ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৪, ১০:০৪ পিএম
আপডেট : ০৫ মার্চ ২০২৪, ১০:৪২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

সাংবাদিক লাঞ্ছনার অভিযোগ ঢাবির এস্টেট ম্যানেজারের বিরুদ্ধে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট ম্যানেজার (ভারপ্রাপ্ত) ফাতেমা বিনতে মুস্তাফা। ছবি : কালবেলা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট ম্যানেজার (ভারপ্রাপ্ত) ফাতেমা বিনতে মুস্তাফা। ছবি : কালবেলা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) কর্মরত এক সংবাদকর্মী পেশাগত কাজের উদ্দেশ্যে সংবাদ সংশ্লিষ্ট তথ্য চাওয়ায় তাকে লাঞ্ছনা ও তিরস্কারের অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট ম্যানেজার (ভারপ্রাপ্ত) ফাতেমা বিনতে মুস্তাফার বিরুদ্ধে।

এই ঘটনায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে মঙ্গলবার (৫ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মমতাজ উদ্দিন আহমদ বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ছাব্বিরুল ইসলাম। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক।

অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী উল্লেখ করেন, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর ভাসমান দোকান নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য আমি এবং অনলাইনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডেইলি ক্যাম্পাসের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক গতকাল এস্টেট অফিসে যাই। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুমোদিত দোকানসমূহের তালিকা চাইতে এস্টেট ম্যানেজার ফাতেমা বিনতে মুস্তাফার সাথে যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের কোনো প্রকার সহায়তা না করে তথ্য চাওয়ায় মৌখিকভাবে তিরস্কার করেন।

তিনি লেখেন, এস্টেট ম্যানেজার আমাদেরকে তার অফিসের দরজার পাশেই দাঁড় করিয়ে রেখে রূঢ়ভাবে বলেন, ‘তোমরা কি পুলিশ নাকি সিন্ডিকেট মেম্বার যে তোমাদের এই তথ্য দিতে হবে? লিখিত আবেদন নিয়ে আসো আগে।’ তার ভাষ্যমতে, আমরা এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নই যাদের তিনি এই তথ্য দেবেন।

ছাব্বিরুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুমোদিত দোকানের তালিকা এমন কোনো তথ্য নয় যেটা দিতে তার আপত্তি থাকার কথা। এর মাধ্যমে তার কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব পরিলক্ষিত হয়। যদি এটি প্রশাসনের কোনো গোপনীয় তথ্য হয়ে থাকত এবং লিখিত আবেদনের প্রয়োজনীয়তাও থাকত তাহলেও তিনি যেভাবে তিরস্কার করে কথা বলেছেন সেটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে তথ্যের প্রয়োজনে যদি একজন সাংবাদিককে তিরস্কারের স্বীকার হতে হয়, প্রতিবার লিখিত আবেদন নিয়ে যেতে হয় তাহলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সাংবাদিক সাংবাদিকতার চর্চা করতে পারবে না। এটি স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে বাধা।

ফাতেমা বিনতে মুস্তাফার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে দ্য ডেইলি অবজারভারের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি তাওসিফুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকাগুলোতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দকৃত বাসার অধিকাংশ বাসা (সংখ্যায় যা কয়েকশ) অবৈধভাবে বাহিরাগতদের ভাড়া দেওয়া নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছি। যেহেতু, বাসা বরাদ্দ বিষয়টি এস্টেট অফিস দেখে, তাই আমি এস্টেট ম্যানেজার ফাতেমা আপাকে কল দিই। তিনি মোবাইলে কথা বলতে অসম্মতি জানান এবং অফিশিয়াল বিষয় অফিসে গিয়ে কথা বলতে বলেন। তাছাড়াও তার বিরুদ্ধে বছরের পর বছর এই অনিয়ম দেখেও চুপ থাকা এবং বাসা অভিযানের সময় আগে থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জানিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ছিল। পরবর্তীতে আমি মার্চের ৪ তারিখ উনার অফিসে যাই। উনার অফিসে যাওয়া মাত্র উনি মেজাজ হারিয়ে বলেন, ‘আমি অনেক ব্যস্ত। তোমাদের কাজ করব নাকি, আমার কাজ করব? তোমাদের আর কোনো কাজ নাই? তুমি যাও তো ভাই যাও।’

তাওসিফ আরও জানান, তিনি আমাকে একটা কথাও বলার সুযোগ দেননি। তিনি অফিশিয়াল কাজে ব্যস্ত থাকতে পারেন। সেটি আমাকে স্বাভাবিকভাবে বললে আমি উনার অবসর সময়ে যোগাযোগ করতাম। কিন্তু উনার ভাষা ছিল খুবই রুঢ় এবং আচরণ ছিল আক্রমণাত্মক।

দৈনিক সংবাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি খালেদ মাহমুদ বলেন, আমিও বেশ কয়েকবার সংবাদের উদ্দেশ্যে তার কাছে তথ্য চেয়ে পাইনি। বরং হয়রানির শিকার হয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি সুরক্ষা, পরিচ্ছন্নতা, নিরাপত্তা, বাসা বরাদ্দসহ সব কাজ এস্টেটের অধীনে। কিন্তু বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে। এস্টেট অফিসের প্রধান হিসেবে এসবের দায় তাকে নিতে হবে। দায় এড়ানোর জন্যই তিনি সাংবাদিকদের সাথে বিরূপ আচরণের পথ বেছে নিয়েছেন।

অভিযোগ প্রসঙ্গে মন্তব্য জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট ম্যানেজার (ভারপ্রাপ্ত) ফাতেমা বিনতে মুস্তাফা কালবেলাকে বলেন, আমি যে তাদের সাথে খারাপ আচরণ করেছি, সেটা তারা প্রমাণ করুক। তারা যখন এসেছিল তখন আমি বলেছিলাম যে, ‘বাবা আমি ব্যস্ত আছি’। এরপর তারা যে তথ্য আমাদের কাছে চেয়েছে সেটার ব্যাপারে আমি বলেছি যে, লিখিত আকারে দাও, অনুমোদন করে তারপর তোমাদেরকে সেটা দেব। তারা বলেছে যে, ‘এক্ষুনি দিতে হবে’। এক্ষুনিই তো আমরা দিতে পারব না। আমরা অফিসে কাজ করি, কাজের একটা ধারা আছে। ব্যস্ততা আছে। এক্ষুনি দিতে হবে, এক্ষুনি তো কিছু হয় না।

তিনি আরও বলেন, আমার বিরুদ্ধে লেখা হচ্ছে। আরও লেখা হোক। আশা করি, আমার ভালোই হবে। একটু পরিচিত থাকা উচিত, আমাকে মানুষের একটু চেনা-জানা উচিত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মমতাজ উদ্দিন আহমদ কালবেলাকে বলেন, আমার অফিসে একটি অভিযোগপত্র এসেছে। সেটার একটা সফটকপি আমি পেয়েছি এবং বিষয়টি সম্পর্কে জেনেছি। এটা যেহেতু অফিসিয়ালি লিখিত দেওয়া হয়েছে, সেহেতু এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অফিসিয়ালিই কাজ করবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

হল ছাড়ছেন বাকৃবির শিক্ষার্থীরা, আন্দোলনের ঘোষণা একাংশের

ভিসা নিয়ে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের কঠোর বার্তা

গোলের বদলে ডিম! পাখির কারণে মাঠছাড়া ফুটবলাররা

আফগানিস্তানে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, নিহত বেড়ে ২৫০

নিজেদের অজান্তেই গাজায় বড় সফলতা পেল ইসরায়েল

সিইসির সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বৈঠক দুপুরে

ইন্দোনেশিয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মারমুখী অবস্থান, আন্দোলনে নতুন মোড়

প্রিন্স মামুনের সেলুন কেনা নিয়ে মুখ খুললেন অপু বিশ্বাস

দুপুরের মধ্যে ঢাকায় বজ্রবৃষ্টির পূর্বাভাস 

দেশে কত দামে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে আজ

১০

আফগানিস্তানে কেন বারবার ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানছে

১১

সাদাপাথরে যে সৌন্দর্য ফিরবে না আর

১২

আগস্টের ৩০ দিনে রেমিট্যান্স আসেনি ৯ ব্যাংকে

১৩

বায়ুদূষণের তালিকায় শীর্ষ পাঁচে ঢাকা

১৪

মাথায় টাক পড়ছে? ৫ অসুখের লক্ষণ হতে পারে চুল পড়া

১৫

৪৭তম ট্রফি জেতা হলো না মেসির, ফাইনালে মায়ামির লজ্জার হার

১৬

১৩০ বছরের ‘জিয়া বাড়ি’ আজও অবহেলিত

১৭

ফের আলোচনায় ভারতের সুপার স্পাই অজিত দোভাল

১৮

বিবিসি নাকি ভাই ভাই চ্যানেল, নারী সংবাদিক ভাইরাল

১৯

সুস্থ থাকতে রাতে ভাত খাবেন, না রুটি? যা বলছেন পুষ্টিবিদ

২০
X