চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। এতে শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে যে শর্তগুলো দেওয়া হয়েছে তাতে অসামঞ্জস্যতা রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত শিক্ষাগত যোগ্যতার এমন অসামঞ্জস্যতা ও বৈষম্য দূর করতে ১৩ আগস্ট উপাচার্য বরাবর আবেদন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৬-০৭ সেশনের তিন শিক্ষার্থী।
গত ১০ আগস্ট প্রকাশিত ভর্তি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চবি এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য এসএসসি, এইচএসসি, অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ে ন্যূনতম নম্বর ও বিভাগের সঙ্গে যে জিপিএ নির্ধারণ করা হয়েছে, তা পুরোপুরি অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলে দাবি করছেন শিক্ষার্থীরা। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষে এমফিল বা পিএইচডি প্রোগ্রামে আবেদন করার ক্ষেত্রে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ ছাড়া বিজ্ঞপ্তিতে যে শর্ত দেওয়া হয়েছে তা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় যেমন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, চুয়েট, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় অনেক বেশি।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রার্থীদের ৩/৪ বছর মেয়াদী অনার্স ও ১ বছর মেয়াদি মাস্টার্স উভয় পরীক্ষায় কমপক্ষে ৫০ শতাংশ নম্বরসহ দ্বিতীয় শ্রেণি অথবা সিজিপিএ/জিপিএ ৪ স্কেলের মধ্যে কলা ও মানববিদ্যা এবং শিক্ষা অনুষদের জন্য ৩ দশমিক ২৫, সমাজ বিজ্ঞান ও আইন ও আইন অনুষদের জন্য ৩ দশমিক ৩৫, বিজ্ঞান, ব্যবসায়, জীব বিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মেরিন সায়েন্স অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদের জন্য ৩ দশমিক ৪০ থাকতে হবে।
এছাড়া, এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় কমপক্ষে ৫০% নম্বরসহ দ্বিতীয় বিভাগ অথবা জিপিএ-৫ স্কেলের মধ্যে ৩ দশমিক ৫০ থাকতে হবে। অথচ, বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রেডিং সিস্টেম অনুযায়ী ৫০ শতাংশ নম্বর সমান ২ দশমিক ৫০ গ্রেড পয়েন্ট।
এদিকে ২ জুন ২০০৯ সালের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত এক প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ নম্বর বা তদূর্ধ্ব সমান প্রথম শ্রেণি/বিভাগ, ৪৫ শতাংশ নম্বর বা ততোধিক কিন্তু ৬০ শতাংশের কম সমান দ্বিতীয় শ্রেণি/বিভাগ, এবং ৩৩ শতাংশ বা ততোধিক কিন্তু ৪৫ শতাংশের কম সমান তৃতীয় শ্রেণি/বিভাগ।
এছাড়া, ২০০৪ সাল ও তৎপরবর্তী সময়ের এসএসসি এবং এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের ক্ষেত্রে ৪ বা তদূর্ধ্ব সমান প্রথম বিভাগ, ৩ বা তদূর্ধ্ব কিন্তু ৪ এর কম সমান দ্বিতীয় বিভাগ এবং ১ বা তদূর্ধ্ব ৩ এর কম সমান তৃতীয় বিভাগ।
এখানে উল্লেখ্য যে, ২০০১, ২০০২ ও ২০০৩ সালের এসএসসি বা সমমান এবং ২০০৩ সালের এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষার ক্ষেত্রে ৩ দশমিক ৫০ বা তদূর্ধ্ব সমান প্রথম বিভাগ, ২ দশমিক ৫০ বা তদূর্ধ্ব কিন্তু ৩ দশমিক ৫০ এর কম সমান দ্বিতীয় বিভাগ এবং ১ বা তদূর্ধ্ব কিন্তু ২ দশমিক ৫০ এর কম সমান তৃতীয় বিভাগ করে সমন্বয় করা হয়েছে।
এছাড়া, ২ মার্চ ২০১০ তারিখে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত আরেক প্রজ্ঞাপনে এসএসসি ও সমমান এবং এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ক্ষেত্রে পরীক্ষা পাশের প্রচলিত জিপিএ এর সঙ্গে সনাতন পদ্ধতির বিভাগ সামঞ্জস্য করে বলা হয় যে, জিপিএ ৩ বা তদূর্ধ্ব সমান প্রথম বিভাগ, জিপিএ ২ থেকে ৩ এর চেয়ে কম সমান দ্বিতীয় বিভাগ এবং জিপিএ ১ থেকে ২ এর কম সমান তৃতীয় বিভাগ। বিগত বছরের ন্যায় এবারও এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তির শর্তের ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান গ্রেডিং সিস্টেমকেই উপেক্ষা করা হয়েছে।
বর্তমান সার্কুলারে শিক্ষাগত যোগ্যতার এমন অসামঞ্জস্যতা ও বৈষম্য দূর করতে চবির ২০০৬-০৭ সেশনের তিন শিক্ষার্থী গত ১৩ আগস্ট ২০২৫ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর আবেদন করেছে।
আবেদনপত্রে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৫-২০০৬ সেশন পর্যন্ত পুরোনো গ্রেডিংয়ে ৪ স্কেলে ৬০ শতাংশ নম্বর সমান জিপিএ ৩ দশমিক ৫০ এবং ৫০ শতাংশ নম্বর সমান জিপিএ ৩ ছিল। কিন্তু ২০০৬-২০০৭ সেশন থেকে অভিন্ন গ্রেডিং পদ্ধতিতে ৪ স্কেলে ৬০ শতাংশ নম্বর সমান ৩ এবং ৫৫ শতাংশ নম্বর সমান ২ দশমিক ৭৫ এবং ৫০ শতাংশ নম্বর সমান ২ দশমিক ৫০ গ্রেড নির্ধারণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ২০০৬-০৭ সেশন ও তার পরবর্তী ব্যাচগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেকেই এ গ্রেডিং বৈষম্যের কারণে সৃষ্ট উচ্চ শর্তের কারণে ইচ্ছা থাকার পরও এমফিল বা পিএইচডি প্রোগ্রামে আবেদন করতে পারছে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৬-০৭ সেশনের (৪২তম ব্যাচ) পদার্থবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী মুহাম্মদ মাহফুজুল আলম বলেন, চবি এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তির শর্তে এই অসামঞ্জস্যতার জন্য অনেকেই উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় আগ্রহ থাকা স্বত্বেও ৬০ শতাংশ অর্থাৎ ফার্স্ট ক্লাস পেয়েও এমফিল এবং পিএইচডি প্রোগ্রামে আবেদন করতে পারছে না।
নৃবিজ্ঞান বিভাগের একই সেশনের শিক্ষার্থী তাহিরা আলী মিশু বলেন, ভর্তির শর্তে যে অসামঞ্জস্যতা রয়েছে তা আসলে বর্তমান প্রশাসন ইচ্ছা করে করেনি। হয়তো বিশ্বদ্যিালয়ের উচ্চশিক্ষা বিভাগ শিক্ষামন্ত্রণালয়ের শর্ত ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান গ্রেডিং সিস্টেম সমন্বয় না করে পূর্বের যে শর্ত ছিল সেগুলোই কপি-পেস্ট করে সার্কুলারে দিচ্ছে। যার কারণে ভর্তির শর্তে এমন বৈষম্য দেখা দিয়েছে।
রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ৪২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. শরীফুজ্জামান বলেন, বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষা ও গবেষণা বান্ধব প্রশাসন। তারা কোনো প্রকার বৈষম্যকে প্রশ্রয় দেন না এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা পরিবেশকে বিশ্বমানে উন্নীত করতে দিন রাত কাজ করে যাচ্ছেন। আমাদের বিশ্বাস করি, বর্তমান প্রশাসন এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তির শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্তে অসামঞ্জস্যতা রয়েছে তা দূর করে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় আগ্রহীদের সুযোগ তৈরি করবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এটি যদি পরিবর্তন করতে হয় তাহলে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের মাধ্যমে করতে হবে। এছাড়া এ নিয়ে নতুন নীতিমালা করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক ড. মো. শামীম উদ্দিন খান কালবেলাকে বলেন, পিএইচডি ও এমফিল নিয়ে আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে নতুন নীতিমালা হবে। তবে এবছর আর এটি পরিবর্তনের সুযোগ নেই।
মন্তব্য করুন