দুই পক্ষের সমন্বয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) বঙ্গবন্ধু পরিষদের একীভূত আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত ২৯ মে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এই কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুল আরফিন সভাপতি ও ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন।
তবে কেন্দ্রকে ভুল বুঝিয়ে কমিটির অনুমোদন নেওয়া হয়েছে দাবি করে পরিষদের অন্তর্ভুক্ত প্রশাসনপন্থি শিক্ষকরা এই কমিটি বাতিল দাবি করেছেন। কমিটি বাতিল চেয়ে শতাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত একটি আবেদন তারা কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের কাছেও পাঠিয়েছেন।
জানা যায়, ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্র থেকে আইসিটি বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমানকে সভাপতি ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুল আরফিনকে সাধারণ সম্পাদক করে ইবি বঙ্গবন্ধু পরিষদের কমিটি ঘোষণা করে। পরে এ কমিটিকে অগণতান্ত্রিক দাবি করে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুহুল কে এম সালেহকে সভাপতি ও বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু হেনা মোস্তফা জামালকে সাধারণ সম্পাদক করে গঠন করা হয় বঙ্গবন্ধু পরিষদ শিক্ষক ইউনিট। কেন্দ্রের নির্দেশনার তোয়াক্কা না করেই এ কমিটি ঘোষণা করে তারা।
সর্বশেষ গত ৬ মার্চ ২৫ সদস্যবিশিষ্ট দুই বছর মেয়াদি কমিটি গঠন করে শিক্ষক ইউনিট। কমিটিতে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমানকে সভাপতি এবং হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরীনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
এদিকে মাহবুবুর রহমান উপ-উপাচার্যের দায়িত্ব পাওয়ায় পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ও শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন। বর্তমানে তিনি হজ পালন করতে সৌদি আরবে আছেন।
এ অবস্থায় গত ২৯ মার্চ পরিষদের সহসভাপতি ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মামুনুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এবং শিক্ষক ইউনিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত একীভূত আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। তবে কেন্দ্রীয় কমিটিকে ব্ল্যাকমেইল করে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন পরিষদের সহসভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন।
এ ঘটনায় গত ৪ মার্চ বঙ্গবন্ধু পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের কাছে কমিটি স্থগিত চেয়ে শতাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত একটি আবেদন পাঠানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, যে মুহূর্তে শেখ হাসিনা ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শতাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তার সমন্বয়ে গঠিত বঙ্গবন্ধু পরিষদ কাজ করে যাচ্ছে সেই মুহূর্তে আপনার স্বাক্ষরিত নতুন আহ্বায়ক কমিটি দেখে আমরা হতবাক। আমরা এই কমিটি সম্পর্কে অবগত নই। এই কমিটি স্থগিত করে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে নতুন কমিটি গঠনের অনুরোধ জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন কালবেলাকে বলেন, তারা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে কেন্দ্রকে ভুল বুঝিয়ে এ কমিটি নিয়েছে। কেন্দ্রের কাছে পাঠানো চিঠিতে তারা উভয়পক্ষের সঙ্গে বসে সর্বসম্মতিক্রমে এ কমিটি গঠনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানায়। অথচ আমরা ৯৫ শতাংশ সদস্য এ বিষয়ে কিছুই জানতাম না। ঘরের ভেতরে বসে কয়েকজন মিলে তারা এটি করেছে। যারা মিথ্যার আশ্রয় নেয় তারা বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতৃত্ব দেওয়ার অধিকার রাখে না।
এ বিষয়ে নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মাহবুবুল আরফিন বলেন, এটি শুধু একটি আহ্বায়ক কমিটি। তিনি মাস পর আমাদের কাউন্সিল হবে। সেখানে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ইবিতে বঙ্গবন্ধু পরিষদের কমিটি নেই। তাই ক্ষণস্থায়ীভাবে এই কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আমরা গণতান্ত্রিকতায় বিশ্বাস করি। আমরা কোনো পকেট কমিটি চাই না। আগামী ৩ মাসের মধ্যে যদি এই কমিটি নির্বাচনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে ব্যর্থ হয় তাহলে এই আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
মন্তব্য করুন