

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাঠামোয় বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন থেকে কমিশন পরিচালিত হবে পাঁচজন কমিশনারের মাধ্যমে, যেখানে এতদিন সদস্য সংখ্যা ছিল তিন। দুদক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এ বিষয়ে একটি অধ্যাদেশ জারি করেছে সরকার।
সরকারি সূত্র জানায়, মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ থেকে অধ্যাদেশটি জারি করা হয়। এর ফলে দুদক গঠনের ধরন, কমিশনার নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং কার্যপরিধিতে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সংশোধন কার্যকর হলো।
চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান কমিশনকে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে ৪৭ দফা সুপারিশসংবলিত একটি প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেন। সেই প্রতিবেদনের আলোকে নতুন এই অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে।
অধ্যাদেশ অনুযায়ী, এখন থেকে একজন নারী এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়ে দক্ষ ও অভিজ্ঞ একজন সদস্যসহ সর্বোচ্চ পাঁচজন কমিশনার নিয়ে দুদক কমিশন গঠিত হবে। এই পাঁচজনের মধ্য থেকে রাষ্ট্রপতি একজনকে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেবেন। একই সঙ্গে পরিচালক, মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রেও কিছু কাঠামোগত পরিবর্তন আনা হয়েছে।
নতুন অধ্যাদেশে ২০০৪ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ৫ নম্বর ধারা সংশোধন করে কমিশনার নিয়োগসংক্রান্ত বিধান হালনাগাদ করা হয়েছে। পাশাপাশি কমিশনার বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আগে যে ‘সার্চ কমিটি’ ছিল, তা পরিবর্তন করে ‘যাচাই-বাছাই কমিটি’ করা হয়েছে।
এই যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি থাকবেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন জ্যেষ্ঠ বিচারক। কমিটির অন্যান্য সদস্য হিসেবে থাকবেন—প্রধান বিচারপতির মনোনীত হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান এবং জাতীয় সংসদের স্পিকারের মনোনীত দুজন সংসদ সদস্য (একজন সরকার দলীয় ও একজন বিরোধী দলীয়)। তবে জাতীয় সংসদ ভেঙে গেলে সংসদ সদস্য ছাড়াই এই কমিটি গঠন করা যাবে বলে অধ্যাদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া দুদকের কার্যাবলিতেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রথমবারের মতো এনফোর্সমেন্ট ও গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়টি সরাসরি আইনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর পাশাপাশি মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধ অনুসন্ধান ও তদন্তে দুদকের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে।
সংশোধিত আইনের তপশিলে এখন শুধু ঘুষ ও দুর্নীতি নয়, বরং দলিল জালিয়াতি, প্রতারণা, মুদ্রা পাচার, চোরাচালান, শুল্ক ও করসংক্রান্ত অপরাধ, এমনকি পুঁজিবাজারে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য অপব্যবহার করে সুবিধা নেওয়ার মতো অপরাধও যুক্ত করা হয়েছে।
নতুন এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে দুদকের সাংগঠনিক শক্তি ও আইনি ক্ষমতা আরও বিস্তৃত হলো বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মন্তব্য করুন