ঢাকা কলেজ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৩৭ এএম
অনলাইন সংস্করণ

‘ঢাবি শিক্ষকরা ৭ কলেজকে হাতছাড়া করতে রাজি হননি’

ঢাকা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খন্দকার। পুরোনো ছবি
ঢাকা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খন্দকার। পুরোনো ছবি

অনেক বেশি আর্থিক লাভ পাওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষকরা সাত কলেজকে হাতছাড়া করতে রাজি হননি বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক সাত কলেজ সমন্বয়ক ও ঢাকা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খন্দকার।

সোমবার (২৭ জানুয়ারি) রাত ৮টার দিকে কলেজগুলোর অধিভুক্তি বাতিলের ঘটনায় সন্তোষ প্রকাশ করে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পোস্টে একথা লিখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য।

অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, অবশেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হতে বের হলো ঢাকার সরকারি ৭ কলেজ। আলহামদুলিল্লাহ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমার বিশ্ববিদ্যালয়। তবুও বলতে বাধ্য হচ্ছি, অধিভুক্ত সরকারি ৭ কলেজ (২ লক্ষের অধিক শিক্ষার্থী) চালানোর মতো প্রশাসনিক ও আধুনিক কারিগরি দক্ষতা ও লোকবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই। আন্তরিকও নয়। তারা এখনো পুরোনো পদ্ধতির ওপর নির্ভরশীল।

তিনি লিখেন, এক্ষেত্রে ৭ কলেজ অনেক এগিয়ে। তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও বেশ এগিয়ে। আমি ঢাকার দুটো ঐতিহ্যবাহী কলেজে বেশি চাকরি করেছি, ঢাকা কলেজ (১৮৪১) আর কবি নজরুল সরকারি কলেজ (১৮৭৪)। এ দুটো কলেজের অধ্যক্ষ ছিলাম। তাই এ দুটো কলেজের কথাই বলি- অনলাইন ভর্তি, ক্লাস, পরীক্ষা, কার্যক্রম, আর্থিক লেনদেন, ডাটাবেজ ও অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার ফলাফল নির্ণয় অস্বাভাবিক অগ্রগতি করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগের ৩০-৫০ জন ছাত্রের ফলাফল এখনো ম্যানুয়ালি তৈরি করা হয়। তাও তৈরিতে কত সময় নেয়, সবাই জানি। মাঝে মাঝে পত্রিকার শিরোনামও হয়। তিনি আরও লিখেন, সেখানে ৭ কলেজের কোনো কোনো বর্ষে শিক্ষার্থী ৩ হাজার হতে ৫ হাজার। এর ফলাফল এখনো ম্যানুয়ালি ২/৩ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তৈরি করেন। আর্থিক লাভ অনেক বেশি হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগন এটি হাতছাড়া করতে রাজী নন। কমিটির ভেতর নিজেদের সহকর্মীদের সঙ্গেও শেয়ার করতে রাজী নন। ফলে ফলাফল তৈরিতে কয়েক মাস লেগে যায়। কলেজকে দায়িত্ব দিলে এটি ৫/৭ দিনে তৈরি সম্ভব। শিক্ষা বোর্ড ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীর ফলাফল খুব দ্রুত তৈরি করে। আমি ৭ কলেজের সমন্বয়ক ছিলাম। আমরা পরীক্ষার খাতা OMR করার চাপ দিলাম, যাতে দ্রুত ফল প্রকাশ হয়। বিজ্ঞান অনুষদের ডীন (সাবেক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি) অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ দায়িত্ব পান। ৬ বছর আগে দ্রুত OMR এর কয়েক কোটি টাকার খাতা কিনে ৭ কলেজের গোডাউনে রক্ষিত। বাস্তবায়ন হয় নি। সে খাতার বস্তা আজ পর্যন্ত কেউ খুলেও দেখেনি। নিশ্চয়ই উই পোকার খাদ্য হয়েছে। সব চলছে পুরোনো নিয়মে। অনেকের বিশাল আর্থিক সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবার ভয়ে এটি বাস্তবায়ন হলো না।

সেলিম উল্লাহ লিখেন, আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষক ৭ কলেজের এসব বিশাল অংকের আার্থিক সুবিধা পান না, তাদের কাজই হলো ৭ কলেজের বিরোধিতা করা, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উসকে দিতে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়া কয়েকজনের অভ্যাসে দাঁড়িয়েছিল। যেন ৭ কলেজের জন্যই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যত অধপতন! বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষক কামরুল ইসলাম মামুন, তার কাজই ছিল নিয়মিত ফেসবুকে উস্কানিমূলক পোস্ট দেওয়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের উস্কানি দেওয়া। অথচ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আগে ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের সব সরকারি-বেসরকারি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ছিল।

সেলিম উল্লাহ তার শ্রদ্ধেয় বেশিরভাগ শিক্ষকের প্রতি সম্মান রেখেই বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ শতাধিক সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রোভিসি আর ট্রেজারার হওয়ার দৌঁড়ে থাকেন। সম্প্রতি শিক্ষা উপদেষ্টা এ নিয়ে কটাক্ষও করেছেন, যা মিডিয়ায় এসেছে। অন্যত্র বেশি বেতনে শিক্ষক হন। ৫/৭ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত এখনো অন্যরা সার্টিফিকেট বিক্রি করে চলে। সরকারের বিভিন্ন লাভজনক সংস্থায় পদায়ন পেতে অস্থির থাকেন। বিদেশে গেলে আসেন না, আসতে চান না, অতিরিক্ত অবস্থান করেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মচারি নিয়োগ, আর্থিক কেলেংকারী কত না পত্রিকার শিরোনাম হয়েছে। পিএসসি নিয়েও কেলেংকারী কম নেই।

তিনি আরও লিখেন, না জেনে কথায় কথায় অমুকের সিদ্ধান্তে এ পরিণতি বলি। ৮ বছর হলো, এই আট বছরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মন্জুরি কমিশনের দায়িত্ব প্রাপ্তগন পরিস্থিতি সমাধানে কী ভূমিকা পালন করেছেন, বুকে হাত দিয়ে বলুন। আর্থিক বরাদ্দ, আলাদা কর্মকর্তা ও কর্মচারি, আলাদা বিল্ডিং, ৭ কলেজের জন্য অতিরিক্ত একজন প্রোভিসি (প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব ছিলো), ৭ কলেজের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও পিএইচডি বৃত্তি প্রদান, ডাটাবেজ তৈরি, অটোমেটেড ফলাফল নির্ণয়, ল্যাবরেটরি সাপোর্ট, সিলেবাস নিয়মিত আপডেট, একই প্রশ্নে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের পরীক্ষা কোন কাজটি হয়েছে?

অবশেষে সেলিম উল্লাহ লিখেন, আমি ঢাকা কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ছিলাম, ৭ কলেজের সমন্বয়ক ছিলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য ছিলাম, শিক্ষা ক্যাডার সার্ভিস এসোসিয়েশন এর নির্বাচিত সভাপতি ও মহাসচিব ছিলাম। অনেক কিছু কাছে দেখে দেখেছি।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘শাহবাগে বড় স্ক্রিনে দেখানো হবে জুলাই গণহত্যার ডকুমেন্টারি’

নাসিরনগরে দুপক্ষের সংঘর্ষে কৃষক নিহত 

‘সবাইকে কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে এসে একযোগে কাজ করতে হবে’

ভারতের ৩৬ জায়গায় পাকিস্তানের ৪০০ হামলা

কর্ণফুলীর তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ সিএমপি কমিশনারের

অভিযোগও ভারতের, রায়ও ভারতের, হামলাও ভারতের : পাকিস্তান সেনার মুখপাত্র

আ.লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য সাগর গ্রেপ্তার

ঐক্যবদ্ধ শাহবাগ বিএনপির অপেক্ষায় : সারজিস

‘এই দেশ কোনো ব্যক্তি বা দলের নয়, জণগণের’

পাকিস্তানের পাশে দাঁড়াল আরও এক মুসলিম দেশ

১০

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির নেতৃত্বে শ্যামল-সিরাজ

১১

পাকিস্তানে থাকা রিশাদ-নাহিদের অবস্থা নিয়ে যা বলছে বিসিবি

১২

আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে উত্তাল শাহবাগ, বাড়ছে জনস্রোত

১৩

ভারতে এক রাতে ৫০০ ড্রোন হামলা

১৪

আপাতত এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত আইপিএল

১৫

কৃষকের ৬ বিঘা জমির ধান পুড়িয়ে দিল দুর্বৃত্তরা

১৬

ভারতের চীনা পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্র উদ্ধার, কতটা ভয়ানক?

১৭

ভাঙা হলো মাঠে দাঁড়িয়ে থাকা সেই সেতুটি

১৮

আপ বাংলাদেশে আহ্বায়ক কমিটিতে পদ পেলেন যারা

১৯

‘গণহত্যাকারীদের রাজনৈতিক অধিকার দিলে সমাজে হত্যাকে উৎসাহিত করা হবে’

২০
X