রাহাত হাসান মিশকাত, শাবিপ্রবি
প্রকাশ : ২১ মে ২০২৪, ০৮:১২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বিশ্ব চা দিবসে চা শিল্পে বাংলাদেশের সংকট-সম্ভাবনা

শাবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অধ্যাপক ও চা গবেষক ড. ইফতেখার আহমেদ। ছবি : কালবেলা
শাবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অধ্যাপক ও চা গবেষক ড. ইফতেখার আহমেদ। ছবি : কালবেলা

আজ বিশ্ব চা দিবস। বর্তমানে বিশ্বে চা উৎপাদনে বাংলাদেশ নবম। সূচনালগ্ন থেকেই চা সর্বত্র পানীয়, বিশ্বব্যাপী তাৎপর্যপূর্ণ সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব বহন করে আসছে। বাংলাদেশের চা-এর বহুমুখী ও অর্থনৈতিক প্রভাব রয়েছে যা আর্থ-সামাজিক, শ্রম সমস্যা নিরসন ও ভবিষ্যতে অপার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্ব চা দিবসে কালবেলার সঙ্গে কথা বলেন বাংলাদেশের চা শিল্পের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ, সংকট ও সম্ভাবনা নিয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টি টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও চা গবেষক ড. ইফতেখার আহমেদ।

বিশ্ব চা দিবসের তাৎপর্য সম্পর্কে অধ্যাপক ড. ইফতেখার আহমদ বলেন, চা উৎপাদনকারী দেশগুলো ২০১৯ সালে ২১ মে বিশ্ব চা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে ২০১৯ সালের ২১ ডিসেম্বর জাতিসংঘ চা দিবস ঘোষণা করে। পরের বছর থেকে জাতিসংঘ প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ব চা দিবস পালন করে আসছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশের চা-শিল্প অনেক এগিয়েছে। এ পর্যন্ত ২১টি উচ্চফলনশীল জাতের ক্লোন অবমুক্তকরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া খরাসহিষ্ণু ও উন্নত ফলনের আরও দুটি ক্লোনও অবমুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশে চা-শিল্পের বর্তমান বয়স ১৭৮ বছর। বর্তমান বাংলাদেশ থেকে চা রপ্তানি হচ্ছে পাকিস্তান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিশ্বের ২৫টি দেশে।

বাংলাদেশের চা এর পথচলা নিয়ে অধ্যাপক ড. ইফতেখার আহমদ আরও বলেন, বাংলাদেশে প্রথম চা বাগান করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় ১৮২৮ সালে। ১৮৪০ সালে চট্টগ্রাম ক্লাব প্রথম চা-গাছ রোপণ করা হয়। এরপর ১৮৫৪ সাল থেকে সিলেটে বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু হয়। সে বছর সিলেট শহরের উপকণ্ঠে মালনিছড়া চা বাগান প্রতিষ্ঠিত হয়। মূলত তখন থেকেই চা এ দেশে একটি কৃষি-শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

চা শিল্পের সংকট-সম্ভাবনা নিয়ে এ চা গবেষক বলেন, চা শিল্প একটা সম্ভাবনার নাম কিন্তু আজকের দিনেও বেশ কিছু জটিল চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। বর্তমানে বিশ্ববাজারে চায়ের দাম কমাতে উৎপাদন খরচ মেটাতেও ব্যর্থ হচ্ছে উৎপাদনকারীরা। ফলে তারা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। দেশে চা-শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ। বাংলাদেশের ৯৫ ভাগের বেশি নারী চা-শ্রমিকের কোনো নিয়োগপত্র নেই। এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি নারী। চা-শ্রমিকদের মাসিক বর্তমান গড় আয় ৪ হাজার ৯৮২ টাকা (প্রায়)। অধিকাংশ শ্রমিকের ক্ষেত্রে মজুরি প্রদানের আগে কোনো বেতন রশিদ দেওয়া হয় না। পাশাপাশি নারী কর্মীদের যৌন হয়রানির মতো ঘটনা তো রয়েছে।

বাংলাদেশের চা এর বর্তমান অবস্থা নিয়ে চা গবেষক আরও বলেন, নিলামের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ মৌসুমে চট্টগ্রামে ৫০টি নিলামে চা বিক্রি হয়েছে ৯ কোটি ৪৮ লাখ কেজি। প্রতি কেজিতে দাম মিলেছে ১৭১ টাকা ৯১ পয়সা। চা উৎপাদনের উচ্চ মান বজায় রাখা যেখানে বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতার জন্য অপরিহার্য, তবুও জলবায়ু পরিবর্তন, কীটপতঙ্গের উপদ্রব এবং সেকেলে কৃষি অনুশীলনের মতো কারণগুলো চা এর গুণমান এবং ফলন উভয়কেই নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করছে।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চায়ের প্রভাব উল্লেখ করে তিনি বলেন, চা বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে উল্লেখ করা যায়। পাটের পর দ্বিতীয় সর্বাধিক রপ্তানিকৃত অর্থকরী ফসল হিসেবে এর অবদান আমরা ভোগ করে আসছি। চা শিল্প এর দরুন আজ জাতীয় জিডিপিতে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখে এবং প্রায় ৪ মিলিয়ন লোকের কর্মসংস্থান ও সরাসরি তাদের জীবিকাকে প্রভাবিত করে আসছে। তবে চা শিল্পের রপ্তানি বাড়াতে হলে উৎপাদিত চায়ের গুণগত মান উন্নত করার বিকল্প নেই।

বাংলাদেশে চা শিল্পের সম্ভাব্যতা ও বর্তমান অবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের চা বাগানের সম্মিলিত উৎপাদন ক্ষমতা অভ্যন্তরীণ এবং রপ্তানি চাহিদা উভয়ই পূরণ করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পরিসংখ্যানের দিকে তাকালেই এর শক্তিশালী অবস্থান পরিলক্ষিত হয়। দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬৮টি বাগান ও ক্ষুদ্র চাষিদের বার্ষিক চা উৎপাদনের চূড়ান্ত হিসাব অনুযায়ী, বার্ষিক উৎপাদন ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেড়েছে। ২০২২ সালের ৯৩ দশমিক ৮৩ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয়েছিল এবং গত বছরের ফলন ১৭০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। উৎপাদনশীলতা ও গুণগতমান বৃদ্ধির জন্য আধুনিক কৃষি পদ্ধতি ও প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নতুন প্রজাতির চা এর জাত উদ্ভাবন এবং উন্নত চাষের কৌশল প্রয়োগ করা এখন সময়ের দাবি।

বিশ্ববাজারে চা এর চাহিদা সম্পর্কে তিনি বলেন, বাংলাদেশে মূল বাগান এবং ফাঁড়ি বাগান মিলিয়ে মোট ২৫১টি চা বাগানে মোট জনসংখ্যা সাত লক্ষাধিক। ২৫১টি চা বাগানের মধ্যে ১৬৩টি মূল বাগান ও ৮৮টি ফাঁড়ি বাগান। যেসব চা বাগানে চা প্রক্রিয়াজাতকরণ ফ্যাক্টরি রয়েছে, সেসব বাগানকে মূল বাগান এবং ফ্যাক্টরিবিহীন চা বাগানগুলোকে ফাঁড়ি বাগান হিসেবে অভিহিত করা হয়। বর্তমানে বিশ্ব বাজারে বর্তমানে চায়ের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৈশ্বিক বিষয়বলির দিকে তাকালে ধারণা করা যায়, ২০১২-২৫ সাল অবধি এক ব্যাপক চা বিপ্লব শুরু হয়েছে। এমনকি ২০২২ সালে ৬.৭ বিলিয়ন কিলোগ্রাম চা কনজিউম করেছে এবং এই চিত্র থেকেই আশা করা যায়, আগামী ২০২৫ সাল নাগাদ এর পরিমাণ ৭.৪ বিলিয়নে গিয়ে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

চা শিল্পের উন্নয়নে চা-প্রযুক্তিবিদদের অবদান সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, দেশের চা প্রযুক্তিবিদরা চা শিল্পের বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এতে চায়ের নতুনত্ব, নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার, চা বিতরণ ও উদ্ভাবন, দক্ষতাসহ সবকিছুতেই টেকসই উন্নয়ন নিয়ে এসে চা শিল্পকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। চা শ্রমিকদের নিত্যদিনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করা, টেকসই অনুশীলন নিশ্চিত করা এবং শিল্পের অর্থনৈতিক তাৎপর্যকে স্বীকৃতি দেওয়া একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

গাইবান্ধায় আ.লীগ কার্যালয় ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ, নিয়ে গেল গ্রিল-রড

৫০০ টাকার জন্য দিনমজুরকে ছুরিকাঘাতে হত্যা

যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের ক্ষমার বিষয়ে মাহফুজ আলমের স্ট্যাটাস

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ

ঢাকার বাতাসও আজও ‘অস্বাস্থ্যকর’ 

মাকে ভালোবাসি বলার দিন আজ 

ইইউর পররাষ্ট্রনীতি প্রধানের সঙ্গে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রীর ফোনালাপ

চট্টগ্রামে বাংলাদেশ একাডেমি অব ডার্মাটোলজির আয়োজনে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত

দাঁড়িয়ে থাকা লরিতে বাসের ধাক্কা, চালক নিহত

আশা জাগিয়ে অল্প সময়েই ভেঙে পড়ল যুদ্ধবিরতি!

১০

সিলেট থেকে ৪১৯ যাত্রী নিয়ে প্রথম হজ ফ্লাইট বুধবার

১১

আজ যেমন থাকবে ঢাকার আবহাওয়া

১২

ব্রহ্মপুত্র ন‌দে গোসলে নেমে নিখোঁজ ২ ভাই

১৩

১১ মে : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১৪

পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে বিএসএফ জওয়ান নিহত

১৫

রোববার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

১৬

১১ মে : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৭

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা, যুদ্ধবিরতির সর্বশেষ খবর

১৮

সীমান্তের ২০০ গজের মধ্যে বিএসএফের দুই বাঙ্কার নির্মাণ

১৯

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ, কড়া বার্তা ভারতের

২০
X