চবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১১ জুন ২০২৪, ০৮:৫৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

পার্বত্য অঞ্চলে কিছু গোষ্ঠী বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে : চবি উপাচার্য

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট মিলনায়তনে চট্টগ্রাম সেন্টার ফর রিজিওনাল স্টাডিজ বাংলাদেশ (সিসিআরএসবিডি) এর আয়োজনে সেমিনার। ছবি : কালবেলা
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট মিলনায়তনে চট্টগ্রাম সেন্টার ফর রিজিওনাল স্টাডিজ বাংলাদেশ (সিসিআরএসবিডি) এর আয়োজনে সেমিনার। ছবি : কালবেলা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেছেন, পার্বত্য অঞ্চলে কিছু গোষ্ঠী উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এ দেশের মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো আমাদের সংবিধানে বিস্তারিত বলা আছে। বঙ্গবন্ধু এ বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা রাখতেন বলেই সংবিধানে সব ধর্ম বর্ণের মানুষের অধিকার সমানভাবে যুক্ত করেছেন।

মঙ্গলবার (১১ জুন) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট মিলনায়তনে চট্রগ্রাম সেন্টার ফর রিজিওনাল স্টাডিজ বাংলাদেশ (সিসিআরএসবিডি) এর আয়োজনে এই সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।

চবি 'শান্তি ও উন্নয়নের পথে পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র সংঘাত ও তথ্য বিভ্রান্তির বিরুদ্ধে ছাত্র-যুবসমাজের ভূমিকা' শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলে চলমান অস্থিরতা রুখতে যুবসমাজের ভূমিকার কথা তুলে ধরা হয় এই সেমিনারে। আলোচনায় এসেছে কেএনএফ ইস্যু, পাবর্ত্য অঞ্চলে শিক্ষা ব্যবস্থা, ভূরাজনীতিসহ বিভিন্ন ইস্যু।

চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, শান্তিচুক্তির ফলে এই অঞ্চলের স্থিরতা ও উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে। সরকার নৃগোষ্ঠীদের ভাষাকে সংরক্ষণের জন্য উদ্যাগে নিয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটের মাধ্যমে। নৃগোষ্ঠীদের সবধরনের সুযোগ সুবিধা দিয়ে শিক্ষার সুযোগ করে দিচ্ছে। সংবিধানের ২৮ ও ২৯ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে সব জাতি গোষ্ঠীর অধিকার রক্ষা করা হয়েছে। তবে বর্তমান সমস্যাগুলোর পেছনে রয়েছে এই অঞ্চলের তথা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল এবং এর সম্পদ। এই সমস্যাকে প্রথমে বুঝতে হবে। এর সমাধান খুঁজতে হবে আন্তর্জাতিক দৃষ্টান্ত থেকে। আমরা দেখেছি সিয়েরা লিওনে, রুয়ান্ডায় এবং নেপালের গৃহযুদ্ধে তাদের যুব ও তরুণ সমাজ কীভাবে ভূমিকা রেখেছে। আমাদেরও তা করতে হবে।

বিশেষ অতিথি হিসেবে চবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের অশান্তি শুধু এদেশে নয় ভারত, মিয়ানমারেও ছড়িয়ে পড়েছে। এতে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যহত হচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে দেশের সেবায় নিয়োজিত থেকে নিজেকে তথ্য বিভ্রান্তির বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চবির অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও সিসিআরএসবিডির সদস্য তন্ময়ী হাসান। তিনি বলেন, সিসিআরএসবিডি দক্ষিণ পূর্ব বাংলাদেশের একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক। এর কাজের পরিধিতে রয়েছে নিরাপত্তা, ভূরাজনীতি, সংঘাত প্রশমন, আঞ্চলিক স্থিতিশীল, যোগাযোগ ও সম্পর্ক উন্নয়নসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহ।

এ সময় সেমিনারে ধারণাপত্রের ওপর বক্তব্য রাখেন রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও সিসিআরএসবিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মাহফুজ পারভেজ। তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিকে সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করতে হবে। শান্তি একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এখানে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে চূড়ান্ত করতে হবে। পার্বত্য এলাকার পিছিয়ে পড়া তরুণ সমাজকে আদর্শ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। ইতিহাস ও অধিকার সম্পর্কে তাদেরকে আরও সমৃদ্ধ হতে হবে। অস্ত্রের মুখে কোনো সমস্যার সমাধান করা কখনোই সম্ভব নয়। আমরা চাই আমাদের জ্ঞানভিত্তিক গবেষণার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের মতামতকে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্ষদ পর্যন্ত পৌঁছে দিতে ।

এ সময় আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের জীবনমানের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন ছিল একটা শান্তি চুক্তি। তা সম্পন্ন করা হয়েছে। মানুষকে মূলধারার উন্নয়নের সঙ্গে একীভূত করতে সেখানে আঞ্চলিক পরিষদ গঠন করা হয়েছে। তবে সম্প্রতি কুকি-চীন নামক সশস্ত্র বাহিনী বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছে। যার কারণে সরকারের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে বাধা তৈরি হতে পারে।

ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের কলকাতায় চীন-লুসাই নামে একটি সেমিনার করা হয়। সেখানে এই অঞ্চলকে তিনটি ভাগ করা হয়। এতে অঞ্চলটি বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমার এই তিন অংশ বিভক্ত হয়ে যায়। শাসনভার পায় বার্মার কমিশনার। পরে নেতাজি সুভাষ বসু এই বৈচিত্র্যময় জাতীয়তাবাদকে এক করে ফেলেন। এখন তবে উগ্র জাতীয়তাবাদের একটা ধারণা বিকশিত হচ্ছে। তাই সিসিআরএসবিডির কার্যক্রমের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

মানিকছড়ি মং রাজবাড়ির রাজকুমার সুই চিং প্রু বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি চুক্তির পরে সেখানে শান্তির পরিবর্তে অশান্তি বিরাজমান। তাই প্রথমে অশান্তির কারণগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো সমাধান করতে হবে। পার্বত্য অঞ্চলে অশান্তির অন্যতম কারণ হলো- ভূমি বিরোধ, রাজনৈতিক অস্থিরতা, জাতিগত বৈষম্য এবং বিদ্বেষ। এগুলোই এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা প্রধান অন্তরায়। বিশ্বের অন্যান্য দেশ যেমন সিয়েরালিওন ও নেপালের গৃহযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে যুবসমাজের ভুমিকা থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি। সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন, চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের, বিশেষ অতিথি ছিলেন, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সেকান্দর চৌধুরী। অনুষ্ঠানে ধারণাপত্র প্রদান করেন রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও সিসিআরএসবিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মাহফুজ পারভেজ। অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক ছিলেন মানিকছড়ি মঙ রাজবাড়ির রাজকুমার সুই চিং প্রু, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম, আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুক।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সুখবর পাচ্ছেন ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনে অনুত্তীর্ণরা

‘হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে থুতু ছিটিয়েছিলেন শেখ হাসিনা’

ভারতে রাসায়নিক কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ, নিহত ১২

গাজায় যুদ্ধবিরতি ঠেকাতে মরিয়া ইসরায়েলের এই মন্ত্রী

ইসলামী ব্যাংকিংয়ের কল্যাণভিত্তিক বিনিয়োগ পদ্ধতিসমূহ

এশিয়া কাপ ইন্টারন্যাশনাল ল’ মুট কোর্ট প্রতিযোগিতায় যাচ্ছে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি

ইরানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করছে ইসরায়েলিরা, গ্রেপ্তার ৩

সিদ্ধান্ত বদলেছেন মুরাদনগরের সেই নারী, চালাবেন মামলা

আগুন নেভাতে গিয়ে গুলিতে ফায়ার সার্ভিসের ২ কর্মী নিহত

দুদিন পর কাজে ফিরেছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা

১০

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোনালাপ 

১১

নিলামের মঞ্চে শেবাগ-পুত্র ও কোহলির ভাতিজা

১২

১৪৪ ধারা ভেঙে যমুনা যাওয়ার চেষ্টা, পুলিশের বাধা

১৩

মহাসমাবেশের ঘোষণা খতমে নবুওয়াতের

১৪

পেছাতে পারে ভারতের বাংলাদেশ সফর

১৫

‘ভিআইপি গেটের স্ক্যানারে অস্ত্রের ম্যাগাজিন ধরা পড়ল না কেন’

১৬

‘মরি নাই রে ভাই!’ মাহি নিজেই দিলেন জীবিত থাকার খবর

১৭

১ জুলাই ঢাকায় জুলাই ঐক্যের পদযাত্রা

১৮

ডিসেম্বর না মে—কবে মাঠে গড়াবে বিপিএল?

১৯

‘দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র গঠনে সহায়তা করবে ব্যবসায়ীরা’

২০
X