

আন্দোলন চলাকালীন শনিবার (৮ নভেম্বর) পুলিশের হামলায় পাঁচজন শিক্ষক গ্রেপ্তার ও শতাধিক আহত হয়েছেন। এই অবস্থায় দাবি বাস্তবায়ন ও পুলিশের হামলার প্রতিবাদে রোববার (৯ নভেম্বর) থেকে শহীদ মিনারে অবস্থানের পাশাপাশি সারা দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি চলবে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের সমন্বয়ক শামসুদ্দিন মাসুদ।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ বর্বর হামলা চালিয়েছে এবং প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের সমন্বয়ক মো. মাহবুবুর রহমানসহ ৫ জনকে আটক করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি চলবে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচিও চলমান থাকবে।’
এর আগে আন্দোলনরত প্রাথমিক শিক্ষকদের শাহবাগ অভিমুখী পদযাত্রায় বাধা দেয় পুলিশ। এতে শিক্ষকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জলকামান, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। ৩ দফা দাবিতে আন্দোলন করছিলেন তারা।
শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর গণমাধ্যমকে বলেন, ‘শিক্ষকরা যমুনা অভিমুখে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ শাহবাগে ব্যারিকেড দেয়। তারা সেটা ভাঙার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুই-একজনকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষকদের একটি দল শাহবাগ এলাকায় পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে তাদের ছত্রভঙ্গ করা হয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এ-সংক্রান্ত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।
ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমানের সই করা ও বিবৃতিতে বলা হয়, বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলনরত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষকদের একটি দল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমবেত হয়েছিল। বিকেল আনুমানিক ৩টার দিকে আন্দোলনকারীদের কিছু সদস্য ‘কলম সমর্পণের’ নামে শাহবাগ থানার সামনে জড়ো হন।
বিবৃতিতে বলা হয়, আনুমানিক ৪টার সময় আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে একটি দল পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে শাহবাগ মোড় পার হয়ে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ তাদের বাধা দিলে আন্দোলনকারীরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন।
ডিএমপির তথ্যমতে, প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ও সংলগ্ন এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ, মিছিল, গণজমায়েত নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। আন্দোলনকারীরা এই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশি নির্দেশনা অমান্যকারী আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পরবর্তী সময়ে কয়েক রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান নিক্ষেপ করা হয়। এরপর পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে বর্ণিত এলাকায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্তৃক ঘোষিত নিষেধাজ্ঞা মেনে চলার জন্য সবাইকে পুনরায় অনুরোধ জানিয়েছে ডিএমপি।
মন্তব্য করুন