প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা বিভাগীয় শহর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়া চবিসহ আরও ৫ টি কেন্দ্রে ‘এ’ ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তি কমানোর জন্যেই বিভাগীয় শহরে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু অভিভাবকদের কাছ থেকে শুনা যাচ্ছে ভিন্ন মন্তব্য। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার সমন্বয়হীনতায় চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা। বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাগুলো একদিন পর পর অনুষ্ঠিত হওয়ায় যাতায়াতের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন বলে দাবি করেছেন তারা।
সরেজমিনে দেখা যায় শনিবার (২ মার্চ) ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে তাদের দুর্ভোগের কথা।
কামাল হোসেন নামে একজন অভিভাবক তার মেয়েকে নিয়ে এসেছেন রংপুর থেকে। তিনি জানান, রংপুর থেকে রাত ৩ টায় চট্টগ্রাম এসেছি মেয়েকে নিয়ে। ভর্তি পরীক্ষার সময় ছাত্ররা এমনিতে মানসিক চাপে থাকে, তারপর যদি ১ তারিখ ঢাকাতে ২ তারিখ চট্টগ্রামে, ৫ তারিখ রাজশাহী গিয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয় তাহলে তারা কীভাবে নির্বিঘ্নে পরীক্ষা দিবে? তারা শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এসব ভেবে দেখা প্রয়োজন।
ঢাকা থেকে আসা পরীক্ষার্থী আবু সাইদ মোল্লা বলেন, গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে, আজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা হচ্ছে। বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সমন্বয় করে যদি ১ সপ্তাহ ভর্তি পরীক্ষার তারিখ পিছিয়ে দিত, তাহলে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের যাতায়াতের ক্ষেত্রে কষ্ট কম হত। আমি রাত ৩টায় চট্টগ্রাম এসে নেমেছি, নামার পর বাস, সিএনজি পাচ্ছি না, ভাটিয়ারী দিক দিয়ে আসতে দিচ্ছে না, কদমতলী হয়ে ঘুরে আসতে হয়েছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, তারা যেন ভর্তি পরীক্ষার সময় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে সমন্বয় করে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করেন।
এ বিষয়ে ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার সমন্বয়ক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাসিম হাসান বলেন, চবির ভর্তি পরীক্ষা এবারই প্রথম বিভাগীয় শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথমবার হিসেবে আমরা ঢাবি ও রাবিতেই পরীক্ষা নিয়েছি। এতে আমাদের অভিজ্ঞতা হয়েছে। আগামীবছর থেকে পরীক্ষার কেন্দ্র আরও বাড়ানো হতে পারে। যাতে পরীক্ষার্থী যেই কেন্দ্রে ইচ্ছুক সেখানেই পরীক্ষা দিতে পারে।
এদিকে ভর্তি পরীক্ষার হল পরিদর্শন করে চবি উপাচার্য বলেন, এ বছর আমরা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কথা চিন্তা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছি। আমরা সুষ্ঠুভাবেই পরীক্ষার সবরকম প্রস্তুতি নিয়েছি। এ বছর আমরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও ৫টি কেন্দ্রে পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছি। আশা করছি এর মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তি কমে আসবে।
উল্লেখ্য, আজ চবির ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেলা ১১টায় ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়ে শেষ হয়েছে দুপুর ১২টায়। এবার চট্টগ্রামের বাইরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও অনেক পরীক্ষার্থী দেরিতে আবেদন করায় চবিতে এসেই তাদেরকে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয়েছে। বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘এ’ ইউনিটের অধীনে রয়েছে চারটি অনুষদ। এগুলো হলো বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেরিন সাইন্স অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদ। এই চার অনুষদে মোট আসন রয়েছে ১ হাজার ২১৫ টি এবং আবেদন করেছে ৯৯ হাজার ৫২১ জন শিক্ষার্থী। ‘এ’ ইউনিটে আসন প্রতি লড়েছেন ৮১ জন।
মন্তব্য করুন