো থেকে খাবার খান। তবে দুপুরে ক্লাস বিরতিতে হলে গিয়ে খাবার খেয়ে আশা একটু কষ্টকর তাই বেশি দামে খাবার খেতে হচ্ছে তাদের। কিন্তু দাম অনুযায়ী খাবারের মান এবং পরিমাণ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
দ্বিতীয় বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, এমনিতেই আমাদের মেসে থাকতে হয় ফলে খরচ বেশি হয়। ক্যাম্পাসে এসে অপেক্ষাকৃত কম দামে খাব কিন্তু সেখানেও দাম অনেক বেশি। কিন্তু খাবারের দাম বাড়লেও খাবারের মান আগের তুলনায় কমেছে। ফলে অনেক সময় না খেয়েই ক্লাস করতে হয়।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ক্যাফেটেরিয়ায় কর্মচারী সংকট। ক্যাফেটেরিয়ায় পরোটার নাম শাহি পরোটা দিয়ে রাখা হয় ১০ টাকা। দুই রকমের সিঙ্গারা ১০ ও ৬ টাকা, ডাল ১০ টাকা; যা হলে ৫ টাকা, ক্যাফেটেরিয়ায় খিচুড়ি ২৫ টাকা; যা হলে ২০ টাকা, ক্যাফেটেরিয়ায় মাছ ৪০, ৫০, ৬০ টাকা যেগুলো হলে ৩৫ টাকা, ক্যাফেটেরিয়ায় ছোট মাছ ৪০ টাকা যা হলে ৩০ টাকা, ক্যাফেটেরিয়ায় ভর্তা ১৫ টাকা যেটা হলে ৫ টাকা। কিন্তু দামের পার্থক্য ৫, ১০, ১৫ টাকা হলেও মানের ব্যবধান সে অনুযায়ী বেশি নয়।
এ ছাড়া ক্যাফেটেরিয়ায় বিরিয়ানির দাম ৮০ টাকা; যা হলে ৭০ টাকা, বারবিকিউ এবং গ্রিল এক অষ্টমাংশ ৭০ টাকা যেটি হল রোডে ৫৫-৬০ টাকা। প্রতিটি খাবারে হল অথবা হল রোডের দামের চেয়ে ৫-২০ টাকা বেশি দিয়ে খাবার কিনতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এ ছাড়া আবার সব সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার না পাওয়ারও অভিযোগ রয়েছে শিক্ষার্থীদের।
এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ডিসিপ্লিনের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এস এম ফাতিমা আক্তার বলেন, ঠান্ডা পরোটা সব সময়ই দেয় কিন্তু কয়েক দিন আগে বাসি সবজি আর গন্ধযুক্ত পরোটা দিয়েছিল। খাবারের দামও অনেক বেশি। যেমন অন্যান্য জায়গায় ৫ টাকায় সিঙ্গারা পাওয়া গেলেও এখানে ৬ টাকা। আর সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে তাদের আচরণে সর্বদা বিরক্তির ভাব। তারা এই ক্যাফেটেরিয়াকে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া নয় বরং হোটেল হিসেবেই চালাচ্ছে।
প্রথম বর্ষের অপর এক শিক্ষার্থী জাহিদুর রহমান জাহিদ বলেন, নতুন ক্যাফেটেরিয়ার খাবার প্রথম দিকে কিছুটা ভালো হলেও পরবর্তীতে এর মান কমতে থাকে। যেহেতু এটি ভার্সিটির ক্যাফে সেহেতু খাবারের মান এবং দাম দুটোর দিকেই নজর দেওয়া উচিত। কিন্তু বাইরে থেকে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন কাজে বা ঘুরতে আসেন তাদের একটা বড় অংশ ক্যাফেটেরিয়ায় খায় বলে তাদের ভালো বেচাকেনা হয়ে যায়।
ক্যাফেটেরিয়া পরিচালনার দায়িত্বে আছে নিউ আজমিরী গ্রিল অ্যান্ড বি বি কিউ নামের প্রতিষ্ঠান। জানতে চাইলে ক্যাফেটেরিয়ার ম্যানেজার মাসুম বলেন, আমরা চাইলেই খাবারের দাম বাড়াতে পারি না বা নিজেদের মতো করে দাম ঠিক করতে পারি না। ছাত্রবিষয়ক পরিচালকের দপ্তরকে অবগত করেই সব খাবারের দাম নির্ধারণ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাদের কোনো রকম ভর্তুকি দেওয়া হয় না। এখানে বিদ্যুৎ বিল থেকে শুরু করে যাবতীয় খরচ আমাদের বহন করতে হয় এবং সব ধরনের লাভ-লসও আমাদের।
এ ব্যাপারে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রবিষয়ক পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মোহাম্মদ রকিবুল হাসান সিদ্দিকী বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে প্রায়ই তদারকি করা হয়, প্রতিদিন করা সম্ভব হয় না। শিক্ষার্থীরা তাদের সমস্যা আমাদের জানালে আমরা ব্যবস্থা নেব। তারা যে মূল্য নির্ধারণ করেছে তা কখনোই হল রোড বা বাইরের দোকানগুলোর চেয়ে বেশি হবে না। আমরা শিক্ষার্থীদের অভিযোগ বিবেচনায় এনে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।
মন্তব্য করুন